Advertisement
E-Paper

ড্রাইভারকাকুর বাসে বেহাল চাকা, জেনে নড়ে বসছে প্রশাসন

হঠাৎ বাসের সামনে এসে পড়া স্কুল পড়ুয়াদের বাঁচাতে গাড়ি ডান দিকে ঘুরিয়ে ব্রেক কষেছিলেন চালক। কিন্তু চাকার হাল এমনই ছিল যে, ব্রেকেও তা থামেনি। রাস্তায় ঘষে সামনে এগিয়ে উড়ালপুলের স্তম্ভে গিয়ে ধাক্কা মারে বাসটি। মৃত্যু হয় বাসচালকের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৬:০৬
সেই বাসের চাকা। — নিজস্ব চিত্র

সেই বাসের চাকা। — নিজস্ব চিত্র

হঠাৎ বাসের সামনে এসে পড়া স্কুল পড়ুয়াদের বাঁচাতে গাড়ি ডান দিকে ঘুরিয়ে ব্রেক কষেছিলেন চালক। কিন্তু চাকার হাল এমনই ছিল যে, ব্রেকেও তা থামেনি। রাস্তায় ঘষে সামনে এগিয়ে উড়ালপুলের স্তম্ভে গিয়ে ধাক্কা মারে বাসটি। মৃত্যু হয় বাসচালকের। শুক্রবার তপসিয়া মোড়ের কাছে ওই স্কুল বাস দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। এ বার আর স্কুল কর্তৃপক্ষ বা বাসমালিকের উপরে ভরসা রাখবে না তারা। কারণ, এ দুর্ঘটনাতেও বাসের দেখভালের গলদের প্রসঙ্গই সামনে এসে গিয়েছে। তাই এ বার নিজেরাই গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করতে অভিযান চালাবে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, শহরের মোট ২৫টি ট্রাফিক গার্ডে স্কুল বাস চালকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘এ বার থেকে স্কুল বাসের স্বাস্থ্য যাচাইয়ের পাশাপাশি চালকদের বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ, সবের ব্যবস্থাই করবে কলকাতা পুলিশ।’’

পুলিশ জানায়, শহরে মোট তিন রকমের স্কুল বাস চলে। কয়েকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষই পড়ুয়াদের জন্যে বাসের ব্যবস্থা করেন। যে সব স্কুলের নিজস্ব বাস রয়েছে, তার কর্তৃপক্ষই চালকদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বাসের দেখভালের দায়িত্বে থাকেন। কিছু স্কুলের নিজস্ব গাড়ি থাকে না। কোনও বাস মালিকের সঙ্গে চুক্তি করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার ভিত্তিতেই পড়ুয়াদের বাস পরিষেবা দেওয়া হয়। সমস্যা থেকে যায় সেখানেই। চুক্তি থাকলেও বাসের ও চালকের প্রশিক্ষণের বিষয়টি দেখভাল করেন মালিকপক্ষই। বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষই অভিভাবকদের নির্দিষ্ট পরিবহণ সংস্থার কথা জানিয়ে দেন। অভিভাবকেরা নিজেদের উদ্যোগে সেখান থেকে পরিষেবা নেন। পুলিশের অবশ্য সাফ বক্তব্য, গাড়ির পরিষেবা যে ভাবেই নেওয়া হোক না কেন, স্কুল তার দায়িত্ব কোনও ভাবেই এড়াতে পারে না।

অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, শহরে স্কুল বাসের দেখভালের পদ্ধতিতেই গলদ রয়েছে। কলকাতার স্কুলগুলিতে যে সমস্ত সংস্থা বাস সরবরাহ করে সেগুলি নিয়ে গঠিত সংগঠনের নাম ওয়েস্ট বেঙ্গল কন্ট্র্যাকচুয়াল ক্যারেজ ওনার অ্যান্ড অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি (মধ্য কলকাতা) রাজেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘শুক্রবার যা ঘটেছে, তা একেবারেই কাম্য নয়। আরও যাতে সতর্ক হওয়া যায়, সেই চেষ্টাই চালানো হচ্ছে।’’ বাসের রক্ষাণাবেক্ষণ নিয়ে তাঁর সাফাই, ‘‘নিয়মিত বাস দেখভাল করা হয়। শুক্রবারের বাসটির ঠিক কী ত্রুটি ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ কলকাতার এক সিবিএসই স্কুলের কর্তা জানান, তাঁদের নিজস্ব বাস নেই। ফলে এক মালিকের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে বাস চালাতে হয়। তা দেখভালের দায়িত্বও থাকে মূলত বাসমালিকের উপরেই। ফলে কোন চালকের কী প্রশিক্ষণ রয়েছে বা বাসের টায়ারের কী অবস্থা, স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষে তা বোঝানোর উপায় থাকে না। গা়ড়ির বৈধ নথি দেখভাল করা ছাড়া স্কুলের তো আর কিছুই করার থাকে না।

পুলিশ জানায়, এমন ক্ষেত্রেই সমস্যা বেশি। স্কুলে কোনও প্রশিক্ষিত ব্যক্তি না থাকলে, যে কারওর পক্ষে বুঝে নেওয়া সম্ভব নয় একটি স্কুল বাস আদৌ নিরাপদ কি না। শুধুমাত্র চালকের লাইসেন্স দেখে তার প্রশিক্ষণের সম্পর্কেও পুরোপুরি অবগত হওয়া সম্ভব নয়। গত শুক্রবার যে দুর্ঘটনা ঘটে, সেই বাসটির টায়ারের অবস্থা খারাপ ছিল। ব্রেক কষেও তা আটকানো যায়নি। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, স্কুলগুলিকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। আদৌ পরিবর্তন হবে কি না, সে বিষয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাই এ বার পুলিশকেই সরেজমিন খতিয়ে দেখতে হবে বলে জানান তিনি।

শহরে এর আগেও একাধিক বার স্কুল বাস দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ বার সেই দুর্ঘটনা ঠেকাতেই বেশ কিছু ব্যবস্থা নিতে চলেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমত, বাসের অবস্থা গুরুত্ব দিয়ে দেখভালের জন্যে সমস্ত স্কুলকে নোটিস পাঠানো হবে। দ্বিতীয়ত, স্কুল থেকে বাসমালিকদের ঠিকানা নিয়ে চালকদের প্রশিক্ষণ যাচাই করে দেখা হবে। শহরের পঁচিশটি ট্রাফিক গার্ডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে চালকদের। পাশাপাশি, ওই চালকদের কাউন্সেলিং করা হবে। তৃতীয়ত, ঘন ঘন গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার উপরে জোর দেওয়া হবে। চতুর্থত, রাস্তায় বেরোনো স্কুল বাসগুলির উপরেও থাকবে বিশেষ নজর। মাঝেমধ্যেই স্কুলগুলিতে হানা দিয়ে যাচাই হবে গাড়ির সমস্ত নথি।

মহাদেবী বিড়লা অ্যাকাডেমির এক ছাত্রীর মা বলেন, ‘‘সন্তানদের নিয়ে খুবই চিন্তিত। কোন চালক গাড়ি চালান, আমরা তো তাঁকে চিনিই না। আদৌ কী প্রশিক্ষণ রয়েছে, সেটাও জানা থাকে না। সবটা নির্ভর করে স্কুলের উপরেই।’’

কী বলছেন স্কুল কর্তৃপক্ষেরা? হেরিটেজ স্কুলের অধ্যক্ষা সীমা সাপ্রু বলেন, ‘‘আমাদের নিজস্ব কিছু গাড়ি রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ বাসই অন্য মালিকদের। বাসের দেখভাল তাঁরাই করেন। আমাদের তরফ থেকেও পরীক্ষা করা হয়। পুলিশের নোটিস পেলে পরের সিদ্ধান্ত নেব।’’ পাঠভবনের প্রধান শিক্ষিকা সান্ত্বনা রায় বলেন, ‘‘সমস্ত বাসই আমাদের নিজেদের। চালক থেকে শুরু করে গোটা গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা, আমরা নিজেরাই করি।’’ সাউথ পয়েন্টের তরফে কৃষ্ণ দামানি আবার জানান, ‘‘নিজস্ব বাসের পাশাপাশি বাইরের বাসও নিয়ে আসে আমাদের পড়ুয়াদের। কিন্তু বাসের দেখভালের জন্যে আমাদের নিজস্ব লোক রয়েছে, তারাই পরীক্ষা করে দেখেন।’’ বরাহনগরের সেন্ট্রাল মর্ডানের অধ্যক্ষ নবারুণ দে বলেন, ‘‘আমাদের নিজস্ব বাস নেই, তবে আমাদের বলে দেওয়া এজেন্সি থেকেই অভিভাবকেরা বাস পরিষেবা পান। সমস্ত নথিই খতিয়ে দেখি। তবে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’’ অভিনব ভারতীর অধ্যক্ষা শ্রাবণী সামন্ত বলেন, ‘‘বাস পরিষেবা স্কুল থেকেই দেওয়া হয়। তবে বাসের চালক ঠিক করেন মালিক পক্ষ। তাঁর সমস্ত নথি আমাদের কাছে থাকে। ফলে আমরা সতর্ক রয়েছি। তবে আরও খেয়াল রাখতে হবে এ বার থেকে।’’

kolkata police traffic guard car fitness check
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy