Advertisement
E-Paper

পরিচর্যা নেই, আমপানের পরে লাগানো সবুজ প্রাণহীন

যে ঠিকাদার সংস্থাদের দিয়ে কলকাতা পুর এলাকায় গাছ লাগানো ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের আদৌ পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদরা।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১২
নিশ্চিহ্ন: আমপানের পরে ধর্মতলার এখানেই রোপণ করা হয়েছিল গাছ। কিন্তু গেল কোথায়?

নিশ্চিহ্ন: আমপানের পরে ধর্মতলার এখানেই রোপণ করা হয়েছিল গাছ। কিন্তু গেল কোথায়? নিজস্ব চিত্র।

আমফানের তাণ্ডবে শহরে কয়েক হাজার গাছ উপড়ে পড়েছিল। সে সময়ে পরিবেশ বাঁচাতে কলকাতা পুরসভার ১৬টি বরোর প্রত্যেকটিতে ৬০০টি করে গাছ লাগিয়েছিল পুর উদ্যান বিভাগ। সেই গাছগুলির মধ্যে বেশির ভাগ ছিল নিম ও ছাতিম। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই গাছগুলির ৯০ শতাংশই পরিচর্যার অভাবে আর জীবিত নেই। বাকি ১০ শতাংশ গাছকেও আর বাঁচানো যাবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

কেন এই অবস্থা? পুরসভা সূত্রের খবর, যে ঠিকাদারদের গাছ লাগানো ও তাদের পরিচর্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, পুরসভার থেকে টাকা না পাওয়ায় তারা সেই কাজ থেকে সরে এসেছে। ফলে পরিচর্যার অভাবে একে একে মারা গিয়েছে গাছগুলি। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের উদ্যান ছাড়াও ফুটপাতে ওই গাছগুলি লাগানো হয়েছিল। প্রতিটি বরোয় বিভিন্ন ঠিকাদার গাছ লাগানোর ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। পুরসভার সঙ্গে ওই ঠিকাদারদের চুক্তি হয়েছিল যে, এক বছরের আগে ঠিকাদারেরা কোনও টাকা পাবেন না। এর মধ্যে যতগুলি গাছ মরে যাবে, ঠিক ততগুলি গাছ সেই ঠিকাদার নিজের টাকায় কিনে রোপণ করে বড় করে তুলবেন।

পুরসভার উদ্যান বিভাগের এক আধিকারিক এর জন্য দুষছেন ঠিকাদারদেরই। তাঁর কথায়, ‘‘মে মাসে আমফান তাণ্ডবের পরে জুন, জুলাই ও অগস্টে গাছ লাগানো হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, প্রথম মাসে গাছ লাগানোর পরের মাসেই বেশির ভাগ গাছ মারা গিয়েছিল। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারেরা আর নতুন করে গাছ লাগাননি। ঠিকাদারদের উদাসীনতার জন্যই এত গাছ নষ্ট হয়ে গেল।’’

যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন ঠিকাদারেরা। উত্তর কলকাতার দু’টি বরোর গাছ লাগানোর দায়িত্বে থাকা এক ঠিকাদারের কথায়, ‘‘গাছ বাঁচাতে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। এমনও হয়েছে, অগস্টে মৌলালির একটি দোকানের সামনে নিম গাছ লাগানোর পরের দিন সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সেই গাছ ঝলসে গিয়েছে। পরে জানা যায়, গরম জল ঢেলে দেওয়া হয়েছিল গাছটির গায়ে।’’ ওই ঠিকাদারের আরও বক্তব্য, তাঁদের সঙ্গে পুরসভার চুক্তি ছিল ‘অমানবিক’। কারণ এক বছর পরে গাছ লাগানোর জন্য টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল পুরসভা। কিন্তু প্রথমেই বেড়া-সহ নানা সরঞ্জাম কিনতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছিল ঠিকাদারদের। ওই ঠিকাদারের কথায়, ‘‘লকডাউনে ব্যবসা মার খাচ্ছিল। যার জন্য অক্টোবর থেকে উত্তর কলকাতার দু’টি বরোয় গাছের পরিচর্যা করার দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হই।’’ একই কথা জানাচ্ছেন দক্ষিণ কলকাতার দু’টি বরোর দায়িত্বে থাকা এক ঠিকাদারও। তাঁর কথায়, ‘‘গাছ লাগানোর প্রথম দিকে যাতে আমরা কিছু টাকা পাই, সে বিষয়ে পুরকর্তাদের অনেক বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তাই করোনার মরশুমে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে নভেম্বর থেকে গাছের পরিচর্যা আর করতে পারিনি।’’

শহরের একটি বরোর দায়িত্বে থাকা আর এক ঠিকাদারের আবার পর্যবেক্ষণ, ‘‘মৌলালির কাছে নিজের বাড়ির সামনে ফুটপাতে গাছ লাগাতে গেলে গন্ডগোল বেধেছিল। বাড়িওয়ালা কিছুতেই গাছ লাগাতে দেবেন না। বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। তাহলে বুঝতেই পারছেন, গাছের প্রতি মানুষের প্রকৃত মনোভাবটা কী!’’

যে ঠিকাদার সংস্থাদের দিয়ে কলকাতা পুর এলাকায় গাছ লাগানো ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের আদৌ পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘গাছ লাগানোর পরে সব গাছ বাঁচে না। কলকাতার ভৌগোলিক অবস্থান তার জন্য অনেকটা দায়ী। নিম, দেবদারুর মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ বেঁচে রইল। ইতিমধ্যে সব ঠিকাদারই গাছের পরিচর্যার কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। এর পরে বাকি গাছগুলোও বাঁচবে তো?’’

কলকাতা পুরসভার ডিজি (উদ্যান) দেবাশিস চক্রবর্তীকে বলেন, ‘‘এত গাছ মারা গিয়েছে সেটা জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

Cyclone Amphan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy