Advertisement
০৭ মে ২০২৪

সর্বত্রই ঢিলে সুরক্ষা-ফাঁস

বুধবার বিকেল তিনটে। রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতাল। গাইনি বিল্ডিং। দরজায় তিন চার জন পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী বসে। তাঁদের সামনে দিয়েই ঢোকা হল বাড়ির ভিতরে।

বেআব্রু: কলকাতা মেডিক্যালের প্রসূতি ওয়ার্ড। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বেআব্রু: কলকাতা মেডিক্যালের প্রসূতি ওয়ার্ড। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৩
Share: Save:

বুধবার বিকেল তিনটে। রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতাল। গাইনি বিল্ডিং। দরজায় তিন চার জন পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী বসে। তাঁদের সামনে দিয়েই ঢোকা হল বাড়ির ভিতরে। এক বারের জন্যও কেউ কার্ড দেখতে চাইলেন না, কোনও প্রশ্নও করলেন না। বিনা বাধায় পৌঁছনো গেল প্রথমে লেবার রুমে, পরে তিনতলায় ওয়ার্ডে।

কোনও তলায় রক্ষীর দেখা নেই। কয়েক জন চিকিৎসক ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অধিকাংশই শিক্ষানবীশ। তাঁদের পাশ দিয়ে ঢুকে যাওয়া হল একেবারে সদ্যোজাতদের কাছে। একাধিক ছবিও তোলা গেল। একটি শয্যায় দেখা গেল, একা এক নবজাতক শুয়ে। মা সম্ভবত শৌচাগারে। শিশুটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত। ওয়ার্ডে গোটা ছয়েক আয়া এ দিক-সে দিক ছড়িয়ে। জানালেন, প্রতি বেলায় তাঁরা দেড়শো টাকা করে নেন। সেখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। তবু ওয়ার্ডে নির্বিচারে ঢুকছেন পুরুষেরাও।

পরের গন্তব্য ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ। এখানে নিকট অতীতে একাধিক বার শিশু চুরি এবং শিশু বদলের অভিযোগ উঠেছে। এখানকার গাইনি বিল্ডিংয়ে ওঠার দরজাতেও নীল পোশাকের নিরাপত্তাকর্মী আছেন। তাঁদের এক জন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কোথায় যাবেন?’ মিথ্যে ভাবে বলা হল, ‘আমি জুনিয়ার ডাক্তার।’ ব্যাস, কোনও পরিচয়পত্র দেখতে চাইলেন না তিনি। সোজা উঠে যাওয়া হল তিনতলার প্রসূতি ওয়ার্ডে।

উঠেই সিঁড়ির মুখে একটা জটলা। ডিসচার্জ হওয়া সদ্য প্রসূতির পথ আটকে ৫০০ টাকা চাইছেন এক আয়া। ছবি তোলা হচ্ছে বুঝে মুখ লুকিয়ে সরে গেলেন তিনি। এই ওয়ার্ডেও প্রসূতিদের শয্যা পর্যন্ত পৌঁছতে অসুবিধে হল না। ওয়ার্ডের মহিলারাই জানালেন, ওয়ার্ডে ঢোকা-বেরোনোর গোটাটা আয়ারাই নিয়ন্ত্রণ করেন। কার্ড থাকলে ভিজিটিং আওয়ার্স-এ ঢোকা যায়। আর আয়াদের হাতে টাকা গুঁজে দিলে যে কোনও সময়েই ওয়ার্ডে ঢোকার ছাড়পত্র মেলে। ‘নিরাপত্তা’ সেখানে নেহাতই বায়বীয় ব্যাপার।

মঙ্গলবার মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগ থেকে শিশু চুরির ঘটনার ঠিক পরদিন সরেজমিন ঘুরে দেখে এমনই ছবি মিলল আরও দুই নামী মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে অবস্থা ‘যথা পূর্বং তথা পরং!’ মেডিক্যালে শিশু চুরির ঘটনার থেকে শিক্ষা নিয়ে তাদেরও যে সতর্ক হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে তারা বিলকুল উদাসীন। অবাধে যাওয়া যাচ্ছে সদ্যোজাতদের কাছে। একমাত্র কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে এ দিন বিভিন্ন ভবনে ঢোকার মুখে নিরাপত্তার কিছুটা আঁটোসাঁটো ভাব দেখা গিয়েছে।

এ ব্যাপারে এসএসকেএমের সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এমন হওয়ারই কথা নয়। প্রত্যেকের কার্ড বা পরিচয়পত্র দেখে তবেই ঢুকতে দেওয়ার কথা। আমরা বিস্তারিত খোঁজ নেব।’’ ন্যাশনাল মেডিক্যালের পীতবরণ চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আয়াচক্র বারবার ভেঙেও সামলানো যাচ্ছে না। ওঁরাই বাইরের লোক ঢোকাচ্ছেন। রোগীদের কাছে অনুরোধ, ওয়ার্ডে আয়া দেখলেই যেন আমাদের জানান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gynecology department Security Hospitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE