আলিপুরে ১০০ একর এলাকা জুড়ে আধুনিক মানের উপনগরী তৈরি করতে চায় সরকার। নাম দেওয়া হচ্ছে ‘আলিপুর উপনগরী (সাব সিটি) উন্নয়ন প্রকল্প’। কিন্তু সরকার নিজে তা করবে না। কোনও বেসরকারি সংস্থাকে জমি বিক্রি করে দেওয়া হবে। তারাই ওই প্রকল্প করবে। আর জমি বিক্রির কাজও সরকার নিজে করবে না। দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে কলকাতা পুরসভাকে। জমি বিক্রির জন্য নিলাম ডাকা থেকে শুরু করে প্রকল্প রূপায়ণের কাজ— সবই দেখবে পুর প্রশাসন। প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও এত বড় কাজের দায়িত্ব পুরসভার হাতে ছাড়া হচ্ছে কেন, তা নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে পুর মহলে। আর সব থেকে আতঙ্কে রয়েছেন সেই সব পুর অফিসার, ইঞ্জিনিয়ারেরা, যাঁদের উপরে কাজের ভার পড়তে চলেছে। সম্প্রতি পুর কমিশনার খলিল আহমেদের ঘরে এ বিষয়ে ডাকা বৈঠকে কথাকাটাকাটিও চলে পুরসভার পদস্থ কর্তাদের মধ্যে।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই উপনগরীর জন্য আলিপুরের প্রেসিডেন্সি জেল, আলিপুর জেল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাশাসকের অফিসের ভিতরের ফাঁকা জমি, আশপাশের কলোনি এবং ভবানী ভবনের পিছন দিকে পড়ে থাকা জমি প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজ্যেরই এক স্থপতি সেই কাজ করেছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, প্রায় ১০০ একর জমি রয়েছে। সেই জমিই বিক্রি করবে রাজ্য সরকার। এক আধিকারিক জানান, প্রাথমিক হিসেবে জানা গিয়েছে, ১০০ একর জমি বিক্রি করে আট হাজার কোটিরও বেশি টাকা আয় হবে সরকারের। জমি যাঁরা কিনবেন, তাঁরাই সেখানে এক উপনগরী গড়ে বিক্রি করতে পারবেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও হয়েছে। সেখানে মুখ্যসচিব-সহ রাজ্য সরকারের পদস্থ আধিকারিকেরা হাজির ছিলেন। মেয়র ও পুর কমিশনারকেও ডাকা হয়েছিল। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, এর পরেই গত ১৬ জানুয়ারি পুর ভবনে পুর কমিশনারের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়। নবান্ন কী চায়, তা নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে। পুরসভার বিল্ডিং, সিভিল, আইন এবং জমি সংক্রান্ত দফতরের পদস্থ আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারেরাও ছিলেন।
সেখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের এক কর্তা জানান, এ ধরনের কাজে তাঁদের অভিজ্ঞতা নেই। কিছু ভুলভাল হলে দায়ী থাকবেন তাঁরা। বৈঠকে বলা হয়, জমি বিক্রির ব্যাপারে সরকারের নিজস্ব অনেক দফতর রয়েছে, যারা অভিজ্ঞ। তাদের বাদ দিয়ে কেন পুরসভাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রতিবাদও জানানো হয়। তাতেও অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুরসভাকেই ওই কাজ করতে হবে।
গত ২০ জানুয়ারি পুরসভার পার্সোনেল দফতর বিল্ডিং, জল সরবরাহ, নিকাশি, আলো, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন, অর্থ-সহ আরও কয়েকটি দফতরের পদস্থ অফিসারদের নিয়ে ১০ জনের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ জারি করেছে। আর তা ঘিরেই চরম অসন্তোষ বাড়ছে পুর মহলে। তবে সরাসরি নবান্নের নির্দেশ হওয়ায় কেউ বেশি প্রতিবাদ করার সাহসও দেখাতে পারছেন না। বৃহস্পতিবারও এ নিয়ে সকাল থেকে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে পুরসভায়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রথমেই ‘ট্রাঞ্জাকশন অ্যাডভাইসর’ নিয়োগ করা হবে। সেই কাজ দ্রুত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রে এ দিন জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভাঁড়ারে টান পড়ায় দিন কয়েক আগে বাইপাসের ধারে নিজেদের একটি জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুর বোর্ড। পুর অফিসারদের বক্তব্য, এটা পুরসভার নিজস্ব জমি, তাই কিছুটা ঝুঁকি নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু আলিপুরের প্রকল্প পুরোটাই সরকারের। তাই চিন্তা বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy