(বাঁ দিকে) শ্যাম স্কোয়ারের মূর্তি। (ডান দিকে) পাইকপাড়া ১৩ আমরা সবাই ক্লাবের প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
শোনা যায়, অষ্টাদশ শতকে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির সেই পুজো দেখে মুগ্ধ ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জে চাউলপট্টি এলাকার লিচুপট্টিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেন। এক সময়ে জগদ্ধাত্রী পুজো শুধু কৃষ্ণনগর আর চন্দননগরেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন কলকাতাও যেন ‘মিনি চন্দননগর’। শহরে বিভিন্ন সর্বজনীনের সঙ্গে বাড়ছে জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যাও।
লালবাজার সূত্রের খবর, ২০১২ সালে এ শহরে পুলিশের অনুমতি নিয়ে ৪১২টি জগদ্ধাত্রী পুজো হয়েছিল। ২০১৭ সালে ওই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮০-তে। লালবাজার জানিয়েছে, এমন বহু ছোট ছোট পুজোও রয়েছে, যারা পুলিশের অনুমতিই নেয় না। তাদের ধরলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে।
জগদ্ধাত্রীর পাশাপাশি শহরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গণেশ ও কার্তিক পুজোর সংখ্যাও। গণেশপুজো মূলত পশ্চিম ভারতেই পালিত হত। এখন কলকাতা ও শহরতলিতেও বাড়ছে গণেশপুজোর সংখ্যা। পুজো-পার্বণের এই হিড়িক বাড়ছে কেন? সমাজতত্ত্ববিদেরা বলছেন, বাঙালির মননে পরিবর্তন ঘটেছে। বেকারত্ব ভুলে হইচই, ফুর্তিতে মজে থাকার সাময়িক আনন্দকেই বেছে নিচ্ছে আমবাঙালি। গণেশপুজো নিয়ে সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্রের পর্যবেক্ষণ, ‘‘গণেশ সম্পদের প্রতীক। এখন বাঙালিরাও যে ভাবে গণেশপুজোর দিকে ঝুঁকছে, তাতে এটাই প্রমাণ হয় যে, বাঙালির মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। বাঙালি অর্থের দিকে ঝুঁকছে।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক ডালিয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আজকাল যে কোনও উৎসবে সামিল হয়ে পড়ার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাই গণেশ, জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যাও বাড়ছে। অতীতে পুজোপার্বণ করার পিছনে ধর্মীয় কারণই ছিল প্রধান। এখন রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শন করাটাও অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।’’
তবে বিভিন্ন পুজোর সংখ্যা বেড়ে চলায় খুশি কুমোরটুলির শিল্পীরা। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সাংস্কৃতিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবু পালের কথায়, ‘‘গত বছরের তুলনায় এ বার অতিরিক্ত ২০০টি জগদ্ধাত্রী প্রতিমার বায়না এসেছে।’’ শিল্পী মিন্টু পাল বলেন, ‘‘বছর পাঁচেক আগে পাঁচ-ছ’টি জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তৈরি করতাম। গত বছর ২২টির অর্ডার পেয়েছিলাম। এ বার ২৫টি।’’
এখন মূলত উত্তর কলকাতার বাগবাজার, শ্যামবাজার, পোস্তা, কুমোরটুলিতেই জাঁকজমক সহকারে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। উত্তর কলকাতার সিমলা নেতাজি তরুণ সঙ্ঘের জগদ্ধাত্রী পুজো এ বার তেরো বছরে পা দিল। ক্লাবের সম্পাদক তড়িৎ দে বলেন, ‘‘তেরো বছর আগে এখানে হাতে গোনা কয়েকটি পুজো ছিল। এখন অনেক পুজো হয়।’’
শহরতলিতেও বাড়ছে জগদ্ধাত্রী পুজো। হাওড়ার আন্দুল রোড জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির তরফে বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘পনেরো বছর আগে আমাদের তল্লাটে মাত্র দু’টি পুজো হত। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০টি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy