Advertisement
০৮ মে ২০২৪

নবমীতে দুর্ঘটনা, ফের সামনে এল পুলিশের ‘তোলাবাজি’

রোগ সারছে না! পথ দুর্ঘটনার পিছনে ফের পুলিশের বিরুদ্ধে গাড়ি থামিয়ে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠল। সোমবার, নবমীর দুপুরে উত্তর শহরতলির শরৎ কলোনির কাছে বিরাটি ও বিমানবন্দরের মাঝামাঝি যশোর রোডের ঘটনা।

অষ্টমীর রাতে সল্টলেকে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি। — নিজস্ব চিত্র

অষ্টমীর রাতে সল্টলেকে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৯
Share: Save:

রোগ সারছে না! পথ দুর্ঘটনার পিছনে ফের পুলিশের বিরুদ্ধে গাড়ি থামিয়ে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠল। সোমবার, নবমীর দুপুরে উত্তর শহরতলির শরৎ কলোনির কাছে বিরাটি ও বিমানবন্দরের মাঝামাঝি যশোর রোডের ঘটনা।

যে গাড়ি থামিয়ে পুলিশ ঘুষ চেয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে, তার চালক গাড়ি থেকে নামতেই পিছন থেকে একটি ছোট লরি ধাক্কা মারে তাঁকে। গুরুতর জখম অবস্থায় কৌশিক বসাক (২০) নামে ওই যুবক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার পরে এলাকার মানুষ প্রায় ৪৫ মিনিট ওই তল্লাটে পথ অবরোধ করেন। ফলে পুজোর দিনে ঠাকুর দেখতে বেরোনো মানুষের ভিড় যখন শুরু হচ্ছে, তখন যশোর রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বহুক্ষণ যানজটের কবলে পড়ল। তুমুল যানজট হয় ভিআইপি রোডেও। পরে পুলিশ অবশ্য লড়িটিকে আটক করে। গ্রেফতার করা হয় লরিচালককে।

এ বছর জানুয়ারিতে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একটি লরির ধাক্কায় একই পরিবারের চার শিশুর মৃত্যুর পিছনে পুলিশের ঘুষ চাওয়ার দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল। ঘুষ না দিয়ে লরিটি চলে যাওয়ায় তাকে তাড়়া করেছিল পুলিশের একটি গাড়ি এবং পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে চালক দ্রুত চালানোর ফলেই দুর্ঘটনা ঘটে, এমনই অভিযোগ উঠেছিল তখন।

সোমবারের ঘটনাস্থল বিধাননগর কমিশনারেটের অধীনে। এ দিন পুলিশ অবশ্য ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ সরকারি ভাবে অস্বীকার করছে। ডিসি (ট্রাফিক) সি সুধাকরণের দাবি, ‘‘কেউ চালকের থেকে ঘুষ চায়নি। গাড়িটি সিগন্যাল ভেঙেছিল। তাই কর্তব্যরত পুলিশ গাড়িটি থামায়।’’ প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকার মানুষ, পুলিশের একাংশ এবং গাড়ির আরোহীরা অবশ্য সে কথা মানছেন না। তবে সত্যিই ঘুষ চাওয়া হয়েছিল কি না, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

যে গাড়িকে পুলিশ থামিয়েছিল, সেটি একটি টাটা সুমো। কলকাতার বাসিন্দা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় সেটি ভাড়া নিয়েছিলেন পুজো উপলক্ষে। ঠাকুর দেখার পরে মধ্যমগ্রাম থেকে ওই গাড়িতে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন অরিন্দমবাবু ও তাঁর পরিবার। তখনই ঘটনাটি ঘটে। গাড়ির আরোহীদের অভিযোগ, শরৎ কলোনির কাছে ট্রাফিক পুলিশ তাঁদের গাড়িটি দাঁড় করায়। গাড়ির চালক সিগন্যাল মানেননি, এই দাবি করে তাঁর থেকে ২০০ টাকা ঘুষ চায় পুলিশ। ওই পরিবারটির অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশ যখন চালক কৌশিককে গাড়ি থেকে নামায় তখন পিছন থেকে দ্রুত বেগে আসা একটি ছোট লরি তাঁকে ধাক্কা মেরে পালায়। রাস্তায় ছিটকে পড়েন কৌশিক। তখন দুপুর ১২টা।

অরিন্দমবাবুর দাবি, কোনও ভাবেই তাঁদের চালক সিগন্যাল ভাঙেননি। উল্টে তাঁর অভিযোগ, পুলিশ ওই চালককে রীতিমতো হুমকি দেয়। তাঁর কথায়, ‘‘শরৎ কলোনির সামনে ট্রাফিক পুলিশের গুমটি থেকে পুলিশ নেমে এসে গাড়িটি থামায়। ওরা গাড়ির চালককে বলেন, তুই সিগন্যাল ভেঙেছিস। দু’শো টাকা দে। না হলে পুজোর দিন মারধর খাবি। গাড়ি থানায় নিয়ে যাব।’’ এ কথা বলে চালককে নামতে বলে পুলিশ আর কৌশিক নামতেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

তার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। সাড়ে ১২টায় পথ অবরোধ শুরু হয়। পরে বিমানবন্দর থানার আইসি প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। তবে তার জেরে যানজট থাকে আরও বেশ কিছুক্ষণ। দুর্ঘটনা ঘটানো ছোট লরিটিকে পরে বিমানবন্দরের ১ নম্বর গেটের কাছে আটক করা হয়, পুলিশ গ্রেফতার করে চালক শম্ভু গুড়িয়াকে।

পুলিশেরই একটি সূত্রের খবর, ঘটনাটির জন্য দায়ী তিন সিভিক ভলান্টিয়ার, যাঁরা সে সময়ে গাড়ি থামিয়ে চালককে নামান। ওই ঘটনার পরে সিভিক ভলান্টিয়ারদের কারও কারও আচরণ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশের একাংশও। এক কর্তার কথায়, ‘‘শুধু সোমবারের ঘটনা নয়, সিভিক ভলান্টিয়ারদের অনেকেই রাস্তায় নেমে বাড়াবাড়ি করেন। লাঠি উঁচিয়ে তাঁরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে অভব্য ব্যবহারও করছেন।’’

এ দিকে রবিবার, অষ্টমীর রাতে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হলেন চার যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের পিছনে। পুলিশ জানায়, বেপরোয়া ভাবে চলছিল গাড়িটি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি ইন্দিরা ভবনের পিছনের দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা মারে। আহতদের তিন জন নার্সিংহোমে ভর্তি। এক জনকে পুলিশ নিয়ে যায় এনআরএসে। পুলিশের দাবি, ওই গাড়ির ভিতর থেকে মদের বোতল মিলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Extortion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE