Advertisement
০৪ মে ২০২৪

‘ছেলে’ ফিরল, ফোন কমেনি

‘খোকাবাবু’ ফিরে এসেছেন। কিন্তু এখনও উদ্ধারকারীদের ফোনে নাজেহাল তাঁর পরিবার!গত ১১ ফেব্রুয়ারি মল্লিকবাজারের বাসিন্দা বাবু হেলার পোষা কুকুর স্যান্ডি নিখোঁজ হয়ে যায়। প্রিয় পোষ্যকে ফিরে পেতে থানায় ডায়েরি করেছিলেন, কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন তিনি।

আদর: মায়ের সঙ্গে স্যান্ডি। নিজস্ব চিত্র

আদর: মায়ের সঙ্গে স্যান্ডি। নিজস্ব চিত্র

দেশকল্যাণ চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০১:২৯
Share: Save:

‘খোকাবাবু’ ফিরে এসেছেন। কিন্তু এখনও উদ্ধারকারীদের ফোনে নাজেহাল তাঁর পরিবার!

গত ১১ ফেব্রুয়ারি মল্লিকবাজারের বাসিন্দা বাবু হেলার পোষা কুকুর স্যান্ডি নিখোঁজ হয়ে যায়। প্রিয় পোষ্যকে ফিরে পেতে থানায় ডায়েরি করেছিলেন, কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন তিনি। ৫ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে লিফলেটও ছাপান! পার্ক স্ট্রিট, হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণির দেওয়ালে, ল্যাম্পপোস্টে তা সাঁটিয়েছিলেন বাবু ও তাঁর ছেলে রিকি। বিজ্ঞাপন থেকেই শুরু হয় ফোনের ‘যন্ত্রণা’। প্রত্যেক ফোনেই দাবি করা হচ্ছিল, তাঁরা স্যান্ডিকে খুঁজে পেয়েছেন। ‘মুক্তিপণ’ বাবদ কেউ চাইছিলেন ১০ হাজার, কেউ বিশ কেউ বা তিরিশ হাজার!

পেশায় পুরসভার সাফাইকর্মী বাবু বলছেন, ‘‘স্যান্ডিকে ফিরে পেতে দশ, বিশ, তিরিশ হাজার টাকা নিয়েই ছুটেছি। কখনও হাওড়া, কখনও মুর্শিদাবাদ।’’ হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। ‘‘সব ফোনই মস্করা। গিয়ে দেখি ঠিকানা ভুয়ো,’’ বলেন বাবু।

২০০৭-এ তিন হাজার টাকা দিয়ে ছোট্ট অ্যালসেশিয়ান কিনেছিলেন বাবু। নাম রেখেছিলেন, স্যান্ডি। বড় হতেই বুঝতে পারেন, স্যান্ডি খাঁটি অ্যালসেশিয়ান নয়। দেশি ও অ্যালসেশিয়ানের মিশ্রণ। চেহারায় অ্যালসেশিয়ানের আদল। ‘‘হোক না দোঁআশলা, তবু ছোট থেকে বড় করেছি। ও তো পরিবারেরই এক জন,’’ বলেন রিকি। বাবু, তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে, পুত্রবধূর পাঁচ জনের সংসারে স্যান্ডি ষষ্ঠ সদস্য। আশ্রিত হিসেবে রয়েছে মল্লিকবাজারের খান কতক নেড়িও। এ হেন পোষ্য নিখোঁজ হওয়ার পরে আর মাথা ঠিক ছিল না বাবুদের।

বাবু জানান, বারবার ঠকে যাওয়ার পরেও ফোনের খবরে বিশ্বাস হারাননি। তেমনই এক ফোনের সূত্র ধরে গিয়েছিলেন ভাটপাড়ায়। ফোনে খবর মিলেছিল, এলাকার এক বাড়িতে আচমকাই বড়সড় একটি কুকুর নিয়ে এসেছে। ভাটপাড়ায় পৌঁছে দেখেন, স্যান্ডি বসে রয়েছে! ‘‘আমার গলা পেয়েই ছুটে এসে গায়ে উঠে পড়েছিল। উফ! সেকি আহ্লাদ’’, বলছেন বাবু।

আরও পড়ুন: বাড়ি ভাঙছে বড়বাজারে, অগ্নিযুদ্ধ জারি

স্যান্ডি ভাটপাড়ায় পৌঁছল কী ভাবে? বাবু জানান, বাড়ির পাশে বিয়ের বাজি ফাটছিল। শব্দে আতঙ্কিত, অতিষ্ঠ স্যান্ডি বাড়ি ছেড়ে পালায়। ভাটপাড়ার ওই বাড়ির লোকেরা জানান, হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিটে কুকুরটিকে দেখেন তাঁরা। ডাকতেই স্যান্ডি গাড়িতে উঠে পড়ে। ওই পরিবারের লোকেরা স্যান্ডিকে ‘অনাথ’ ভেবে বাড়ি নিয়ে যান। বাবুর কথা শুনে অবশ্য তর্ক জোড়েননি তাঁরা। স্যান্ডিকে ফিরিয়ে দেন। তা হলে আর সমস্যা কোথায়?

বাবু বলছেন, কোলের ‘ছেলে’ তো এ বার ঘরে ফিরে এসেছে। কিন্তু মস্করা এখনও পিছু ছাড়েনি। প্রায় নিত্যদিনই ফোন আসছে। এখনও লোকে ফোন করে বলছে, স্যান্ডি তাঁদের জিম্মায়। টাকা পেলেই কুকুর ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বাবু বলছেন, ‘‘লিফলেট তো রয়ে গিয়েছে। তাই দেখেই লোকে ফোন করছে।’’

ঘরের কুকুর ঘরে রেখে বাবা-ছেলে বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। খুঁজে খুঁজে ছিঁড়ে চলেছেন ‘নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণার’ পোস্টার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dog Missing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE