Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পার্ক নিয়ে ‘বাড়াবাড়ি’ উৎসাহে এ বার রাশ টানতে চায় পুরসভা

সুসজ্জিত: বেহালার গোপাল কানন পার্ক। ছবি: অরুণ লোধ

সুসজ্জিত: বেহালার গোপাল কানন পার্ক। ছবি: অরুণ লোধ

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২৪
Share: Save:

রাস্তা ভাঙা। জল সরবরাহ নিয়ে হাজারো অভিযোগ। জঞ্জালের স্তূপ যত্রতত্র। আলো জ্বলে না বহু রাস্তায়। অথচ তেমন বহু এলাকাতেই গজিয়ে উঠেছে ঝাঁ চকচকে পার্ক। যে যে কাজ পুরসভার প্রাথমিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, তা না করে যেখানে-সেখানে পার্ক তৈরি কেন? এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। এ বার কাউন্সিলরদের উদ্যান-বিলাসে রাশ টানার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা।

সম্প্রতি এক নির্দেশিকা জারি করে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বরো অফিস থেকে আর পার্ক তৈরির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। নতুন পার্ক তৈরির যাবতীয় তথ্য আগে কেন্দ্রীয় পুর ভবনে জানাতে হবে। সেখানে থেকে ছাড়পত্র পেলে তবেই এ ব্যাপারে এগোনো যাবে। তবে এ নিয়ম শুধুমাত্র সংযুক্ত এলাকার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। স্বাভাবিক ভাবেই নতুন নির্দেশিকায় আপত্তি জানিয়েছেন কাউন্সিলরদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এ তো পার্ক নিয়ে ‘আমরা-ওরা’ হয়ে গেল! শুধুমাত্র সংযুক্ত এলাকা অর্থাৎ ১১-১৬ নম্বর বরোর ক্ষেত্রে এ নিয়ম কেন?

পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, পার্ক নিয়ে কাউন্সিলরদের একাংশের উৎসাহকে সামলানো যাচ্ছে না। এলাকায় বহু প্রয়োজনীয় কাজ আটকে থাকছে। অথচ পার্কের পিছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। ফাঁকা জমি দেখলেই অনেক কাউন্সিলর আবেদন করছেন, এখানে পার্ক করে দিতে হবে। সেই মতো সংশ্লিষ্ট বরো অফিস পার্ক তৈরি করছে। পরে কখনও কখনও দেখা যাচ্ছে, যে জমিতে ওই পার্ক তৈরি হয়েছে তা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। এ সব নিয়ে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে পড়েছে কলকাতা পুরসভা। সংযুক্ত এলাকার ক্ষেত্রেই সমস্যাটা বেশি হয়েছে।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এখন থেকে সংযুক্ত এলাকায় নতুন পার্ক তৈরি করতে হলে বরোর এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্যান দফতরের ডিরেক্টর জেনারেলের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। কোথায় পার্ক তৈরি হবে, তার খরচই বা কত, সে সংক্রান্ত সব তথ্য জানাতে হবে। তার পরেই সেই সংক্রান্ত ফাইল তৈরি করা যাবে। পুর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এত দিন প্রস্তাবিত পার্কের ফাইল তৈরি করে তা শুধুমাত্র সই করানোর জন্য কেন্দ্রীয় পুরভবনে পাঠানো হত। এক পদস্থ পুরকর্তার কথায়, ‘‘এ বার ফাইল তৈরির আগেই সব জানাতে হবে। যদি কর্তৃপক্ষ মনে করেন, প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয় বা যেখানে পার্ক তৈরির কথা বলা হচ্ছে, তার প্রয়োজন নেই, তা হলে কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে তা বাতিল করে দেবেন।’’

পুরসভার তথ্য বলছে, সারা শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭০০টি পার্ক রয়েছে। শুধুমাত্র সংযুক্ত এলাকাতেই রয়েছে প্রায় চারশো পার্ক। সব থেকে বেশি পার্ক রয়েছে ১৩ ও ১৪ নম্বর বরোয়। ফাঁকা জায়গা দেখলেই সেখানে পার্ক গজিয়ে উঠেছে। তাতে অহেতুক টাকা যেমন খরচ হয়েছে, তেমনই অন্য পুর পরিষেবায় খামতি থেকে গিয়েছে। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘পুরসভা বা অন্য সরকারি সংস্থার জমির ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে অনেক জায়গায় পার্ক হয়েছে। তা নিয়ে আইনি জটিলতাও তৈরি হয়েছে। সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে কারণেই এই নতুন নিয়ম।’’

যদিও পুরো বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কাউন্সিলরদের একাংশ। বেহালার এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘অন্য কোনও জায়গায় জমি নিয়ে সমস্যা নেই। শুধুমাত্র সংযুক্ত এলাকাতেই সমস্যা! এ তো হাস্যকর!’’ ১৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘এই নিয়মে দীর্ঘসূত্রতা বাড়বে। স্থানীয় ভাবে হলে দ্রুত কাজ হত।’’ ১৬ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পার্ক তৈরির কাজ স্থানীয় ভাবে হওয়াই ভাল। নতুন নিয়ম পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন বলে মনে করছি।’’ তবে পার্কের ‘আবদার’ করলেই যে তা তৈরি হয়ে গিয়েছে তা-ও স্বীকার করেছেন কোনও কোনও কাউন্সিলর। ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সঞ্চিতা মিত্র বলেন, ‘‘যখনই বলেছি তখনই পার্ক তৈরি করে দিয়েছে পুরসভা। সব মিলিয়ে ১৭-১৮টি পার্ক রয়েছে শুধু আমার ওয়ার্ডেই। কিন্তু তার রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়েই তো এখন হিমশিম খাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Park Municipality Councillor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE