প্রবেশপথের টালি খুলে ঢোকানো হচ্ছে দমকলের গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যবস্থা সবই ছিল। হোসপাইপ থেকে শুরু করে জলাধার, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি— সমস্ত কিছু। কিন্তু কাজের সময়ে পুরো জলেই গেল যাবতীয় আয়োজন। এতটাই যে, শুক্রবার নব মহাকরণ থেকে আগুনের সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখে বেরিয়ে যাওয়ার পথে রাজ্যের প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর কথাতেও বেরিয়ে এল আফশোস, ‘‘এ রকম একটা সময়ে আমাদের যন্ত্রপাতি কেন কাজ করছে না, বুঝতে পারছি না।’’
সকাল ১০টা নাগাদ নব মহাকরণের সপ্তম তলে আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর যায় দমকলের কাছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ১০টা ৪০ মিনিটের মধ্যেই দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঢুকে গিয়েছিল ঘটনাস্থলে। কিন্তু পূর্ত দফতরের লোকেরা না-থাকায় দমকলের কর্তা থেকে কর্মীরা কেউই বুঝতে পারছিলেন না, কোথায় জেনারেটর, কী ভাবেই বা জলাধার থেকে জল তোলা হবে, তার পাম্পই বা কোথায়। দমকলের এক কর্মীর কথায়, ‘‘আমরা জানতাম, নব মহাকরণে আগুন রোখার যাবতীয় ব্যবস্থাই রয়েছে। কিন্তু কোথায় কী রয়েছে, সেটা তো আমাদের জানার কথা নয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে আমরা পূর্ত দফতরের কাউকেই পাচ্ছিলাম না, যিনি আমাদের সমস্ত কিছু দেখিয়ে দেবেন। শেষমেশ সব কিছু খুঁজে বার করে জলাধার থেকে জল তুলতে তুলতেই আমাদের অন্তত মিনিট চল্লিশেক সময় নষ্ট হয়েছে।’’
তার মধ্যেই গোলমাল শুরু হয় দমকলের পেল্লায় স্কাই-লিফ্টার কী ভাবে ঢুকবে, তা নিয়ে। সেটিকে ভিতরে ঢোকাতে গিয়ে গেটের ছাদে আটকে যায় গাড়ির মাথা। শেষ পর্যন্ত ঢোকার পথের টালি সরিয়ে, রাস্তা খানিকটা খুঁড়ে তবেই গাড়ি ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ সবের জেরে শেষমেশ পুরোদমে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতেই ১১টা বেজে যায়।
যা দেখেশুনে নব মহাকরণের কর্মীরাই বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস ঘটনাটা সাড়ে ১০টার মধ্যে হয়েছিল। ওই সময়ে বেশির ভাগ দফতরে ২০ শতাংশের বেশি উপস্থিতি থাকে না। যদি সাড়ে ১২টায় ওই আগুন লাগত, তা হলে কী যে হতো, বলা মুশকিল।’’
অথচ, পাশেই স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার সদর দফতরের পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। দমকল এবং পূর্ত দফতরের টানাপড়েনের মধ্যেই নিশ্চুপে আগুন নেভাতে ময়দানে নেমে পড়েন সেখানকার অগ্নি-সুরক্ষা ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর। সংস্থার চিফ ম্যানেজার অশোক ঘোষ জানান, তাঁদের আলাদা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দমকল অফিসার রয়েছেন। প্রতিটি শিফ্টে চার-পাঁচ জন দমকল অফিসার উপস্থিত থাকেন। নিজেদের অফিস ভবনের পাশের ভবনের একাংশও সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করেন তাঁরা। তাতেই এ দিন সকালে আটতলার দফতর থেকে গল গল করে কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখে সজাগ হন সংশ্লিষ্ট অফিসারেরা। কন্ট্রোলরুমে খবর গেলে তাঁরাই হোসপাইপ নিয়ে উঠে যান ছাদে। দক্ষিণ দিক থেকে জানলা তাক করে জল দিতে থাকেন।
অশোকবাবু বলেন, ‘‘ধোঁয়ার কথা শুনে আমি আগে অফিসারদের তৈরি হতে বলি। তবে, যখন শুনলাম আগুন দ্রুত ছড়াচ্ছে, তখন অপেক্ষা করিনি। সঙ্গে সঙ্গে জল ঢালা শুরু করে দেওয়া হয়।’’ এসবিআই কর্তৃপক্ষ প্রথম দিকে এ ভাবে ঝাঁপিয়ে না পড়লে আগুন যে আরও ভয়াবহ আকার নিত, তা মানছেন দমকলের কর্মীরা। অশোকবাবু জানিয়েছেন, পরপর আগুনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই তাঁরা ইতিমধ্যে আলাদা কন্ট্রোলরুম তৈরি করেছেন। রয়েছে একাধিক পাম্প। জলেরও সঙ্কট নেই। প্রয়োজনে পাশের সুইমিং পুল থেকে জল ব্যবহার করার ব্যবস্থাও রয়েছে তাঁদের।
শহরে পরপর অগ্নিকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়েছে এসবিআই সদর দফতর। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন যে তা নেয়নি, তার প্রমাণ এ দিনই মিলল হাতেনাতে। এসবিআই সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের অগস্ট মাসেও নব মহাকরণ ভবনের একতলায় আবাসন দফতরে আগুন লেগেছিল। সে বারও দমকল পৌঁছনোর আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ছুটে যান এসবিআইয়ের কর্মীরাই। অথচ তার পরেও চটজলদি ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হয়নি পূর্ত দফতর।
পূর্ত দফতর যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এক কর্তার দাবি, ‘‘প্রাথমিক ভাবে জড়তা থাকলেও পরে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথই কাজ করেছে।’’ একই বক্তব্য দমকলের ডিজি সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়েরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy