Advertisement
E-Paper

‘প্রভাবশালীদের’ প্রশ্রয়ে বকলমে বহাল আয়া-রাজ

কেউ বার বার হন্যে হয়ে খাওয়ার জল চাইছেন। কেউ চাইছেন একটি বার কোনও মতে তাঁকে ধরে উঠিয়ে বসানো হোক। মলমূত্রে মাখামাখি হয়ে কেউ বা কাতর হয়ে ডেকে চলেছেন একটু পরিচ্ছন্ন হওয়ার আশায়। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই সাড়া নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩৪

কেউ বার বার হন্যে হয়ে খাওয়ার জল চাইছেন। কেউ চাইছেন একটি বার কোনও মতে তাঁকে ধরে উঠিয়ে বসানো হোক। মলমূত্রে মাখামাখি হয়ে কেউ বা কাতর হয়ে ডেকে চলেছেন একটু পরিচ্ছন্ন হওয়ার আশায়। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই সাড়া নেই। যাঁদের ডাকা হচ্ছে, তাঁরা কেউ ওয়ার্ডের বাইরে আড্ডায় মশগুল, কেউ বা ওয়ার্ডের ভিতরেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। অথচ দেখাশোনার জন্য ওঁরা রোগী পিছু টাকা নেন। কাগজে-কলমে ওঁদের কোনও অস্তিত্ব না থাকলেও এই আয়ারা সরকারি হাসপাতালেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আবার এঁদের ঘিরেই রোগীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। নানা ঘটনায় বার বার এঁদের দিকে আঙুল উঠলেও সরকারি হাসপাতাল থেকে এঁদের অস্তিত্ব লোপ করা যাচ্ছে না কিছুতেই।

বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে কথা বলে জানা গিয়েছে, এই আয়াদের পিছনে প্রায় সব ক্ষেত্রেই মদত থাকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের। আর সেই মদতেই বছরের পর বছর রমরমিয়ে চলে এই সিন্ডিকেট। তাই আয়াদের ঘাঁটানো মানেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের ঘাঁটানো। আর যেহেতু চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের ইউনিয়নের মাথায় রাজনৈতিক হাত থাকে, তাই এঁদের রমরমা কমানো যাচ্ছে না কিছুতেই।

স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করে নিচ্ছেন, সরকারি ভাবে যে পদের কোনও অস্তিত্বই নেই, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সেই পদেই বছরের পর বছর থেকে যাচ্ছ‌েন এই সব আয়ারা। শনিবার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক রোগিণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে ভাবে রবিবার আয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগে সোচ্চার হন রোগীর পরিজনেরা, তা যে কোনও সরকারি হাসপাতালেরই রোজনামচা বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। নানা ভাবে চাপ দিয়ে রোগীর পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন আয়ারা। কোনও কারণে পছন্দ অনুয়ায়ী টাকা না পেলেই চলে হুমকি, দাবড়ানি, এমনকী কখনও কখনও মারধরও।

শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার বাসিন্দা রেশমা বিবির প্রসবের পরে যখন তাঁর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, তখন শুশ্রূষার জন্য এক আয়া এক হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। টাকা না পেয়ে তিনি ট্রলি থেকে ধাক্কা মেরে রেশমাকে ফেলে দেন বলেও অভিযোগ। এর কিছু পরেই রেশমার মৃত্যু হয়।

অথচ, সরকারি হাসপাতালে আয়া ও স্পেশ্যাল অ্যাটেন্ড্যান্ট নিষিদ্ধ হয়েছে এক যুগেরও আগে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, ঘুরপথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় দাপটের সঙ্গেই হাসপাতালে থেকে গিয়েছেন আয়ারা। কিন্তু নিয়মের কোপ থেকে বাঁচতে নিজেদের আসল পরিচয় তাঁরা সামনে আনেন না। তাঁরা নিজেদের রোগীর বাড়ির লোক হিসেবে পরিচয় দেন। সরকারি হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে বাড়ির একজন লোক থাকার কথা, কিন্তু অনেকেরই তেমন লোকবল নেই। তাই রোগীর পরিজনেরাও অক্লেশেই আয়াদের নিজেদের বা়ড়ির লোক হিসেবে পরিচয় দেন।

প্রশ্ন উঠেছে, শনিবারের ঘটনার পরেও কি ছবিটা বদলাবে না? স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘যাঁরা থেকেও নেই, আবার না থেকেও আছেন, তাঁদের ধরা হবে কী করে? শাস্তি দেওয়ার জন্যও তো তাঁদের পদটাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। আমরা তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করছি ঠিকই, কিন্তু রোগীর বাড়ির লোকজনকেও সচেতন হতে হবে। নিজেরা রোগীর দায়িত্ব নিতে চান না বলে তাঁরাও আয়াদের দ্বারস্থ হন। প্রতিরোধটা সব দিক থেকেই দরকার।’’

Nursemaid Government Hospital Patients Facing Problems
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy