Advertisement
০৫ মে ২০২৪
শব্দবাজি-কাণ্ড

গ্রেফতার দূর অস্ত্‌, রুজুই হল না মামলা

বিজয়গড়ের ঘটনার পর ৩০ ঘণ্টা কেটে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করা তো দূর, মামলা রুজুও করেনি পুলিশ। কেবল একটি জেনারেল ডায়েরি করে খোঁজখবর নেওয়া (এনকোয়্যারি) হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রে জানানো হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৮
Share: Save:

বিজয়গড়ের ঘটনার পর ৩০ ঘণ্টা কেটে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করা তো দূর, মামলা রুজুও করেনি পুলিশ। কেবল একটি জেনারেল ডায়েরি করে খোঁজখবর নেওয়া (এনকোয়্যারি) হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রে জানানো হয়েছে।

রবিবার বিকেলে বিজয়গড়ে একটি বাড়ির সামনে বিকট শব্দে চকোলেট বোমা ফাটছিল। গৃহকর্ত্রী পূর্ণিমা মৈত্র অসুস্থ ও শয্যাশায়ী ছিলেন। তাঁর মেয়ে পূবালিশিখার অভিযোগ, মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও শব্দবাজি ফাটানো থামেনি। কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধা পূর্ণিমা দেবী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃতার মেয়ের অভিযোগ, শব্দবাজি ফাটার ফলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মা মারা গিয়েছেন।

কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ অবশ্য সোমবার বলেন, ‘‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধার হাঁপানি ছিল। এর ফলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গিয়েছেন।’’ বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, ওই বৃদ্ধা যে অসুস্থ ছিলেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এমন হতেই পারে যে, বার বার শব্দবাজির বিকট আওয়াজে তাঁর অসুস্থতার মাত্রা আরও বাড়ে এবং শেষমেশ তিনি মারা যান। তাঁরা মানছেন, শব্দবাজির আওয়াজেই ওই বৃদ্ধা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন, এই কার্যকারণ সম্পর্ক টানা দুরূহ ব্যাপার। পরিবেশকর্মী নব দত্ত বলেন, ‘‘হাসপাতাল সাইলেন্স জোন তো এই কারণেই। তীক্ষ্ণ ও জোরে শব্দ রোগীদের পক্ষে ক্ষতিকর, প্রাণঘাতী। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।’’

পরিবেশকর্মীদের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই পূর্ণিমা মৈত্রকে ‘শব্দের শিকার’ বলে অভিহিত করেছেন।

পুলিশের একাংশের বক্তব্য, মৃতার মেয়ে তো গোড়া থেকেই শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ করছেন এবং বলছেন, বাজি না ফাটানোর অনুরোধ করলে তাঁর মা ও তাঁর নামে অশ্লীল মন্তব্য করে কয়েক জন স্থানীয় যুবক, টিটকিরিও দেয়। বাহিনীর অন্দরেই প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বাজি ব্যবহার ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা রুজু করে অভিযুক্তদের কেন গ্রেফতার করা হল না? যেখানে মৃতার মেয়ে নির্দিষ্ট ভাবে স্থানীয় কয়েক জন যুবকের নাম করে অভিযোগ জানিয়েছেন?

তদন্তকারীদের দাবি, পূর্ণিমা দেবীর মেয়ে পূবালিশিখা মৈত্র লিখিত অভিযোগ জানালেও সেখানে তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অশ্লীল শব্দ ব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ করেননি। কিন্তু শব্দবাজি ফাটছিল, সে কথা তো জানিয়েছিলেন। আর যেখানে রাজ্যে শব্দবাজি নিষিদ্ধ!

ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, ‘‘আমরা তো গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আমরা এখনও কোনও ব্যবস্থা নিইনি মানে এই নয় যে, ব্যবস্থা নেব না।’’ একই বক্তব্য ডিসি (ইএসডি) বরুণ চন্দ্রশেখরের। তিনি বলছেন, ‘‘খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে গ্রেফতারও করা হতে পারে। দেখা যাক।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের যাতে গ্রেফতার না করা হয়, সেই জন্য শাসক দলের কোনও কোনও স্থানীয় নেতার চাপ আছে। তবে কলকাতা পুরসভার ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমার কাছে এই ব্যাপারে কোনও খবর নেই, কিছু জানাও নেই।’’ যদিও অভিযোগকারী মহিলা পূবালিশিখা দেবী যে যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছেন, সেটা এ দিন সকালে তাঁর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেই মালুম হয়েছে। দেখা করতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে বলেন, ‘‘আমি বাড়িতে নেই। কোথায় আছি, সেটাও বলব না।’’

পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে মহল থেকে যা-ই চাপ আসুক না কেন, আমরা ছাড়ছি না। শব্দের শিকার হলেন যে মহিলা, তাঁর মেয়েকে এই ব্যাপারে যাবতীয় আইনি সহায়তা দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arrest case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE