নিয়ম ভেঙে এ ভাবেই এসএসকেএম হাসপাতালের ভিতরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাইরের অ্যাম্বুল্যান্স। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
মূল ক্যাম্পাসে শয্যার অভাব। জরুরি বিভাগে সদ্য ভর্তি হওয়া রোগীকে ভবানীপুরের রামরিকদাস হরলালকা অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে নিয়ে যেতে বলেন এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তত ক্ষণে সঙ্গে আনা অ্যাম্বুল্যান্স ছেড়ে দিয়েছে রোগীর পরিবার। কয়েক মিনিটের মধ্যেই অবশ্য নতুন অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যায় হাসপাতাল চত্বর থেকে। দেড় কিলোমিটার রাস্তার জন্য চালক দাবি করেন, এক হাজার টাকা!
বাধ্য হয়ে রোগীর পরিবার তাতেই রাজি হয়। এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার রঘুনাথ মিশ্র জানাচ্ছেন, ওই অ্যাম্বুল্যান্সের চালক রামরিকে নিয়ে যাওয়ার বদলে রোগীকে অন্য এক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তোলেন। দু’হাজার টাকা নেন। কয়েক দিন পরে রোগীকে এসএসকেএম হাসপাতালে ফিরিয়ে এনে ওই অ্যাম্বুল্যান্স চক্রের কথা জানান রোগীর পরিজনেরা। তত দিনে রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন!
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (এনআরএস) অ্যাম্বুল্যান্স চক্রের রমরমা দেখা গিয়েছে বুধবারই। হাসপাতাল থেকে রাস্তার ঠিক উল্টো দিকের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পৌঁছে দিতে রোগীর পরিবারের কাছ থেকে মোটা টাকা চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বাসের চাকায় পিষ্ট মাকসুনা বিবি নামে এক রোগীর পরিবারের থেকে ওই রাস্তা পার করে দিতে ৪০০ টাকা নেওয়া হয়! অ্যাম্বুল্যান্স চক্রের জাল কত দূর, তা দেখতে শনিবার নজর রাখা হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে।
দেখা গেল, শুধু এনআরএস নয়, সংক্রমণ ছড়িয়েছে অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও। এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ৬০০ মিটারের মধ্যে এসএসকেএমেরই অ্যানেক্স বিল্ডিং শম্ভুনাথ পণ্ডিতে পৌঁছে দিতে অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা ৫০০ টাকা চাইছেন। বলছেন, অ্যাম্বুল্যান্সের অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হলে দিতে হবে আরও ২০০ টাকা। এসএসকেএম হাসপাতালেরই অন্য দু’টি অ্যানেক্স বিল্ডিং, পি জি পলিক্লিনিক (৪০০ মিটারের মধ্যে) এবং রামরিকে ( দেড় কিলোমিটার) নিয়ে যেতে দর হাঁকা হচ্ছে যথাক্রমে ৪০০ এবং এক হাজার টাকা!
রোগীর পরিজন হিসেবে ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। এসএসকেএম চত্বরে ময়না-তদন্তের ঘর থেকে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসের বহির্বিভাগের সামনে সার দিয়ে দাঁড় করানো ছিল অ্যাম্বুল্যান্সগুলি। দুপুর রোদে তাতে বসে কোনও চালক দিবানিদ্রা দিচ্ছেন, কেউ ব্যস্ত মোবাইলে ভিডিয়ো দেখতে। শম্ভুনাথ যাবেন? বলায় মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক বলেন, ‘‘যাব তো। গিয়েই ছেড়ে দেবেন তো! ৫০০ টাকা দেবেন।’’ রাস্তার একটা বাঁক ঘুরে কিছু দূর এগোলেই তো শম্ভুনাথ? চালকের জবাব, ‘‘৫০ টাকা কম দেবেন।’’ পিছনের আর এক চালককে শম্ভুনাথ যাওয়ার ভাড়া কত জানতে চাওয়ায় বললেন, ‘‘ও কত বলল? আমাকে ওর থেকে ৫০ টাকা কম দেবেন!’’ শেষে এই চালক রাজি হলেন সাড়ে তিনশো টাকায়। দরদামেই জানা গেল, রামরিক-সহ বাকি হাসপাতালগুলি যেতে কত ভাড়া গুণতে হতে পারে।
কিছু দূরেই দাঁড়ানো হাসপাতালের এক রক্ষীকে জানানো হল, এই অ্যাম্বুল্যান্সগুলি কাদের? হাসপাতালের মধ্যে এই সব অ্যাম্বুল্যান্স থাকতে পারে? রক্ষীর উত্তর, ‘‘আমার কী দরকার? সুপার বুঝবেন।’’ সুপার রঘুনাথবাবু জানাচ্ছেন, হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে মোট তিনটি। সেগুলি ছাড়া অন্য কোনও অ্যাম্বুল্যান্সের হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়ানোরই কথা নয়। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে বহু বার বলেছি। এই সব অ্যাম্বুল্যান্সের চালকেরা এক-একটা দালাল। আমাদের রোগীকে মিথ্যা বলে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তোলেন। বাড়তি টাকা নেন। ওঁদের কে দাঁড়াতে দিয়েছে, দেখছি।’’
এসএসকেএম হাসপাতাল ভবানীপুর থানার অন্তর্গত। সেখানকার পুলিশ আধিকারিক জানাচ্ছেন, প্রায়ই হাসপাতালে গিয়ে নিজে তদারকি করেন তিনি। এ দিনও গিয়েছিলেন। তবে বাইরের কোনও অ্যাম্বুল্যান্স চোখে পড়েনি? আধিকারিকের জবাব, ‘‘বাইরের অ্যাম্বুল্যান্স তো আমরা দাঁড় করাতে দিই না। বিষয়টি দেখছি।’’
রোগীর পরিজনেদের বক্তব্য, এই রোগ নির্মূল হয় না। পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ— কারওরই বুঝি ওষুধ জানা নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy