মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে ইতিমধ্যেই পথে নেমেছে কলকাতা পুরসভা। রাজ্য প্রশাসন পুরসভাগুলির সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুত প্রতিরোধক পদক্ষেপ করতে নির্দেশও দিয়েছে। তবু ঘুম ভাঙছে না বিধাননগর পুরসভার। এলাকায় ঠিক মতো মশার তেল ছড়ানো, ফগিং-এর কাজ হচ্ছে না বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের। বছরের শুরুতেই সল্টলেকের দু’টি খালপাড় সংলগ্ন ব্লকগুলিতে মশার দাপট দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত স্থানীয়েরা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত বছর কয়েক হাজার লোক ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। তাতেও শিক্ষা নেয়নি পুরসভা। পরিকাঠামো সংস্কার দূর অস্ত্, প্রাথমিক কাজটুকুরও দেখা মিলছে না। পুরসভা অবশ্য মশার তেল না ছড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুর প্রশাসন ঘোষণা করেছিল ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই সচেতনতার প্রচার, বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ, মশার তেল ছড়ানো, ঝোপ-জঙ্গল সাফ করার কাজ শুরু করবে। কিন্তু চলতি মাসের প্রায় দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও পুরসভার তরফে তেমন প্রচেষ্টা দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ।
বাসিন্দাদের কথায়, পুরসভা মুখে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। অভিযোগ, সল্টলেকের দু’দিকে কেষ্টপুর খাল ও ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলে জল রুদ্ধ হয়ে থাকে। খালের পলি তুলে জলের প্রবাহ না বাড়ালে মশার প্রকোপ কমবে না। এই সমস্যা সম্পর্কে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে পুর প্রশাসন ওয়াকিবহাল। অথচ খাল নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনা বা কোনও কাজ হয় না বলে দাবি স্থানীয়দের। প্রকোপ বাড়লে মাঝে মাঝে নৌকা নামিয়ে মশা নিধনের কাজ হয়। কিন্তু তাতে তেমন কোনও লাভ হয় না। কোথাও কোথাও খালের পাড়ে ঝুপড়ি তৈরি হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, ঝুপড়ি এলাকাগুলিকেও শৃঙ্খলায় আনতে ব্যর্থ পুর প্রশাসন।
বি এ ব্লকের বাসিন্দা অমিতাভ মজুমদার বলেন, ‘‘মশার জ্বালায় সন্ধ্যার পর থেকে জানালা দরজা বন্ধ রাখতে হয়। গত বার এতগুলি প্রাণ চলে গেল। তবু হুঁশ ফেরেনি পুরসভার।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই সমস্যা পুরনো। মেয়র ভাঙড়ে ব্যস্ত থাকতে পারেন। কিন্তু অন্যরা কী করছেন? আগে থেকে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না?
স্থানীয়দের অভিযোগের সদুত্তর মেলেনি। সূত্রের খবর, সম্প্রতি পুরসভার বৈঠকেও এই নিয়ে সরব হন কাউন্সিলরদের একাংশ। তাঁদের কথায়, সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলে খাল দু’টির সংস্কার ও জলপ্রবাহ বাড়ানো প্রয়োজন। তাতে মশার প্রকোপ অনেকাংশে ঠেকানো যাবে।
কী বলছেন পুরকর্তারা? মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘সাবেক পরিকাঠামো সংস্কারের কাজ চলছে। রাজ্য সরকার সাধ্য মতো সহযোগিতা করছে। তবে খালে বছরভর জলের প্রবাহ না থাকায় মুশকিল হচ্ছে। এ নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুত সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।’’
মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘কাজ শুরু না হওয়ার অভিযোগ সর্বতোভাবে সত্য নয়। তবে খালে জল রুদ্ধ হওয়ায় মশার প্রকোপ বেড়েছে।’’ তিনি আরও জানান, খালে রোয়িং বোট চালানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য একটি করে ফগিং মেশিন কেনা হয়েছে। সেগুলি দ্রুত কার্যকরী করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও নিবিড়ভাবে মশার তেল ছড়াতেও বলা হয়েছে। প্রণয়বাবুর দাবি, এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা খানিকটা কমানো সম্ভব হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy