Advertisement
২০ মে ২০২৪
gas cylinder burst

‘বাড়ির লোকের মুখে কী করে দুটো খাবার তুলে দেব’

অন্যান্য দিন দ্বিজকরবাবু রাতে দোকানেই ঘুমোন। শুক্রবার দোকানের কাজ তাড়াতাড়ি মিটে যাওয়ায় রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন।

মরিয়া: পোড়া ধ্বংসস্তূপ থেকে শেষ সম্বলটুকু খোঁজার চেষ্টা। । শনিবার, সুভাষনগর রেল বাজারে।

মরিয়া: পোড়া ধ্বংসস্তূপ থেকে শেষ সম্বলটুকু খোঁজার চেষ্টা। । শনিবার, সুভাষনগর রেল বাজারে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৭
Share: Save:

ঝলসানো আনাজ, আধপোড়া মাছ, আগুনের তাপে তুবড়ে যাওয়া রেফ্রিজারেটর আর চার দিকে ছড়িয়ে থাকা ছাই। কটু গন্ধে শীতের সকালের বাতাস ভারী। ছাইয়ের গাদায় বসে ছিলেন মধ্যবয়সি মিনু মল্লিক। শূন্য দৃষ্টি। তাঁর চার দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কিছু তোবড়ানো বাসনপত্র, ফেটে যাওয়া সিলিন্ডার।
দত্তপুকুরের বাসিন্দা মিনু আর তাঁর স্বামী দ্বিজকর মল্লিক সুভাষনগর রেল বাজারে মিষ্টির দোকান চালাতেন। শুক্রবার রাতের আগুনে সর্বস্ব পুড়ে গিয়েছে তাঁদের।

অন্যান্য দিন দ্বিজকরবাবু রাতে দোকানেই ঘুমোন। শুক্রবার দোকানের কাজ তাড়াতাড়ি মিটে যাওয়ায় রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। দোকানে থাকলে কী হত, নিজেও জানেন না। প্রাণরক্ষা পাওয়ায় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেবেন, না কি লকডাউনের পরে ঋণ নিয়ে নতুন করে দোকানটি দাঁড় করানোর স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়ায় কপাল চাপড়াবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তিনি! শনিবার সকালে কয়েকশো মিষ্টি সরবরাহ করার কথা ছিল তাঁর। শুক্রবার রাতে সেই মিষ্টি তৈরি করে দোকানে তালাবন্ধ করে বাড়ি গিয়েছিলেন। এ দিন সকালে দমকল সরে যেতেই দোকানে হামলে পড়েছিলেন মিনুদেবী। একটি গামলায় তখনও কয়েকটি
রসগোল্লা ভাসছে।

মিনুদেবী বলেন, “লকডাউনে ব্যবসা বন্ধ থাকায় জমানো টাকাও শেষ হয়ে যায়। লকডাউন শিথিল হলে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে দোকানটাকে ফের দাঁড় করানোর চেষ্টা শুরু করেছিলাম। দোকান তো গেলই, এখন ঋণ কী করে শোধ করব?” শুধু মিনু মল্লিক নন, পুড়ে যাওয়া রেল বাজারে ধোঁয়ার পাশাপাশি বাতাসে পাক খাচ্ছে ব্যবসায়ীদের হাহাকারও। ছাই খুঁড়ে খুঁড়ে দেখছেন দোকানিরা, যদি কিছু পাওয়া যায়।

বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক জগন্নাথ দাসের মাছের ব্যবসা। শুক্রবার আড়ত থেকে মাছ কিনে এনে মজুত করেছিলেন। একটা ফ্রিজার ছিল। ছিল তাপ-রোধক কয়েকটি বাক্সও। আগুনে সব গিয়েছে। কয়েকটি আধপোড়া মাছ ছাই থেকে তুলে সরিয়ে রাখছিলেন তিনি। তাঁরও অবস্থা মিনুদেবীর মতো। বললেন, “লকডাউনে আমাদের কোমর ভেঙে গিয়েছিল। তার পরে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। সব গেল।” মাছ ব্যবসায়ী সুজিত মজুমদার বলেন, “এখন একটা প্লাস্টিক পেতে যে ব্যবসা করব, সেই সামর্থ্যও নেই। দোকানে রাখা টাকাও পুড়েগিয়েছে। একটা দাঁড়িপাল্লা কেনারও ক্ষমতা নেই।”

আনাজ বিক্রেতা দ্বিজেন মাজি ছাই সরিয়ে একটা লাঠি দিয়ে এক মনে কী যেন খুঁজেই চলেছেন। চার দিকে ছড়িয়ে ঝলসে যাওয়া ফুলকপি, বেগুন, আলু। তিনি বলেন, “দেখছি যদি বাটখারা ক’টা পাওয়া যায়। তা হলে অন্তত একটা দাঁড়িপাল্লা জোগাড় করে দুটো আলু-বেগুন নিয়ে রাস্তার পাশে বসতে পারব। না হলে বাড়ির লোকের মুখে কী করে দুটো খাবার তুলে দেব!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gas cylinder burst
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE