ধর্মঘটের সকালে শহরের চিত্র। শ্যামবাজার মোড়ে চলছে ফাঁকা ট্রাম। বৃহস্পতিবার ছবি তুলেছেন স্বাতী চক্রবর্তী।
ধমর্ঘটের সুনসান চেহারা ঢুকে পড়ল তথ্যপ্রযুক্তি তালুকে। তবে অফিসের অন্দরে নয়, বাইরে এলাকায়।
গত বছর পাঁচেক ধরে যে কোনও ধমর্ঘটেই গমগম করেছে সেক্টর ফাইভ। বাম জমানা থেকে বতর্মান সরকারের আমল, তথ্যপ্রযুক্তি তালুককে ধর্মঘটের আওতার বাইরে রাখার নীতি মেনে প্রতি বারই অফিস খোলা, কর্মীদের স্বাভাবিক হাজিরার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খোলা থেকেছে দোকান-রেস্তোরাঁ। যানবাহনেও লোকজনের যাতায়াত ছিল যথেষ্টই। সেই কর্মব্যস্ত ছবিটাই পাল্টে গেল বৃহস্পতিবার। ফাঁকা পথঘাট, বন্ধ দোকানপাটে এ এক অচেনা শিল্পতালুক। বাকি গোটা শহরের মেজাজ বা চেহারার সঙ্গে কোথাও অমিল নেই। অফিসের ভিতরে না ঢুকলে কার্যত বোঝার উপায় ছিল না, শিল্পতালুক খোলা।
সরকারি আশ্বাস ছিল, সরকারি দফতরের মতো সচল থাকবে মহানগর। বাস্তবে অবশ্য সুনসান ডালহৌসি, ধর্মতলা, টালিগঞ্জ থেকে টালা, বড়বাজার থেকে বেহালা। বাস-ট্যাক্সি কম, বন্ধ বহু দোকানপাট। বড়বাজার-পোস্তা-মেছুয়ার মতো ব্যস্ত এলাকার অলিগলিতেও দাপিয়ে বেড়িয়েছে খুদেরা। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পাড়াতেও ছবিটা ছিল একই রকম।
নিউ মার্কেট, লিন্ডসে স্ট্রিট-সহ গোটা এলাকাতেই বেশির ভাগ দোকান বন্ধ। শহরে পুরসভার অন্য বাজারগুলি খোলা থাকলেও কার্যত ছিল ফাঁকাই। এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘আমরা সকাল থেকেই মার্কেট খুলে দিয়েছিলাম। কয়েক জন দোকানদারও আসেন। তবে ক্রেতা ছিলেন না বললেই চলে।’’
সেক্টর ফাইভেও রাস্তাঘাট ফাঁকা। বাস চলেছে কম। তার কোনওটিতেই দু’এক জনের বেশি যাত্রী নেই। বন্ধ প্রায় সব রেস্তোঁরা। এমনকী, রাস্তার পাশে সার সার খাবারের দোকান, চায়ের দোকানও ঝাঁপ খোলেনি। শাসক দলের পতাকা লাগানো কয়েকটি দোকান খোলা থাকলেও অন্য দিনের উপচে পড়া ভিড়ের বদলে এ দিন খদ্দের ছিল না এক জনও।
তবে টিসিএস, কগনিজেন্ট, আইবিএম-এর মতো সংস্থায় কাজকর্ম বা হাজিরা নিত্যদিনের মতোই ছিল বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। ছোট ও মাঝারি অফিেসও উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের মতো। কাজে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মীরা বাধার মুখে পড়েননি বলে দাবি করেন সেক্টর ফাইভ স্টেকহোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কল্যাণ কর। তিনি জানান, এ সব দিনে কর্মীদের যাতায়াত ও খাওয়ার ব্যবস্থা অধিকাংশ অফিস কর্তৃপক্ষই করেন। এ দিনও তা-ই হয়েছে।
প্রশাসনের দাবি, এ দিন শহরের পথে ছিল প্রচুর সরকারি বাস। আশ্বাস পেয়ে রাস্তায় নামে বেসরকারি বাস-মিনিবাস, ট্যাক্সিও। দলীয় ঝান্ডা লাগানো অটো দাপিয়ে বেড়িয়েছে নির্দিষ্ট রুটে। প্রতিদিনের মতো স্বাভাবিক ছিল মেট্রো চলাচলও। তবে যাঁদের জন্য এত আয়োজন, সেই নাগরিকেরা অধিকাংশই পথে বেরোননি। যাঁরা বেরিয়েছিলেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে বাসের সংখ্যা ছিল কম। তাতে যাত্রীও ছিল গুটিকয়েক। দুপুরের পর থেকে আরও কমে গিয়েছে বাস। কম চলেছে ট্যাক্সিও। হাওড়া স্টেশনে প্রিপেড ট্যাক্সি বুথে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্সি বেপাত্তা হয়ে যায়। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকায় যাত্রীরা ট্যাক্সি না পেয়ে সমস্যায় পড়েন। একই হাল ছিল শিয়ালদহ স্টেশনেও। ফেরি চলাচল অবশ্য ছিল স্বাভাবিক।
তবে, শহর জুড়ে পুলিশের সামনেই শাসক দলের পতাকা লাগানো বাইক-বাহিনীর দাপিয়ে বেড়ায়। পুলিশ সূত্রের খবর, ধর্মতলা, খিদিরপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের প্রভাব ছিল বেশি। সরকারি নির্দেশে ধর্মঘট ভাঙতে বুধবার থেকেই তৎপর ছিল প্রশাসন। দোকানপাট খোলার রাখতে প্রচার চালায় কলকাতা পুলিশ। তবে বিরোধীদের কটাক্ষ, সরকারি সব আয়োজন সত্ত্বেও পথে নামেনি মানুষ। পুলিশের েচষ্টাতেও দোকান খোলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy