Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গি কেড়েছে ছেলের প্রাণ, শ্রাদ্ধে বিলি মশারি

শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার বিদ্যাসাগর কলোনির বাসিন্দা সুকুমার মজুমদার প্রায় শ’তিনেক গরিব পরিবারের হাতে মশারি তুলে দিলেন।

শুভজিৎ মজুমদার

শুভজিৎ মজুমদার

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৯
Share: Save:

একমাত্র ছেলে মারা গিয়েছে ১২ দিন আগে। নিয়ম মেনে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করার চেনা ছক ভেঙে অন্য পথে হাঁটলেন প্রৌঢ় দম্পতি।

শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার বিদ্যাসাগর কলোনির বাসিন্দা সুকুমার মজুমদার প্রায় শ’তিনেক গরিব পরিবারের হাতে মশারি তুলে দিলেন। চলতি মাসের ১২ তারিখে, সুকুমারবাবুর ছেলে শুভজিৎ মজুমদার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেটে ‘এনএস ১ পজিটিভ’ উল্লেখ রয়েছে।

শুভজিতের পরিবারের দাবি, ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন তিনি। ২৭ অক্টোবর জ্বর হয় সেরিব্রাল পলসি আক্রান্ত শুভজিতের। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো, পরের দিন রক্ত পরীক্ষা করে রিপোর্টে মেলে প্লেটলেটের সংখ্যা নেমে গিয়েছে ৮০ হাজারে। প্লেটলেটে নজরদারি রাখলেও ৩০ অক্টোবর জ্বরের সঙ্গে শুরু হয় বমি। ৩১ অক্টোবর তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। প্লেটলেট ও ফ্লুইড দেওয়া শুরু হয়। রক্তক্ষরণও শুরু হয় তার পর। দিন বারো লড়াই চলার পরে মারা যান তিনি।

পরিবারের দাবি, ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হওয়ার কথা লেখে হাসপাতাল। হাওড়া জেলা আদালতের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক সুকুমারবাবু মামলা করার কথা বলার পরেই মৃত্যুর কারণ ‘এনএস ১ পজিটিভ’ লেখা হয় ডেথ সার্টিফিকেটে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বাঘাযতীন, বিদ্যাসাগর কলোনির বিস্তীর্ণ এলাকায় মশার দাপটে নাজেহাল বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, কলকাতা পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ড ও তার আশপাশে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত অনেকে। বিশেষত বস্তি এলাকার ঘিঞ্জি পরিবেশে জল জমে। সেখানে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, জ্বরে কাবু হয়েছেন বহু মানুষ। অনেকের মশারি কেনার সামর্থ্য নেই। তাই তাঁদের হাতে মশারি তুলে দেওয়ার আয়োজন করেছে শুভজিতের পরিবার। তাঁদের কাজে সহযোগিতা করেন স্থানীয় কয়েকটি ক্লাব এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সুকুমারবাবু জানান, স্থানীয়দের একাংশ সচেতনতার অভাবে মশারি ব্যবহার করেন না। অনেকের সামর্থ্যও নেই। তাঁদের মশারি দেওয়ায় সকলেই বুঝতে পারবেন মশারি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা। সুকুমারবাবুর কথায়, ‘‘এতে কোনও রাজনীতি নেই। শুভজিৎ মারা যাওয়ার পরে আমরা ঠিক করি সচেতনতা বাড়াতে মশারি দান করব। চিরাচরিত অনুষ্ঠানের তুলনায় গরিব মানুষের প্রয়োজন এমন জিনিস দেওয়া বেশি জরুরি মনে হয়েছে, তাই এই আয়োজন।’’

যদিও বাসিন্দাদের একাংশ মনে করছেন, যাঁদের মশারি কেনার সামর্থ্য নেই, তাঁদের কাছে কী ভাবে মশারি পৌঁছে দেওয়া যায়, সে নিয়ে তৎপর হওয়া উচিত ছিল পুরসভারই। কিন্তু পুরসভা প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করছে না বলে অভিযোগ। সুকুমারবাবুর এই কাজে অনেকের উপকার হবে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা।

এলাকার কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, মশারি বিলি করা পুরসভার কাজ নয়। এ ভাবে ডেঙ্গি রোধ করা যায় না। আমাদের কর্মী এবং যন্ত্রের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও এলাকায় মশার তেল ছড়ানো হয়েছে। ধোঁয়াও দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE