Advertisement
E-Paper

‘শান্তির’ ভোট উৎসবে বোমা-বন্দুক-আঁশবঁটি

গাল জুড়ে নামা রক্তের ধারা শুকিয়ে গিয়েছে। সেই রক্ত ধুয়ে ফেলেননি উত্তর দমদমের নিমতা শ্রীনগরের বাসিন্দা, ৫৮ বছরের বাণীলতা বৈদ্য। বললেন, ‘‘শেষ রাতে ওরা আমার ছেলে-বৌমাকে মারতে এসেছিল। আমাকে রিভলভারের বাট দিয়ে মেরেছে। আমিও মাছ কাটার বঁটি দিয়ে ওদের এক জনের হাত কেটে দিয়েছি।’’

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫২
আহত বাণীলতা বৈদ্য।

আহত বাণীলতা বৈদ্য।

গাল জুড়ে নামা রক্তের ধারা শুকিয়ে গিয়েছে। সেই রক্ত ধুয়ে ফেলেননি উত্তর দমদমের নিমতা শ্রীনগরের বাসিন্দা, ৫৮ বছরের বাণীলতা বৈদ্য। বললেন, ‘‘শেষ রাতে ওরা আমার ছেলে-বৌমাকে মারতে এসেছিল। আমাকে রিভলভারের

বাট দিয়ে মেরেছে। আমিও মাছ কাটার বঁটি দিয়ে ওদের এক জনের হাত কেটে দিয়েছি।’’

বাণীলতার বাড়ির বারান্দা, উঠোন, এমনকী সামনের রাস্তাতেও রক্তের দাগ। সারা বাড়িতে কাচের টুকরো ছড়ানো। কেন তাঁর বাড়িতে হামলা হল?

বাণীলতার কথায়, ‘‘আমরা তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করেছি। তাই আমাদের শিক্ষা দিতে এসেছিল ওরা। আমরা কিন্তু ভয় পাইনি। সকালেই বুথে গিয়ে সবাই মিলে ভোট দিয়েছি।’’

বোমা-গুলি নির্বিচারে চলেছে গোটা দমদম এলাকায়। উত্তর দমদমের নবনগরে স্কুলের সামনে তিন রাউন্ড গুলি চলায় ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়ে গিয়েছিল সাতসকালেই। বুথের সামনে এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘যে ভাবে গুলি-গোলা চলছে, ভোট দিতে যেতে সাহস হচ্ছে না।’’ কিন্তু বুথের সামনে লম্বা লাইনে ওরা কারা? কাছে গিয়ে দেখা গেল, লাইনে দাঁড়ানো সবাই যুবক। বেশির ভাগের হাতেই ভোটার কার্ড নেই। প্রশ্ন ছিল, ‘‘ভোটার কার্ড ছাড়া কী করে ভোট দেবেন?’’ উত্তরে এক যুবক খিঁচিয়ে বললেন, ‘‘এখান থেকে ফুটুন তো! দেখছেন তো, শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে! এখানে অশান্তি করবেন না।’’

বুথের সামনে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন বিরোধী প্রার্থীরাও। উত্তর দমদমের প্রতাপগড় এলাকার বিজেপি প্রার্থী সঞ্জয় দাস তাঁর বাড়িতে বসে বললেন, ‘‘গত রাতে চার-পাঁচ জন যুবক মোটরবাইক জ্বালিয়ে দিয়ে গিয়েছে। শাসিয়ে গিয়েছে, ঘর থেকে বেরোলেই প্রাণে মারা হবে। এর পরে আর কী ভাবে বাড়ি থেকে বেরোই?’’ সঞ্জয়বাবুর বাড়ির সামনেই পড়ে রয়েছে তাঁর পুড়ে যাওয়া মোটরবাইকটি।

বেলা যত গড়াচ্ছে, দমদমের মধুগড়, এম সি গার্ডেন লেন থেকে শুরু করে বিরাটির নলতা— বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগের বন্যা আসতে থাকে। দমদমের সাত নম্বর ওয়ার্ডের নলতা মহাজাতি স্কুল বুথের সামনে দাঁড়িয়ে বিজেপি-র এজেন্ট খোকন কর চিৎকার করে বলছিলেন, ‘‘আমাদের মেরে বুথ দখল করে ফেলল!’’ চেঁচামেচি শুনে পুলিশ শুধু লাঠি নিয়ে সরিয়ে দিল সামনের জটলা। ততক্ষণে গলির মুখে চলে এসেছে আর এক দল বাইক-বাহিনী। তাদের সরায় কার সাধ্য! পুলিশও সরে গেল মুখ চুন করে।

দক্ষিণ দমদমের ক্লাইভ হাউসের সামনে বাইক-বাহিনীর দাপট নেই। কিন্তু বিরোধী সিপিএম বা বিজেপি-রও দেখা নেই সেখানে। গলির মুখে গাড়ি দাঁড়াতেই কয়েক জন যুবক বলে উঠলেন, ‘‘মিডিয়া এসেছে। সাবধান।’’ এক যুবক মিহি গলায় বললেন, ‘‘দাদা, কেন রোদে রোদে ঘুরছেন! একটু কোল্ড ড্রিঙ্ক খেয়ে যান।’’ নাগেরবাজারের ক্ষুদিরাম কলোনির একটি বুথের সামনে তৃণমূল ও সিপিএম-কর্মীদের বাদানুবাদের মধ্যেই আচমকা কেঁপে উঠল মাটি। কিছুক্ষণের জন্য দিশাহারা দু’পক্ষই। ভূমিকম্পের রেশ কেটে যেতেই ফের শুরু হয়ে গেল তাদের গোলমাল।

ভূমিকম্পের পরে বৃষ্টি নামতে দমদমের অনেকগুলি বুথ আরও ফাঁকা হয়ে যায়। বাঙুরের বয়েজ স্কুলের সামনে এমন একটি ফাঁকা বুথের সামনেই পৌনে তিনটে নাগাদ দু’টো বোমা পড়ে। ধোঁয়া ভালো করে কাটার আগেই বুথের মধ্যে ঢুকে পড়ে একদল যুবক। আর একটি ফাঁকা বুথ, লেকটাউন গার্লস কলেজে ভোট দিতে এসেছিলেন প্রশান্ত সাহা। ভোটকর্মীরা জানালেন, তাঁর ভোট পড়ে গিয়েছে। প্রশান্তবাবু বুথ থেকে বেরিয়ে গেলেও ইভিএমে তখনও ভোট পড়ার শব্দ হয়েই যাচ্ছে।

তবে ভোটারেরা বা বিরোধীরা যা-ই বলুন, এলাকার বিধায়ক ব্রাত্য বসু ও সাংসদ সৌগত রায় বিমানবন্দরের এক নম্বর গেটে একটি তৃণমূল অফিসে বসে বলে দিলেন, ‘‘গণতন্ত্রের উৎসব হল।’’

north dumdum vote violence birati poll violence aryabhatta khan dumdum poll violence vote festival
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy