Advertisement
E-Paper

জ্বালা জুড়োতে ঝড়বৃষ্টির জন্য হাপিত্যেশ শহরবাসীর

এপ্রিলকে ‘নিষ্ঠুরতম’ মাস আখ্যা দিয়েছেন কবি। কিন্তু টি এস এলিয়টের সেই ‘রোম্যান্টিকতা’র লেশমাত্রও নেই কলকাতার গরমে। বরং এপ্রিল এখানে আক্ষরিক অর্থেই নিষ্ঠুর! এ বছর এপ্রিল ‘সাবালক’ হতেই তার নিষ্ঠুরতা বেড়ে গিয়েছে এ শহরে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪৩
আনন্দ: গরমে আইসক্রিমেই মজা খুদে পড়ুয়াদের। বুধবার, লেনিন সরণিতে।  ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

আনন্দ: গরমে আইসক্রিমেই মজা খুদে পড়ুয়াদের। বুধবার, লেনিন সরণিতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বিকেলের আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা দেখেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন নগরবাসী। কিন্তু সেই আশা বৃথা হয়ে গেল! ‘আসি আসি’ করেও বুধ-সন্ধ্যায় শেষমেশ এল না কালবৈশাখী!

এপ্রিলকে ‘নিষ্ঠুরতম’ মাস আখ্যা দিয়েছেন কবি। কিন্তু টি এস এলিয়টের সেই ‘রোম্যান্টিকতা’র লেশমাত্রও নেই কলকাতার গরমে। বরং এপ্রিল এখানে আক্ষরিক অর্থেই নিষ্ঠুর! এ বছর এপ্রিল ‘সাবালক’ হতেই তার নিষ্ঠুরতা বেড়ে গিয়েছে এ শহরে।

তীব্র গরম আর বাড়তি আর্দ্রতায় নাকাল হচ্ছেন কলকাতার মানুষজন। কখনও ছিটেফোঁটা বৃষ্টি, দমকা হাওয়া মিলছে বটে। কিন্তু তাতে জ্বালা জুড়োচ্ছে কই! মঙ্গলবার তো রীতিমতো কাঁদিয়েই ছেড়েছিল গরম। কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে!

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বুধবার অবশ্য পারদ সামান্য হলেও নেমেছে। আলিপুরের হাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ দিন শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু আংশিক মেঘলা আকাশ এবং বাড়তি আর্দ্রতায় ঘেমেনেয়ে একশা হতে হয়েছে নগরবাসীকে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলছেন, ‘‘বঙ্গোপসাগরে একটি উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয়েছে। তার জেরেই জোলো বাতাস ঠেলে গাঙ্গেয় বঙ্গের পরিমণ্ডলে ঢুকছে। তাই এমন আর্দ্রতার বাড়াবাড়ি।’’

কারণ যা-ই হোক, ভ্যাপসা গরমের জেরে সকাল থেকেই হাপিত্যেশ করছিলেন নিত্যযাত্রীরা। সাতসকালের ট্রেনে যেতে যেতেই কার্যত ঘামে স্নান করেছেন অনেকে। বেলা যত গড়িয়েছে, অস্বস্তির মাত্রাও চড়েছে। দরদরিয়ে ঘামতে ঘামতে শরীরে জলের অভাবও অনুভূত হয়েছে। তেষ্টা মেটাতে নরম পানীয় কিংবা সরবত, লস্যিতে গলা ভিজিয়েছেন অনেকে।

হাওয়া অফিসের খবর, দুপুরে রেডারচিত্রে গাঙ্গেয় বঙ্গের আকাশে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু মেঘ পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের সীমানা পেরিয়ে এ দিকে আসতে পারেনি। তার পরে ছুটকো কিছু মেঘ রেডারচিত্রে ধরা পড়লেও বৈশাখী ঝড় বইয়ে দেওয়ার সাধ্য তাদের ছিল না। তাই কাজ থেকে ফেরার পথেও ট্রেনে, বাসে কষ্ট সইতে হয়েছে মানুষজনকে।

দিল্লির মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, এপ্রিলে ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। এপ্রিল মাসে আকছারই ৩৯-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছে শহরে। গত বছর দশেকের হিসেবে ২০০৯, ২০১৪, ২০১৬— এই তিন বছর এপ্রিলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কোঠা পেরিয়েছিল। ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল কলকাতার তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১.৩ ডিগ্রিতে। সেটাই এক দশকে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ! হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, ১৯৫৪ সালের ২৫ এপ্রিল মহানগরে দিনের তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩.৩ ডিগ্রিতে। সেটাই এখনও পর্যন্ত এপ্রিলের রেকর্ড গরম!

রেকর্ড আপাতত দূরে থাক, এমন অস্বস্তিকর গরম থেকে রেহাই কবে মিলবে, সেই প্রশ্নই মুখে মুখে ঘুরছে। আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা কিন্তু আশ্বাসবাণী শোনাচ্ছেন। গণেশবাবু বলছেন, বাতাসে বাড়তি জলীয় বাষ্প রয়েছে। তার সঙ্গে তাপমাত্রা মাথাচাড়া দিলেই বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই মেঘই বয়ে আনতে পারে বৈশাখী ঝড়। তাঁর পূর্বাভাস, আজ, বৃহস্পতিবার ঝড়বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জ্বালা ধরানো গরম সয়ে আপাতত সেই কালবৈশাখীর আশাতেই রয়েছে মহানগর!

Heat Storm Rain Weather
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy