দেশবন্ধুনগর হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র।
ইনডোর বিভাগ বন্ধ প্রায় সাত মাস। চিকিৎসক সাকুল্যে তিন জন। বহির্বিভাগে রোগী এলে সঙ্গে থাকা লোকজনকেই বাইরে থেকে চিকিৎসার সরঞ্জাম কিনে আনতে হয়।
খাতায়-কলমে যাই থাক, এ ভাবেই চলছে বাগুইআটির দেশবন্ধুনগর হাসপাতাল। বাগুইআটি এলাকায় ভিআইপি রোডের উপরে অজস্র নার্সিংহোম হলেও সেখানে চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। এই অবস্থায় দেশবন্ধুনগর হাসপাতালটি ফের সরকারি উদ্যোগেই চালু হোক, এমনটাই চাইছেন স্থানীয় মানুষ। বাগুইআটির এই হাসপাতালটি পুরোদমে চালু করতে বিধাননগর পুর নিগমের কর্তারা এখন সরকারি হাসপাতালে পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ) মডেলে চালু হওয়া রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলির মডেলটি অনুসরণের কথা ভাবছেন।
চারতলা হাসপাতালে ৫০ জন রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল। অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ, রোগীর ওয়ার্ড— সবই ছিল। হাসপাতালের সুপার উৎপল গোস্বামীর কথায়, ‘‘প্রতি দিন ১২০০ থেকে ১৫০০ রোগীর চিকিৎসার পরিকাঠামো ছিল। কম খরচে চিকিৎসা হতো। ফলে মূলত গরিব আর মধ্যবিত্ত রোগীদেরই ভিড় বেশি ছিল এখানে।’’
এখন পুরোই বন্ধ। দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে মাত্র দু’তিন জন ডাক্তার আছেন। যন্ত্রপাতিতে পুরু ধুলোর আস্তরণ জমেছে। বর্হিবিভাগে আসা রোগীকে বলা হচ্ছে, চিকিৎসা সামগ্রী বাইরে থেকে কিনে আনতে। কর্মীদের দাবি, এখন পুরনিগম আর্থিক সাহায্য না দেওয়াতেই কাজকর্ম কার্যত শিকেয়।
বিধাননগর পুরনিগম তৈরির আগে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার অধীনে ছিল দেশবন্ধুনগর হাসপাতাল। তাদেরই ভর্তুকিতে চলত এটি। ২০০৮ সালে একটি ট্রাস্টি বোর্ডের থেকে দেশবন্ধুনগর হাসপাতালটি অধিগ্রহণ করে সিপিএম পরিচালিত রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা। সেই সময়ে ওই পুরসভার চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায় এখন তৃণমূল পরিচালিত বিধাননগর পুর নিগমের ডেপুটি মেয়র। তাপসবাবুর কথায়, ‘‘অধিগ্রহণের পরে হাসপাতালটিতে জরুরি বিভাগ-সহ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছিল। নাগরিকদের স্বল্পমূল্যে চিকিৎসার জন্য পুরসভাই আর্থিক সাহায্য করত।’’
তবে নবগঠিত বিধাননগর পুরনিগম যে আর এই হাসপাতালের ‘দায়’ নেবে না, তা কার্যত পরিষ্কার করে দিয়েছেন নিগমের মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায়। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালটি তো সরাসরি রাজ্য সরকারের নয়। তবু পিপিপি মডেলে চালুর কথা ভাবছি।’’
দেশবন্ধুনগর হাসপাতালটি চালুর এই সিদ্ধান্তকে ভোটের মুখে কড়া সমালোচনা করেছে সিপিএম। দলের রাজারহাট আঞ্চলিক শাখার সম্পাদক শুভজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘দমদম পুর হাসপাতাল পিপিপি মডেলে শুরু হওয়ার পরে ওখানে গরিব রোগীরা আর ঢুকতে পারেন না। পিপিপি মডেল চালু করলে দেশবন্ধুনগর হাসপাতালেরও একই হাল হবে। এটা হঠকারী সিদ্ধান্ত হবে।’’
যদিও মেয়র পারিষদ প্রণয়বাবুর দাবি, ‘‘পুর-এলাকার গরিব মানুষকে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা হচ্ছে। তাঁদের জন্য ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে। আর অন্যরা আশপাশের নার্সিংহোমের চেয়ে অনেক কম খরচে চিকিৎসা পাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy