Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শৌচালয় সুরক্ষিত রাখবে কে, জানেন কি ‘রক্ষীরা’

তা হলে ওখানে কেন রয়েছেন তিনি? প্রশ্ন পড়তেই তিনি জানালেন, শৌচালয়ের কেয়ারটেকার নিজের কোনও কাজে বাইরে গিয়েছেন। তাই দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন ওই ব্যক্তির উপরে। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, শুধু এক দিনের জন্য নয়, ওই ব্যক্তিকে এ ভাবে শৌচালয়ের দায়িত্ব দিয়ে প্রায়ই বাইরে বেরোন কেয়ারটেকার।

কলকাতা পুরসভার পাবলিক টয়লেট।—ফাইল চিত্র।

কলকাতা পুরসভার পাবলিক টয়লেট।—ফাইল চিত্র।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩২
Share: Save:

ফুটপাতে খাবারের হোটেল চালান তিনি। হাফপ্যান্ট আর টি-শার্ট পরে চেয়ারে পা তুলে বসে মোবাইল নিয়ে খুটখুট করে চলেছেন। লোকজন আসছেন, পয়সা দিচ্ছেন। ওই ব্যক্তি রেখে দিচ্ছেন বাক্সে। ভবানীপুরের গাঁজা পার্কে পুরসভার একটি পাবলিক টয়লেটের ছবি। কথা বলে জানান গেল, পয়সা জমা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ওই শৌচালয়ের কর্মীই নন!

তা হলে ওখানে কেন রয়েছেন তিনি? প্রশ্ন পড়তেই তিনি জানালেন, শৌচালয়ের কেয়ারটেকার নিজের কোনও কাজে বাইরে গিয়েছেন। তাই দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন ওই ব্যক্তির উপরে। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, শুধু এক দিনের জন্য নয়, ওই ব্যক্তিকে এ ভাবে শৌচালয়ের দায়িত্ব দিয়ে প্রায়ই বাইরে বেরোন কেয়ারটেকার।

আবার হাজরা মোড়ের একটি শৌচালয় আসলে কে চালান বা সেটি দেখভালের দায়িত্ব কোন সংস্থার, তা জানা নেই সেখানকার কেয়ারটেকারের। তাঁর কাছে না রয়েছে কোনও পরিচয়পত্র, না কোনও লিখিত কাগজপত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই যুবকের দাবি, মুখের কথাতেই তাঁকে গত পাঁচ বছর ধরে কাজে রাখা হয়েছে শৌচালয়ের কেয়ারটেকার হিসেবে।

গত ৬ তারিখ দমদম রেল স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের একটি শৌচালয়ে এক তরুণীকে গালিগালাজ করা হয় এবং তাঁর গায়ে হাত তোলাও হয় বলে অভিযোগ। এর পরেই শৌচালয়ের দায়িত্বে থাকা এক ‘মহিলাকে’ জিআরপি-র কাছে নিয়ে যান ওই তরুণী। কিন্তু জিআরপি-র কাছে নিয়ে যাওয়ার পরে দেখা যায়, শাড়ি আর কপালে টিপ পরে আসলে এক যুবক ওই শৌচালয়ে বসে টাকা নিচ্ছিলেন। অভিযোগ, তিনিই হেনস্থা করেন তরুণীকে। এই ঘটনার পরেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা পাবলিক টয়লেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নজরে এসেছে কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন পাবলিক টয়লেটে নিরাপত্তার ‘ফাঁক’। এর পরেই শৌচালয়গুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থার হাল দেখতে গিয়ে ধরা পড়ল ভবানীপুরের গাঁজা পার্ক এবং হাজরার শৌচালয়ের দুই ছবি।

শুধু এই দুই জায়গা নয়, টালিগঞ্জ চারুমার্কেট সংলগ্ন এলাকাতেও রয়েছে এ ধরনের শৌচালয়। সেখানে তিন জন কেয়ারটেকার রয়েছেন। কিন্তু কোনও ইউনিফর্ম কিংবা পরিচয়পত্র মিলল না তাঁদের কাছে। যদিও অনেকেই জানিয়েছেন, শৌচালয়ের কেয়ারটেরারদের একটি করে ইউনিফর্ম থাকার কথা। সঙ্গে রাখার কথা পরিচয়পত্রও। কিন্তু শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ— প্রায় কোনও পাবলিক টয়লেটের দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকারকে ইউনিফর্ম পরে থাকতে দেখা গেল না।

মৌলালির কাছে সিআইটি রোডের উপরে রামলীলা ময়দানের পাশের একটি শৌচালয়ে গিয়ে আবার দেখা গেল, সেখানেই পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন কেয়ারটেকার। যেই ব্যক্তি দায়িত্ব, দেখা মেলেনি তাঁর। পরিবারের সদস্যেরা জানান, মূলত তাঁরাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে শৌচালয় দেখভালের দায়িত্বে থাকেন। কত বছর ধরে সেখানে এ ভাবে কাজ করছেন তাঁরা? এক ব্যক্তি জানালেন, বছর কুড়ি হবে। তবে পরিবারের কর্তাকে কোন সংস্থা কাজ দিয়েছে, তা তাঁদের জানা নেই বলেই দাবি তাঁদের।

শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এ ভাবেই চলছে শৌচালয়গুলি। তা হলে সেগুলির নিরাপত্তা কাদের হাতে? পুরসভা সূত্রের খবর, সাধারণত যে সংস্থাগুলি বিভিন্ন শৌচাগার দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে, তারাই নিরাপত্তা দিকটিও খেয়াল রাখে। কিন্তু সেই সংস্থা কেয়ারটেকার নিয়োগ করে কীসের ভিত্তিতে?

এ রকমই এক সংস্থা ‘অল বেঙ্গল মাস এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোশিয়েশন’। তাদের তরফে কাজল দাস অবশ্য নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর একটাই উত্তর, ‘‘আমাদের সংস্থায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কোনও অপরাধমূলক রেকর্ড নেই।’’ অন্য দিকে, সুলভ ইন্টারন্যাশনালের মনোজ ঝা জানান, তাঁদের সব কর্মীরই পোশাক আর পরিচয়পত্র রয়েছে। সকলের সব কাগজপত্রও রয়েছে। এ বার থেকে যাতে সকলে ইউনিফর্ম পরেন এবং কাজের সময়ে পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখেন, সে দিকে নজর রাখা হবে।

কী বলছে কলকাতা পুরসভা?

পুরসভার মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন, শহর জুড়ে সুলভ শৌচালয়ের সংখ্যা সাড়ে তিনশোর মতো। প্রায় ৫০টি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেই সব শৌচালয় রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভালের। মূলত দরপত্র ডেকেই এই সংস্থাগুলিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE