Advertisement
E-Paper

গয়না চুরির হাতিয়ার এসএমএসে কারসাজি

এ যেন ‘ডবল জালিয়াতি’! প্রথমে প্রতারণা করে গয়না কেনা। তার পরে সেই গয়না বন্ধক রেখে টাকা তুলে নেওয়া। বৌবাজারের গয়নার দোকান থেকে এক মহিলা প্রতারককে গ্রেফতার করে এমনই ছকের কথা জানতে পেরেছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৭

এ যেন ‘ডবল জালিয়াতি’!

প্রথমে প্রতারণা করে গয়না কেনা। তার পরে সেই গয়না বন্ধক রেখে টাকা তুলে নেওয়া। বৌবাজারের গয়নার দোকান থেকে এক মহিলা প্রতারককে গ্রেফতার করে এমনই ছকের কথা জানতে পেরেছে পুলিশ।

গত নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করতেই দেশজুড়ে বেড়ে গিয়েছে অনলাইন লেনদেন। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অনলাইনে লেনদেনের বহর বাড়তেই জালিয়াতির নতুন পদ্ধতি আমদানি করেছিলেন ওই মহিলা। সেই কায়দায় শহরের নানা প্রান্ত থেকে গত দু’মাসে একাধিক নামী গয়না বিপণিগুলিতে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকার গয়না হাতিয়েছেন তিনি।

দিন কয়েক আগে ওই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে মুচিপাড়া থানার পুলিশ। ধৃতকে জেরা করতে গিয়েই এই সব তথ্য মিলেছে বলে জানায় পুলিশ। ধৃতের নাম মধুরিমা দাস। তাঁর বাড়ি ঢাকুরিয়ায়।

পুলিশ জানিয়েছে, বিয়ের জন্য গয়না কেনার নাম করে বৌবাজারের একটি দোকানে হাজির হয়েছিলেন মধুরিমা। প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকার গয়না কেনার পরে অনলাইনে টাকা মেটান বলে দাবি করেছিলেন ওই মহিলা। টাকা দেওয়ার প্রমাণ হিসেবে ব্যাঙ্কের একটি এসএমএস-ও দোকান মালিককে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে জানা যায়, এসএমএসটি ভুয়ো। গয়না নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন ওই মহিলা। পরে বৌবাজারের গয়না-পাড়া থেকে তাঁকে পাকড়াও করেন মুচিপাড়া থানার অফিসারেরা।

কী ভাবে এই জালিয়াতি করতেন মধুরিমা?

গোয়েন্দাদের দাবি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আত্মীয়ের বিয়ের জন্য সোনার গহনা কেনার কথা বলতেন তিনি। এর পরেই দাবি করতেন নোট বাতিলের জন্য নগদ টাকা বেশি তোলা যাবে না। তাই গয়না কেনার জন্য অনলাইন নেট ব্যাঙ্কিংয়ের কথা বলতেন দোকানের মালিকদের। তাঁরা রাজি হতেই গয়না কেনার পরে দোকানে বসেই নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে নেটব্যাঙ্কিং মারফত পাঁচ-দশ টাকা দোকানের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতেন মধুরিমা। সেই মতো তার কাঁছে ব্যাঙ্ক একটি এসএমএস আসত। দোকানের মালিকের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে ওই মেসেজটিকে এডিট করে তাতে গয়নার দাম বসিয়ে নিতেন তিনি। পরে তার স্ক্রিন শট তুলে তা মালিকের মোবাইল পাঠিয়ে দাবি করতেন পুরো দাম মেটানো হয়ে গিয়েছে। গোয়েন্দারা জানান, ওই মহিলা ব্যাঙ্কের এসএমএস দেখালেও দোকানদারের অ্যাকাউন্টে টাকা ট্র্যান্সফার না হওয়ার কারণে কোনও মেসেজ আসত না তাঁর মোবাইলে। তা নিয়ে কথা উঠলেই নেটওযার্কের সমস্যা রয়েছে বলে দাবি করতেন ওই প্রতারক। সঙ্গে আশ্বাস দিতেন, যে কোনও সময়েই মোবাইলে ওই এসএমএস চলে আসবে। এর পরে দোকান থেকে বেরিয়ে ওই গয়না একটি আর্থিক সংস্থায় বন্ধক রেখে টাকা তুলে নিতেন তিনি।

‘‘নোট বাতিলের পরে এত দ্রুত যে এমন জালিয়াতির ছক কষা যায় তা ভাবতেই পারিনি। এর জন্য ক্ষুরধার বুদ্ধি থাকা প্রয়োজন,’’ মন্তব্য এক পুলিশকর্তার। তিনি জানান, মধুরিমা উচ্চশিক্ষিত। বেসরকারি কলেজ থেকে জনসংযোগ বিষয়ে ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। স্বামী নদিয়াতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। তদন্তকারীদের কাছে ধৃত তরুণীর দাবি, তিনি একটি ব্যবসা শুরু করলেও তা লাভের মুখ না দেখায় বিপুল দেনার মুখে পড়তে হয়। তা থেকে বাঁচতে গত নভেম্বরে নোট বাতিলের পর থেকেই ওই প্রতারণার পথ বেছে নেন তিনি। যদিও এ কথা পুলিশ পুরোপুরি বিশ্বাস করছে না। এই চক্রে আরও কেউ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানায়, ওই মহিলার বিরুদ্ধে গড়িয়াহাট, ভবানীপুর, যাদবপুর থানাতেও একই কায়দায় জালিয়াতি করার অভিযোগ দায়ের হয়েছে গত এক সপ্তাহে। মধুরিমা আপাতত মুচিপাড়া থানার হাজতে রয়েছেন। এর পরে বাকি থানাগুলিও তদন্তের জন্য তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেবে।

Jewellery Miscreant
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy