Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Pavlov Hospital

অনাদরে পড়ে রোগীর দেহ, অভিযুক্ত পাভলভ

সোমবার পাভলভের মৃত রোগীকে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পরে তাঁর মৃত্যু হয়।

মৃত রোগীর এই ছবি ঘিরেই সমালোচনা সোশ্যাল মিডিয়ায়।

মৃত রোগীর এই ছবি ঘিরেই সমালোচনা সোশ্যাল মিডিয়ায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:০০
Share: Save:

ওয়ার্ডের বাইরে পড়ে রোগীর দেহ। মুখ ঢেকে দেওয়া তো দূর, ক্যাথিটার পর্যন্ত খোলা হয়নি। দেহটি দেখে মানসিক হাসপাতালের অন্য আবাসিকেরা ভয় পেলেও কারও ভ্রূক্ষেপ নেই। পাভলভ হাসপাতালের এই ছবি ঘিরেই সমালোচনায় মুখর সোশ্যাল মিডিয়া।

মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ার ওই পোস্টে লেখা হয়েছিল, বছর তিরিশের যুবকের দেহ দীর্ঘক্ষণ ও ভাবে পড়ে ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর পরিচয় ছিল ‘ভবানীপুর টু আননোন’। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই যুবককে ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশে পাভলভে ভর্তি করে ভবানীপুর থানা। সেই থেকে তিনি ‘ভবানীপুর টু আননোন’ পরিচয়েই ছিলেন।

সোমবার পাভলভের মৃত রোগীকে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পরে তাঁর মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই রোগীকে চিকিৎসার জন্যে প্রায়ই ন্যাশনালে পাঠানো হত। সোমবার ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করে ফের পাভলভে পাঠান। মঙ্গলবার সকালে সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুন: বন্ধ ঘরে স্বামীর দেহ, পাশের ঘরে রক্তাক্ত স্ত্রী

পোস্টটিতে লেখা হয়েছে, ‘সকালে মৃত ঘোষণা সত্ত্বেও কেউ তাঁর দিকে ফিরেও তাকাননি।’ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদও দেহ সরানো হয়নি বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেহ কী ভাবে হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে রইল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মীরা। সম্প্রতি মানসিক হাসপাতালের রোগীদের প্রতি আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ওই হাসপাতালগুলির নার্সদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল স্বাস্থ্য ভবন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের মতে, মানসিক রোগীদের প্রতি আন্তরিক না হলে কোনও প্রশিক্ষণই যথেষ্ট নয়। একেই তো ওঁরা পরিবারের অনাদরের শিকার হন। মৃত্যুর পরেও সরকারি পরিকাঠামো যদি তাঁদের ন্যূনতম সম্মান না দেয়, তবে তো আর কিছুই বলার থাকে না বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: ফি বৃদ্ধি ঘিরে ক্ষোভ সাউথ পয়েন্টে

সমাজকর্মী শুক্লা দাস বড়ুয়ার মতে, পুলিশের মাধ্যমে যাঁরা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হন, তাঁদের ‘আননোন’ হিসেবেই ভর্তি করানো হয়। শুক্লার কথায়, ‘‘তবে পরে তিনি সুস্থ হলে তাঁর পরিচয়ের বদল ঘটানোর তাগিদ কারও থাকে না।’’

যাঁর ফেসবুক পোস্টে এই বিষয়টি সামনে আসে, সেই সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘এক জন মায়ের দেহ আগলে রাখলে তাঁর মনোরোগী হিসাবে চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু মৃত্যুর পরেও অনাদরে রোগীর দেহ ফেলে রাখার অসুখের চিকিৎসা কেন হয় না?’’ এ প্রসঙ্গে পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদের বক্তব্য, ‘‘এমন খবর জানা নেই।’’ হাসপাতালের আধিকারিকদের দাবি, দেহ ওয়ার্ডেই ছিল। পুলিশ ছবি তুলতে আসায় তা বার করা হয়েছিল। অনাদরে দেহ ফেলে রাখার অভিযোগ ঠিক নয়।

ইন্ডিয়ান সাইকায়াট্রিক সোসাইটির সম্পাদক চিকিৎসক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোনও অজুহাতেই এ ভাবে দেহ ফেলে রাখা যায় না। ওই রোগীর ঠিক মতো চিকিৎসা হয়েছিল কি না, তা-ও দেখা উচিত।’’ বস্তুত, মানসিক হাসপাতালের প্রশাসনে মনোরোগ চিকিৎসকেরা না থাকায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ রকম ঘটনা ঘটে থাকলে তা দুর্ভাগ্যজনক। ঠিক কী হয়েছিল খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pavlov Hospital Dead Body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE