Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪
Lack Of Awareness

হাসপাতালের সামনেই মঞ্চ বেঁধে জলসা!

মধ্য কলকাতার এই হাসপাতালে মূলত মহিলাদের চিকিৎসা হয়। প্রতিদিন কয়েকশো রোগী আসেন। প্রসূতি মায়েদেরও সেখানে চিকিৎসা হয়। অনেককে হাসপাতালে ভর্তিও রাখা হয়।

An image of Music Program

যথেচ্ছাচার: লেডি ডাফরিন ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের সামনে তৈরি হওয়া মঞ্চে ডিজে বাজিয়ে চলছে জলসা। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

দেবস্মিতা ভট্টাচার্য ও চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:০৭
Share: Save:

হাসপাতালের প্রবেশদ্বার থেকে ৫০ ফুটের মধ্যেই কালীপুজোর মণ্ডপ। তার উল্টো দিকে বিশাল মঞ্চ বাঁধা। মঞ্চের পিছনে বিরাট এলইডি ডিসপ্লে বোর্ড। মঞ্চ ঘিরে আলোকসজ্জা, জলসার অন্যান্য সরঞ্জাম। লেডি ডাফরিন ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে, রাজা রামমোহন রায় সরণির উপরে একতা সঙ্ঘের কালীপুজো কমিটির ওই মঞ্চেই চলছে জলসার প্রস্তুতি।

মঙ্গলবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, রাতের জলসার প্রস্তুতি চলছে। মঞ্চে তোলা হচ্ছে বড় সাউন্ড বক্স। সামনে পুলিশি ব্যারিকেড। মঞ্চ সাজানোর কাজে ব্যস্ত এক জন বললেন, ‘‘আজই শেষ দিন। বাইরের শিল্পীরা গাইবেন। বিসর্জনের আগে এ বছরের মতো আজ শেষ বার একটু হুল্লোড় হবে।’’ ওই অস্থায়ী মঞ্চে শিল্পীদের এনে গত শনিবারও জলসা হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল সংলগ্ন চত্বরে জলসার আয়োজন কী ভাবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। সেখানে মাইক বাজিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত জলসায় পুলিশি অনুমতি কী ভাবে মিলছে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

মধ্য কলকাতার এই হাসপাতালে মূলত মহিলাদের চিকিৎসা হয়। প্রতিদিন কয়েকশো রোগী আসেন। প্রসূতি মায়েদেরও সেখানে চিকিৎসা হয়। অনেককে হাসপাতালে ভর্তিও রাখা হয়। স্থানীয়েরা জানান, শনিবারও ওই মঞ্চে প্রায় রাত ১টা পর্যন্ত চলে নাচ-গান। এর জন্য বাইরে থেকে বড় বড় সাউন্ড বক্স আনা হয়। পরদিন সকালে সব খুলে নেওয়া হয়। মঙ্গলবারও একই ভাবে সন্ধ্যা থেকে অনুষ্ঠান হয়েছে। পুলিশকেও সেখানে টহল দিতে দেখা গিয়েছে বলে স্থানীয়েরা জানান। এক স্থানীয়ের কথায়, ‘‘সন্ধ্যা থেকে প্রথমে অতিথিদের আনা হয়। পরে শুরু হয় গানবাজনা। প্রবল আওয়াজে দু’চোখের পাতা এক করা যায় না। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের যে কী অবস্থা হয়, কে জানে!’’ হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর আত্মীয়ের কথায়, ‘‘এ তো প্রায় হাসপাতালের উঠোন। এখানে মাইক, বক্স বাজে কী করে? কয়েক জনের আনন্দের জন্য হাসপাতালের রোগীদের যে কী অসুবিধা হচ্ছে, তা শুধু তাঁদের পরিবারই জানে।’’

হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিকও বললেন, ‘‘এই হাসপাতালে প্রসূতি ও সদ্যোজাতদের ভর্তি রাখা হয়। তীব্র আওয়াজে মাঝেমধ্যে তাঁরা কেঁপে ওঠেন। তাঁদের অসুবিধা হয় তো বটেই। কিন্তু কেউই অভিযোগ জানানোর সাহস দেখান না। হাসপাতালের বাইরে হওয়ায় সব জেনেও আমাদের কিছু করার থাকে না।’’ পুলিশ কী করে এই জলসার অনুমতি দেয়, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ওই পুজো কমিটির সম্পাদক সঞ্জীব দত্তের অবশ্য দাবি, ‘‘এই পুজো অনেক বছর ধরে চলছে। হাসপাতালে রোগীরা থাকেন বলে আওয়াজ কমিয়েই অনুষ্ঠান করা হয়। তাতে কারও সমস্যা হয়েছে, এমন অভিযোগ কেউ করেননি।’’ কিন্তু হাসপাতালের পাশে জলসার অনুমতি পুলিশ দিল কী ভাবে? লালবাজারের কর্তারা মন্তব্য করতে চাননি। তবে এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এমন হওয়ার কথা নয়। কী হয়েছিল, খতিয়ে দেখা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE