Advertisement
০২ মে ২০২৪
Sawmill

দমকলের নির্দেশ মানছে না নিমতলার কাঠগোলা পাড়া 

সোমবার ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ কাঠগোলাতেই অগ্নি-নির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নেই।

বিপজ্জনক: কাঠের গোলার সামনেই চলছে চায়ের দোকান। সোমবার, নিমতলায়। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: কাঠের গোলার সামনেই চলছে চায়ের দোকান। সোমবার, নিমতলায়। নিজস্ব চিত্র

কৌশিক ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:১৩
Share: Save:

দোতলা কাঠের বাড়ির নীচে রমরমিয়ে চলছে কাঠগোলা। ঠিক তার উপরেই বেশ কিছু পরিবারের বসবাস। যাতায়াতের জন্য রয়েছে একটিই সিঁড়ি। কোনও কোনও বাড়ির সামনেই ঝুলছে বৈদ্যুতিক তার। বেশ কিছু কাঠগোলায় আবার অগ্নি-নির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নেই বলেও অভিযোগ। বছরের পর বছর এ ভাবেই চলছে নিমতলার প্রায় ৩০০টি কাঠগোলা। গত ১২ বছরের মধ্যে দু’টি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে সেখানে। চলতি মাসেই তালতলা ও চেতলার দু’টি কাঠগোলায় অগ্নিকাণ্ডের পরেও টনক নড়েনি নিমতলার স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের।

সোমবার ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ কাঠগোলাতেই অগ্নি-নির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নেই। দমকল নির্দেশ দিয়েছিল, শহরের সমস্ত কাঠগোলায় জলের ব্যবস্থার পাশাপাশি ঢোকা-বেরোনোর আলাদা পথ করতে হবে। কিন্তু অভিযোগ, অধিকাংশ কাঠগোলা-মালিকই তা মানেননি। এ ছাড়া, পুরনো বৈদ্যুতিক তার বদলে নতুন তার লাগাতেও প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তা-ও মানা হয়নি। সমীর বিশ্বাস নামে এলাকার এক কাঠগোলা-মালিক বললেন, ‘‘দমকলের নির্দেশে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র লাগানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি খারাপ হয়ে যাওয়ার পরে নতুন করে লাগানো হয়নি। পুরনো লাইসেন্সও নবীকরণ করা হয়নি।’’ কমল খৈতান নামে এলাকার আর এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘‘দমকল থেকে যাওয়া-আসার পৃথক গেট তৈরি করতে বলা হয়েছিল। আমরা ছোট ব্যবসায়ী। অত খরচ করা সম্ভব নয়। দমকলের সঙ্গে আর কোনও কথা হয়নি। ওই অবস্থাতেই ব্যবসা চলছে।’’

রাজ্য দমকল দফতর সূত্রের খবর, কাঠগোলা এলাকায় দাহ্য পদার্থ নিয়ে ব্যবসা করতে গেলে দমকলের সাধারণ ছাড়পত্র ছাড়াও অগ্নি-নির্বাপণ সংক্রান্ত শংসাপত্র থাকা প্রয়োজন। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ীরই তা নেই। রাজ্য দমকলের প্রাক্তন অধিকর্তা বিভাস গুহ বলেন, ‘‘এক বার কাঠগোলায় অগ্নিকাণ্ডের পরেই তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, অগ্নিপ্রবণ অঞ্চলে অগ্নি-বিধি মানা হচ্ছে কি না, তা দেখতে বাইরের সংস্থাকে দিয়ে নজরদারি চালানো হবে। দমকলের নিজস্ব পরিকাঠামোর অভাবেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে নিমতলার কাঠগোলা নিয়ে ‘ফায়ার অডিট’ও হয়েছিল।’’

প্রশ্ন উঠেছে, এ সব অনুমোদন ছাড়াই কাঠগোলা চলছে কী করে? এলাকায় দমকলের নজরদারিই বা কোথায়? দমকলের ডিরেক্টর জেনারেল জগমোহন বললেন, ‘‘বাইরের কোনও সংস্থা নয়, দমকল নিজেদের কর্মীদের দিয়েই নজরদারি চালাবে। বর্তমানে কাঠগোলা এলাকার অবস্থা কী, তা দেখা হচ্ছে। ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’

নিমতলায় কাঠগোলা এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর সুজাতা সাহা বললেন, ‘‘কয়েক বছর আগে পুরসভার অধিবেশনে কাঠগোলার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। পুর কর্তৃপক্ষ এবং দমকলকে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর হতে বলা হয়েছিল। তার পরেও কিছু হয়নি।’’ পুর কর্তৃপক্ষ জানান, বিষয়টি দমকলের। তাদেরই ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

‘নিমতলা টিম্বার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কুশল বিশ্বাস বলেন, ‘‘অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা অনেক ব্যবসায়ীরই নেই। তাঁদের ওই সব ব্যবস্থা করতে হবে। তবে সরকারি বিধি কারা মানছেন না, তা দেখার দায়িত্ব সরকারেরই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sawmill Nimtala Fire Brigade Fire Extinguisher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE