Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

টর্চের আলোয় পথ দেখিয়ে অবাধে ‘লুট’ জাতীয় সড়কে

ঘটনাস্থল ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। অভিযোগ, ট্রাক ও ট্যাঙ্কার চালকদের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে এমন একাধিক পাচার-চক্র। হাওড়ার ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের সাঁকরাইল ও সলপ সেতুর মধ্যে গজিয়ে ওঠা এই চক্রগুলির কথা স্বীকার করেছে পুলিশও।

গায়েব: এমনই সব মালবোঝাই ট্রাক থেকে অবাধে চলছে চুরি। কোনা এক্সপ্রেসওয়ের কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

গায়েব: এমনই সব মালবোঝাই ট্রাক থেকে অবাধে চলছে চুরি। কোনা এক্সপ্রেসওয়ের কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৮
Share: Save:

সার্ভিস রোডের পাশে একটি টুলের উপরে বসে এক ব্যক্তি। ডান হাতে ধরা টর্চ এক বার জ্বালাচ্ছেন, এক বার নেভাচ্ছেন। টর্চের আলো আসলে সঙ্কেত। ওই ব্যক্তির লক্ষ্য মূলত সড়কপথে যাওয়া মালবোঝাই বড় লরি ও ট্রাককে সতর্ক করা। যাঁরা সঙ্কেতের ভাষা বোঝেন, তাঁরা ট্রাকের গতি কমিয়ে ঢুকে পড়েন নির্দিষ্ট ‘ঠেক’-এ। এর পরে রাতের অন্ধকারে শুরু হয় ‘অপারেশন’। ট্রাক থেকে নামিয়ে নেওয়া হয় চাল, চিনি, ভোজ্য তেল থেকে শুরু করে লোহা, নামী কোম্পানির রড, পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন। বাদ যায় না ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই)-র খাদ্য সামগ্রীও। মালপত্র বার করে নেওয়ার পরে ফাঁকা বস্তায় তুলে দেওয়া হয় ইট, কখনও বা বালি। কোথাও তেলের বদলে পুরে দেওয়া হয় জল। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত এ ভাবেই চলে একের পর ট্রাক ও ট্যাঙ্কার থেকে মাল পাচার।

ঘটনাস্থল ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। অভিযোগ, ট্রাক ও ট্যাঙ্কার চালকদের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে এমন একাধিক পাচার-চক্র। হাওড়ার ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের সাঁকরাইল ও সলপ সেতুর মধ্যে গজিয়ে ওঠা এই চক্রগুলির কথা স্বীকার করেছে পুলিশও। তাদের দাবি, ট্রাকচালকদের সঙ্গে সমঝোতায় এই চক্র কাজ করছে। মাঝে মাঝে ঠেকে হানা দিয়ে মালপত্র উদ্ধার করার পরে কিছু দিন বন্ধ থাকছে। তার পরে ফের অন্যত্র গজিয়ে উঠছে। কিন্তু সম্প্রতি এফসিআই-এর খাদ্য সামগ্রী পাচারের অভিযোগ পাওয়ার পরে নড়ে বসেছে পুলিশ।

হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড ট্রেনিং) শান্তি সেন বলেন, ‘‘মাঝরাস্তায় যে ভাবে এফসিআই-এর খাদ্য সামগ্রী লুট হচ্ছে, তা কিছুতেই মানা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা, খবর পেয়ে যখন আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি তখন কী ভাবে যেন আমাদের আসার খবর পেয়ে গাড়িগুলি বেপাত্তা হয়ে যাচ্ছে। ঠেক-মালিকেরও খোঁজ মিলছে না। তবে আমরা এই লুট বন্ধ করবই।’’

এমন কতগুলি চক্র জাতীয় সড়কে গজিয়ে উঠেছে?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সব থেকে বড় চক্রটি চলছে চণ্ডীগড় হোটেলের উল্টো দিকে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে। এ ছাড়াও একই ধরনের ঠেক চলছে ডোমজুড় থানা এলাকার সলপ চৌরাস্তার কাছে, রেললাইনের ধারে উড়ালপুলের নীচে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি রাতে ওই ঠেকে লোহা বোঝাই ট্রাক দাঁড়ানোর পরে মোটা দড়ির এক প্রান্ত বাঁধা হয় লোহার বিমের সঙ্গে, অন্য প্রান্ত সেতুর পিলারে। তার পরে ট্রাক বা লরিগুলিকে এগিয়ে নিয়ে গেলে দড়ির টানে অনায়াসে বেরিয়ে আসে লোহার বিম।

স্থানীয় দোকানদার সঞ্জয় সাউ বলেন, ‘‘সেতুর পিলারে দড়ি বেঁধে যে ভাবে রোজ লোহা চুরি হয়, তাতে যে কোনও দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা বহু বার পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি।’’ বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, স্থানীয় থানা এবং রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের সঙ্গে মাসোহারার ব্যবস্থা থাকায় এই ঠেকগুলি দিব্যি চলছে। পুলিশ চাইলে ঠেক বন্ধ করতে কয়েক মিনিট লাগবে।

কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ না চাওয়ায় নিত্য দিন এই লুট চলে। কয়েক দিন অন্তর নতুন ঠেক গজিয়ে ওঠে কোনা পাকুড়িয়ায় একটি কারখানার পাশে অথবা কোনা এক্সপ্রেসওয়ের জগাছা থানা এলাকায় একটি পেট্রোল পাম্পের আশপাশে। সন্ধ্যা নামলে রাস্তার পাশে ট্রাক-লরির লাইন পড়লেও পুলিশ নির্বিকার থাকে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘এগুলিকে কাটা মাল বলে। গ্রামীণ এলাকায় এমন ঘটে। তবে শহরাঞ্চলে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের মতো এলাকাতেও এমন অভিযোগ ওঠায় আমরা ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Loot Truck National Highway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE