Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Scene for changing notes

সঙ্গে সচিত্র পরিচয় পত্র, প্রাতর্ভ্রমণ সেরে সোজা ব্যাঙ্কে

প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ধাতস্থ হয়েছেন সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে বাতিল হয়েছে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। অসুবিধা মেনে নিতে হবে, এটা আত্মস্থ করে এ বার নোট-বদলের পালায় ব্যস্ত হয়েছেন শহরবাসি।

নোট পাল্টাতে সকাল থেকেই ছিল লম্বা লাইন। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নোট পাল্টাতে সকাল থেকেই ছিল লম্বা লাইন। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ১৮:২৩
Share: Save:

প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ধাতস্থ হয়েছেন সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে বাতিল হয়েছে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। অসুবিধা মেনে নিতে হবে, এটা আত্মস্থ করে এ বার নোট-বদলের পালায় ব্যস্ত হয়েছেন শহরবাসি।

বুধবার ব্যাঙ্ক পরিষেবা বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার থেকে বাতিল ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বদল করা শুরু হল। কোথাও নোট বদল করার পরে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের মুখে যুদ্ধ জয়ের হাসি দেখা গেল। কোথাও আবার ‘টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায়’ দিনভর অপেক্ষা করাই বৃথা হল। শহর জুড়ে এই জটিল পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাঙ্কগুলি যেমন সাধারণ মানুষের সঙ্গে সহযোগিতার পথে হাঁটার চেষ্টা করলেন, তেমনই সাধারণ মানুষ দিনভর ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিলেন।

প্রাতর্ভ্রমণ শেষে গন্তব্য বাড়ি নয়:

টাকা বদলের জন্য সকাল-সকাল লাইন দিতে হবে। তাই প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে বাড়ি না ফিরে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ব্যাঙ্কের সামনে। এ দিন সকালে দমদমের বাসিন্দা অজয় চক্রবর্তী প্রাতর্ভ্রমণে যাওয়ার সময় চাদরের সঙ্গে নিয়েছিলেন আধার কার্ড, সচিত্র প্রমাণ পত্রের ফটোকপি, আর হাজার চারেক টাকার একটা ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিল। এ দিন আর প্রাতর্ভ্রমণ সেরে বাড়ি ফেরেননি। বাজারমুখো না হয়ে পাড়ার দোকান থেকে চা আর বিস্কুট খেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। সকাল তখন সাড়ে আটটা। অজয়বাবুর কথায়, ‘‘সকাল-সকাল লাইন দিলাম। বেশি বেলা হলে যদি টাকা ফুরিয়ে যায়। আজ টাকা বদল না হলে খুব সমস্যা হবে।’’ অজয়বাবুর মতো অনেকেই ভোরবেলায় ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়েছেন। টাকা ‘ফুরিয়ে’ যাওয়ার আশঙ্কাতেই সাতসকালে লাইনে দাঁড়ানো এমনটাই জানিয়েছেন বেশির ভাগ মানুষ। উত্তর শহরতলির ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের সামনে তখন পনেরো জনের লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছে। মিনিট চল্লিশ পরেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল প্রায় একশোর কাছে।

‘বয়স হয়েছে, তাই দেরি সইবে না।’:

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তাও বেড়েছে। টাকা বদলের জন্য আগামী ৪৯ দিনের জন্য অপেক্ষা করতে পারেননি। সকাল-সকাল তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বহু প্রবীণ মানুষের পেনশন অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ফলে মাসের প্রথমে যাঁরা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলেছিলেন মঙ্গলবার ৫০০, ১০০০ টাকার নোট অচল হয়ে যাওয়ায় তাঁরা বিপদে পড়েছিলেন। লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা ৭০ বছরের দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পেনশনের টাকা কটাই ভরসা। তাই সেগুলো সময় মতো হাতে না পেলে ভাত জোটানোই মুশকিল হয়ে যাবে। তাই দেরি করিনি। আজই চলে এসেছি টাকা বদল করতে।’’

লাইনে আছি, অফিসে নেই:

টাকা লেনদেনের কাজ সারতে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন অনেকেই। বহু সরকারি দফতরেই এ দিন ছুটির মেজাজ। নেতাজি নগরের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে টাকা বদল করতে গিয়ে অফিস যাত্রা বাতিল করতে হল অর্পিতা রায়কে। তিনি বলেন, ‘‘টাকা না বদলালে একটা দিনও চলতো না। তাই বাধ্য হয়েই ছুটি নিয়ে টাকা বদলাতে এলাম।’’

গ্রাহকেরা নয়, সকাল থেকে হাজির ওঁরাও:

এ দিন ব্যাঙ্কের সামনে যেমন সকাল থেকেই গ্রাহকদের ভিড় ছিল, তেমনই নিরাপত্তা রক্ষীর সংখ্যা ছিল অন্য দিনের তুলনায় বেশি। তাঁরাও লাইন সামাল দিতে সকাল ১০টার আগে হাজির হয়ে যান। শুধু লাইন সামাল দেওয়াই নয়। ব্যাঙ্কের সামনে অসুস্থ ও বয়স্ক গ্রাহকদের যাতে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না হয় তার জন্য সল্টলেকের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়। ব্যাঙ্কের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অলিখিত হেল্প ডেস্ক খুলে ফেলেন বিভিন্ন শাখার নিরাপত্তা রক্ষীরা। ব্যাঙ্কে ঢোকার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকদের টাকা জমা দেওয়া, টাকা বদলানোর ফর্ম হাতে তুলে দেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। নিউ আলিপুরের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক নিরাপত্তা রক্ষীর কথায়, ‘‘গতকাল আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে ব্যাঙ্কের সামনে ডিউটি দিতে হবে। তাই সময় মতো হাজির হয়ে গিয়েছি।’’

উর্দিধারিদের নজরদারি:

শহরের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও ব্যাঙ্কের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের টহলদারি চোখে পড়েছে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কখনও বাইকে, কখনও বা টহলদারি গাড়িতে করে নজরদারি চলেছে দিনভর।

বেলা বাড়তেই টাকা শেষ!

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কের বহু শাখায় একশো টাকার নোট শেষ হয়ে যায়। পরিষেবা সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হয়। যেমন যোধপুর পার্কের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় সকাল এগারোটা নাগাদ টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় লেনদেনের পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়। যদিও ঘণ্টা খানেক পরে একটি গাড়ি করে ব্যাঙ্কে টাকা আসে। ফের শুরু হয় লেনদেন। নেতাজি নগরের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় পৌনে ১২টা নাগাদ টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ব্যাঙ্কের লেনদেন। ব্যাঙ্কের সামনে তখন দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েকশো গ্রাহক। বাধ্য হয়েই তাঁরা বাড়ি ফিরে যান। আড়াই ঘণ্টা পরিষেবা বন্ধ থাকার পরে টাকা এলে ফের ব্যাঙ্কে লেনদেন চালু হয়। বেলা সাড়ে ১২টার পর বহু ব্যাঙ্কের শাখার ম্যানেজাররাই জানিয়ে দেয়, ৫০০, ১০০০-র বদলে নতুন টাকা পাওয়া যাবে না। কেবল মাত্র বাতিল টাকা জমা দেওয়া যাবে। ফলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর অনেককেই বিফল মনোরথে ফিরে আসতে হয়। যেমন ব্রডস্ট্রিটের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে টাকা লেনদেন না করেই ফিরে যেতে হয় সৌগত মুখোপাধ্যায়কে। তাঁর কথায়, ‘‘অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সকালে এসে টাকা বদলানোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ নিরাপত্তা রক্ষী এসে বলছে টাকা শেষ। সারাদিনের খাটুনিটাই বেকার।’’ তারাতলা, দেশপ্রিয় পার্ক ইত্যাদি বহু জায়গায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট না থাকলে লেনদেন হবে না। যার জেরে সমস্যায় পড়েন বহু গ্রাহক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Black Money New Currency
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE