Advertisement
১৬ মে ২০২৪
সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি

ডাক্তার নেই, সপ্তাহান্তে পড়ে থাকে রক্তের নমুনা

ডাক্তার সন্দেহ করছিলেন মেনিনজাইটিস। দু’টি হাসপাতাল ঘুরে রোগী পৌঁছলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা দরকার। সন্ধ্যার শিফ্‌টের ডাক্তার রোগীর শিরদাঁড়া থেকে ফ্লুইড (সেরিব্রো-স্পাইনাল ফ্লুইড) সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠালেন সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরিতে। কিন্তু সেখানে তখন কোনও ডাক্তারই নেই। নমুনা পড়ে রইল অবহেলায়।

সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির ডিউটির তালিকা। — নিজস্ব চিত্র

সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির ডিউটির তালিকা। — নিজস্ব চিত্র

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৭
Share: Save:

ডাক্তার সন্দেহ করছিলেন মেনিনজাইটিস। দু’টি হাসপাতাল ঘুরে রোগী পৌঁছলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা দরকার। সন্ধ্যার শিফ্‌টের ডাক্তার রোগীর শিরদাঁড়া থেকে ফ্লুইড (সেরিব্রো-স্পাইনাল ফ্লুইড) সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠালেন সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরিতে। কিন্তু সেখানে তখন কোনও ডাক্তারই নেই। নমুনা পড়ে রইল অবহেলায়। পরীক্ষা দূরে থাক, কেউ তা তুলে রাখার ব্যবস্থাও করলেন না। নমুনাটি নষ্ট হয়ে গেল।

যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতিতে রোগীর শরীর থেকে সংগ্রহ করা ওই নমুনা এ ভাবে হেলায় নষ্ট হওয়ায় ডাক্তারদের একটা অংশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন। তাতে অবশ্য পরিস্থিতি বদলায়নি। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন শুধু ওই নমুনাই নয়, মাঝেমধ্যেই একাধিক নমুনা সন্ধ্যা থেকে কার্যত পরীক্ষা না হয়ে পড়ে থাকে মেডিক্যাল কলেজের সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরিতে। নমুনা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে অহরহ। কারণ, রবিবার দুপুর ১টা থেকে থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত তিনটি শিফ্‌টে কোনও মেডিক্যাল অফিসার থাকেন না ল্যাবরেটরিতে। আবার সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত কারও শিফ্‌ট নেই। ওই সময়ে আপৎকালীন পরীক্ষা-নিরাক্ষার প্রয়োজন পড়লেও নমুনা ফেলে রাখতে হয় বলে অভিযোগ।

কর্তৃপক্ষের দাবি, লোকাভাবেই এই অব্যবস্থা। তিতিবিরক্ত অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের কটাক্ষ, ‘‘রোগীর যা হয় হোক, ওঁদের এখন পাঁচ দিনে সপ্তাহ!’’

একটা সময় ছিল, যখন বিকেল পাঁচটা বাজলেই সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিষেবার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যেত। সন্ধ্যার পরে ‘ইমার্জেন্সি’তে রোগী এলে বা ওয়ার্ডে আচমকা কোনও রোগীর অবস্থা খারাপ হলে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থাই ছিল না। এই ছবিটা বদলাতেই মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চালু হয় সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই পরিষেবা মেলার কথা। সেই পরিষেবাই এ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই।

এমন একটি জরুরি পরিষেবা সপ্তাহে দু’দিন সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকা কি বহু রোগীকেই আতান্তরে ফেলে দিচ্ছে না? সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ এই প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি। এক কর্তার কথায়, ‘‘রাতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিদের ডিউটি দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও মেডিক্যাল অফিসার থাকেন না। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঝামেলা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি আর বদলায় না। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার মরসুমে তো সমস্যা আরও বাড়ছে।’’

গত বেশ কিছু দিন ধরে সরকারি হাসপাতালে গিজগিজ করছে জ্বরের রোগী। কারও ডেঙ্গি, কারও ম্যালেরিয়া, কারও বা জ্বরের উৎসটাই ধরা পড়ছে না। ভিড় সামলাতে ডাক্তারেরা হিমশিম। ঘন ঘন রক্ত পরীক্ষার স্লিপ পৌঁছচ্ছে ল্যােব। এ ছাড়া, অন্যান্য রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো আছেই। স্বাস্থ্যকর্তারা মানছেন, সরকারি হাসপাতালে এখন আক্ষরিক অর্থেই জরুরি অবস্থা! সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ২৪ ঘণ্টাই পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিষেবার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এই ‘জরুরি অবস্থা’তেও মেডিক্যালের সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরিতে এমন হাল কেন? সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেডিক্যাল অফিসারের খুবই অভাব। অনেকে অবসর নিয়েছেন। বহু জনের বদলি হয়েছে। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের জন্য অনেককে তুলেও নেওয়া হয়েছে। তাই পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিদের দিয়ে কাজ চালাচ্ছি। ওঁদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া আছে।’’

যদিও স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘মেডিক্যাল অফিসার কম, সেটা আমরা জানি। কিন্তু এতটাই অভাব যে, ডাক্তারের অভাবে সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ফাঁকা পড়ে থাকছে, এটা আমাদের জানানোই হয়নি। অবিলম্বে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবেন তাঁরা? সরকারি হাসপাতালে আউটডোর খোলা থাকে দুপুর ২টো পর্যন্ত। কিন্তু মেডিক্যালের বায়োকেমিস্ট্রি বা প্যাথোলজিতে দুপুর ১টার পরে নমুনা সংগ্রহ হয় না। এমনকী শনিবার আউটডোর থেকে রক্তও নেওয়া হয় না। সুপার শিখাদেবীও মেনে নিয়েছেন ‘‘এটা অন্যায়।’’ কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতিটা এতটুকু বদলায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

medical college cerebrospinal fluid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE