Advertisement
০৬ মে ২০২৪

পণ্যবাহী গাড়িতে যাত্রী, আঁধারে প্রশাসন

এক-দু’দিন নয়, টানা তিন বছর। আদতে পণ্যবাহী হয়েও যাত্রিবাহী হিসেবে যাতায়াত করছে বহু বাস। তা-ও আবার খোদ হাওড়া শহরে।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০৩:৪৮
Share: Save:

এক-দু’দিন নয়, টানা তিন বছর। আদতে পণ্যবাহী হয়েও যাত্রিবাহী হিসেবে যাতায়াত করছে বহু বাস। তা-ও আবার খোদ হাওড়া শহরে। পুলিশের দাবি, তারা বারবার বিষয়টি সম্পর্কে পরিবহণ দফতরকে জানিয়েছে। অথচ পরিবহণ দফতর জানাচ্ছে, তারা এ নিয়ে এত দিন সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিল।

অভিযোগ, সরকারি খাতায় এগুলির পরিচয় পণ্যবাহী গাড়ি। অথচ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে কলকাতায় নিয়মিত যাত্রিবাহী বাস হিসেবে যাতায়াত এদের। সূত্রের খবর, গত কয়েক বছর ধরে জেলা থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে কলকাতায় আসা বেসরকারি বাসের সংখ্যা বেড়েছে হু হু করে। আগে যেখানে দীর্ঘক্ষণ কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে দাঁড়িয়েও বাসের দেখা মিলত না, সেখানে এখন ব্যস্ত সময়েও কয়েক মিনিট অন্তর বিদ্যাসাগর সেতু টপকে রবীন্দ্রসদন এক্সাইড মোড় পর্যন্ত বাসের সংখ্যা প্রচুর।

অভিযোগ, অনিয়মটাও শুরু হয়েছে ঠিক এই জায়গা থেকেই।

হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধূলাগড়, ডোমজুড়, সাঁতরাগাছি থেকে এমন অনেক বাস চলে যাদের কোনও রুট পারমিট নেই। ফলে বাসের গায়েও রুট লেখা থাকে না। কন্ডাক্টরেরাও যাত্রীদের যে টিকিট দেন তাতে রুট লেখা থাকে না। সিটি পুলিশের দাবি, এই সব বাসে কোনও ভাড়ার তালিকা না থাকায় বেশি ভাড়া নিলেও যাত্রীদের কিছু করার থাকে না। অনেক সময়ে আবার এক একটি বাসের টিকিটে দু’তিনটি করে বাস নম্বর লেখা থাকে। ফলে যে বাস চলছে তার নম্বর লেখা টিকিটের বদলে অন্য টিকিট দিয়ে যাত্রীদের থেকে ভাড়া নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।

কিন্তু পুলিশ বাসগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না? কোনা এক্সপ্রেসওয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইসি (ট্রাফিক) সুব্রত নন্দী বলেন, ‘‘সাঁতরাগাছি স্টেশনের কাছে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা নিয়ে এই বেআইনি বাসগুলির সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের বহু বার গোলমাল হয়েছে। কেস দেওয়া হয়েছে। এই বাসগুলির তালিকা তৈরি করে পরিবহণ দফতরেও জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি।’’

অথচ জেলা পরিবহণ দফতর কর্তাদের দাবি, এত দিন তাঁরা এ নিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন। তবে পরিবহণ দফতরের এই দাবির পিছনে অন্য কারণ রয়েছে বলেই মত জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের। তাঁদের দাবি, হতে পারে শাসক দলের কোনও তাবড় মন্ত্রী-নেতাদের মদতেই ওই বাসরুট চালু হয়েছিল। আর তাই চোখে কালো কাপড় বেঁধে নিয়েছিল পরিবহণ দফতরও।

হাওড়া জেলা পরিবহণ দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘সম্প্রতি এই ধরনের বাসের কয়েকটা টিকিট পেয়ে আমরা পরীক্ষা করে দেখে অবাক হয়ে গেছি। গাড়ির নম্বর মিলিয়ে দেখেছি ওই রাস্তায় এমন অনেক বাস চলে যার রেজিস্ট্রেশন রয়েছে পণ্যবাহী গাড়ি হিসাবে। ওই সব গাড়িগুলিকে ভোটের পর আটক করা হবে।’’

জেলা পরিবহণ দফতরের চেয়ারম্যান তথা হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাশ বলেন, ‘‘রুট পারমিট ছাড়া বাস কী ভাবে চলছে তা বুঝতে পারছি না। আরটিও-র কাছে কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই। খবর নিয়ে দেখছি এ রকম বাস কত চলছে। তার পরে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

রুট পারমিট ছাড়াই যে অবৈধ ভাবে বাস চলে তা মেনে নিয়ছেন হাওড়া জেলা বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক সঞ্জীব পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের বাস সাঁতরাগাছি থেকে বেশি চলে। আমরা এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনকে জানিয়ে এসেছি। সর্বস্তরে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনও ভাবে কিছু করা যায় নি। প্রশাসনের কিছু লোকের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় এই বেআইনি কাজ হয়।’’

যদিও সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘আমরা প্রায়ই বাসগুলিকে কেস দিই। জরিমানা করি। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে যাত্রীদের সঙ্গে গোলমাল বেধে যায়। ফলে বাসমালিক পার পেয়ে যান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

santragachhi traffic administration freight cart
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE