Advertisement
০২ মে ২০২৪

পড়ুয়াদের পাল্টা বাণের মুখে পার্থ

শিক্ষামন্ত্রীকে পাল্টা বাণে বিঁধতে দেরি করেননি ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। তাঁদের মতে, পার্থবাবুর বক্তব্য প্রতিষ্ঠানের অপমান। সেই সঙ্গেই ওই পড়ুয়ারা জানান, রাজ্য সরকার ছাত্রছাত্রীদের ‘বিক্ষোভের ঘুণ’-কে ভয় পাচ্ছে!

পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:২১
Share: Save:

কিছু দিন আগেও তাঁর সবিস্ময় প্রশ্ন ছিল, প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুরে কেন এত গোলমাল? শনিবার বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে প্রেসিডেন্সি-যাদবপুরে ঘুণ ধরে গিয়েছে বলে কটাক্ষ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

শিক্ষামন্ত্রীকে পাল্টা বাণে বিঁধতে দেরি করেননি ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। তাঁদের মতে, পার্থবাবুর বক্তব্য প্রতিষ্ঠানের অপমান। সেই সঙ্গেই ওই পড়ুয়ারা জানান, রাজ্য সরকার ছাত্রছাত্রীদের ‘বিক্ষোভের ঘুণ’-কে ভয় পাচ্ছে!

শনিবার হিন্দু স্কুলের ২০১তম প্রতিষ্ঠা দিবসে অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর সামনেই স্কুলে খেলার মাঠের অভাবের প্রসঙ্গ ওঠে। তখন পড়ুয়াদের প্রেসিডেন্সির মাঠে খেলতে পাঠানো যেতে পারে বলে মন্ত্রীকে প্রস্তাব দেন ওই স্কুলের প্রাক্তনী নির্মল মাজি। যারপরনাই বিরক্ত হয়ে পার্থবাবু বলে ওঠেন, ‘‘ওখানে গিয়ে প্রেসিডেন্সির মতো ঘুণ যদি এই ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে পড়ে, তা হলে তো মুশকিল হয়ে যাবে। সব সময়ে শুধু বিক্ষোভ!’’ তার পরেই উদ্বিগ্ন শিক্ষামন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘যাদবপুর-প্রেসিডেন্সির পাঁচ-দশটা ছেলের জন্য পুরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কী রকম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে! আমি ছাত্রদের সঙ্গেও কথা বলছি।’’

যাদবপুরে ‘হোক কলরব’-এর সময় থেকে শিক্ষামন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। রাজ্যের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক ছাত্র সংসদের বদলে অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গড়ার সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে যাদবপুর আর প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের একটি অংশ তার বিরোধিতায় এককাট্টা হয়েছেন। পথে নেমেছেন। দু’-দু’বার ধর্নায় বসেছেন যাদবপুরের কিছু পড়ুয়া। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রীর ‘বিক্ষোভের ঘুণ’ মন্তব্যটি বিশেষ অর্থবহ হয়ে উঠছে বলে শিক্ষা শিবিরের অভিমত।

শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যে রীতিমতো অপমানিত বোধ করছেন পড়ুয়াদের একাংশ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্র সংসদের চেয়ারপার্সন সোমাশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বরাবরই এই দুই প্রতিষ্ঠানকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চেয়েছে। কিন্তু পারেনি। এই ঘুণের জন্যই বিধানসভায় আইন করে ছাত্র সংসদের নির্বাচন বন্ধ করতে হয়েছে। এই দুই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতি ও সমাজচেতনা তৈরি হয়। তৃণমূল এই ঘুণকেই ভয় পায়।’’ প্রেসিডেন্সির পড়ুয়া তথা এসএফআই নেতা অর্কপ্রভ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই পচা সমাজ ব্যবস্থায় আমরা ঘুণ হয়ে বেঁচে ছিলাম, আছি আর থাকবও।’’

পার্থবাবুর উক্তি অপমানজনক বলে মন্তব্য করে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম দোলই দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের মন্তব্য গোটা প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই অপমানজনক। এই প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ তো সুভাষচন্দ্র বসুও দেখিয়েছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী তাঁরও অপমান করলেন! এই বক্তব্যের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি।’’

পার্থবাবুর ওই মন্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে সরব হয়েছেন অনেক শিক্ষাবিদও। শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমান হওয়া উচিত বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। তবে বারবার কেন বিক্ষোভ হচ্ছে, সেই বিষয়টা ভেবে দেখা উচিত বলে মনে করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমিরেটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে থেকেই অশান্তি হচ্ছে। এটা খুবই চিন্তার কথা। কিন্তু এটাও ঠিক যে, পঠনপাঠনের দিক থেকে এগুলি আমাদের সব চেয়ে বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান। যে-সব শান্ত প্রতিষ্ঠানকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখানো হয়, সেখানে পঠনপাঠন, বিশেষ করে গবেষণা সেই পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। শ্রেষ্ঠ বিদ্যাচর্চার সঙ্গে শান্তিশৃঙ্খলা কী ভাবে মেলানো যায়, সেটাও আমাদের ভাবতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE