ব্যাঙ্কের সামনে অপেক্ষা। মঙ্গলবার, সল্টলেকে। — নিজস্ব চিত্র
সোমবার বন্ধ ছিল সব ব্যাঙ্ক। অনেকের আশা ছিল, এক দিন বিশ্রামের পরে ব্যাঙ্কে গেলে ভোগান্তি হয়তো কিছুটা কমবে। বেশিক্ষণ লাইন দিতে হবে না। ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত টাকা মজুত থাকায় হেনস্থা হতে হবে না গ্রাহকদের।
কিন্তু কোথায় কী? রাষ্ট্রায়ত্ত হোক বা বেসরকারি— ব্যাঙ্কে গিয়ে মানুষের হয়রানি কিন্তু কমল না মোটেই। মঙ্গলবার দু’হাজার টাকার নোটের জোগান বাড়লেও মুখে হাসি ফুটল না অধিকাংশেরই। এ এক নতুন অশান্তি। কবে এই হয়রানি কমবে, তার নির্দিষ্ট ভাবে বলতে না পারলেও কোনও কোনও ব্যাঙ্ক কিন্তু গ্রাহকদের আশ্বাসবাণী শুনিয়েছে। বলেছে, আজ, বুধবার থেকে ৫০, ১০০ টাকার নতুন নোট ঢুকবে ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে। ৫০০ টাকা এই এল বলে! এক সপ্তাহ পরেও কেনই বা ব্যাঙ্কগুলি মানুষের চাহিদা মেটাতে পারল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রাহকেরা।
এ দিন দুপুরে গড়িয়ায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এলেন সত্তরোর্ধ্ব এক প্রবীণ। মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। সকাল থেকে দীর্ঘ ক্ষণ লাইন দিয়ে টাকা তোলা হয়েছে তাঁর। দশ হাজার। তবে পুরোটাই গোলাপি রঙের। পাঁচটা দু’হাজারি নোট। ‘‘শ’খানেক টাকার ওষুধ এখনই দরকার। কোনও দোকানে ভাঙিয়ে দেবে না এত বড় নোট। হাতে এত টাকা আছে, তা-ও অসহায় লাগছে,’’ বললেন ওই বৃদ্ধ।
এরই ঠিক উল্টো ছবি তখন অফিস পাড়ায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে। এক ব্যক্তি বেরিয়ে এলেন, হাতে চারটে প্যাকেট। প্রতিটিতে একশোটা করে পাঁচ টাকার কয়েন। দু’হাজার টাকা তুলেছেন তিনি। ব্যাঙ্ক থেকে প্রথমে দু’হাজারি নোট দেওয়া হয়েছিল। ভাঙানো সম্ভব নয় বলে নিতে চাননি। কিন্তু পাঁচশো-একশোর নোট নেই। অগত্যা পুরোটাই কয়েনে!
মানুষ ভুগেছেন অন্য ভাবেও। এ দিন ভোর থেকেই বালি-বেলুড়ের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গেটের সামনে নোটিস পড়েছে, ‘‘পাঁচশো-হাজারের নোট বদল হবে না।’’ নোট বদল কেন হবে না? বালির এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বললেন, ‘‘সবাইকে নোট বদলে দিতে গিয়ে নিজের ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরাই বঞ্চিত হচ্ছেন। তা ছাড়া টাকার জোগানও কম। তাই আপাতত বদল বন্ধ থাকছে।’’ ট্যাংরা এলাকাতেও একই অভিযোগ। লাইনে দাঁড়ানো মানুষজনের অভিযোগ, নিজেদের গ্রাহক ছাড়া অন্য কারও পুরনো নোট নিচ্ছে না ব্যাঙ্ক।
দুপুর সাড়ে তিনটে। এন্টালি বাজার সংলগ্ন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মীরা জানালেন, চারটেয় বন্ধ হয়ে যাবে ব্যাঙ্ক। সঙ্গে সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিকেল পৌনে চারটে থেকে চারটে পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করেন গ্রাহকেরা। পরে পুলিশ গিয়ে গ্রাহকদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। কলেজ স্ট্রিট ও শ্যামবাজার এলাকাতেও কয়েকটি ব্যাঙ্ক সা়ড়ে তিনটে-চারটের মধ্যে ঝাঁপ ফেলেছে। এক ব্যাঙ্ককর্মীর দাবি, নোটের জোগান পর্যাপ্ত নয়। সময় ফুরোনোর আগেই ফুরিয়ে যাচ্ছে টাকা।
বিধান সরণির রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আবার প্রবল চেঁচামেচি। চেক ভাঙাবেন বলে ব্যাঙ্কে ঢুকলেও টাকা বদলে বেরিয়ে আসছেন অনেকে। লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহকদের ব্যাঙ্কে ঢুকতে দেরি হচ্ছে। মানিকতলায় ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়ানো এক ব্যক্তির অভিযোগ, সকাল ১০টা থেকে দাঁড়িয়েও দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সাড়ে চার ফুটের বেশি এগোতে পারেননি। অভিযোগ, নিরাপত্তারক্ষীকে ‘ম্যানেজ’ করে বেলাইনে ঢুকে যাচ্ছেন অনেকে।
কেন্দ্রের ঘোষণা থাকলেও প্রতিবন্ধী কিংবা প্রবীণ নাগরিকদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি অনেক ব্যাঙ্কই। প্রবীণ এবং প্রতিবন্ধী নাগরিকদের জন্য ব্যাঙ্কে আলাদা লাইন করা হবে বলে ঘোষণা করেছিল দিল্লি। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হচ্ছে কোথায়? চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে মহাত্মা গাঁধী মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। ৮৫ বছরের সঙ্গীতা বশিষ্ঠ টাকা জমা দিতে এসেছিলেন। ব্যাঙ্কের গেটের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকে আলাদা লাইনের কথা বলতেই তাঁরা জানিয়ে দেন, একটাই লাইন। টাকা জমা বা তুলতে হলে তাতেই দাঁড়াতে হবে।
ব্যাঙ্ক অব বরোদার কলেজ স্ট্রিট শাখায় সকাল ৮টা থেকে লাইন দিয়েছিলেন গিরিশ পার্কের বাসিন্দা নিরুপম সোম। সকাল ১১টা নাগাদ ব্যাঙ্কের দরজার কাছাকাছি পৌঁছলেও হঠাৎই ঘোষণা করা হল, ব্যাঙ্কে টাকা নেই, তাই বদল করা হবে না। শুধু অ্যাকাউন্ট থাকা গ্রাহকেরা টাকা জমা করতে পারেন। শুনেই কাঁদো কাঁদো অবস্থা নিরুপমবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘অফিসের দেরি করে টাকা তুলতে এলাম। এ ভাবে আর কত দিন কাজের ক্ষতি করে সময় নষ্ট করব বলুন তো।’’
একই অবস্থা ওই শাখায় আসা আর এক গ্রাহক সুরজিৎ হেমব্রমেরও। তাঁর কথায়, ‘‘এই টাকা তোলার ঝামেলায় তো কাজকর্ম, ব্যবসার রীতিমতো ক্ষতি হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy