Advertisement
০৬ মে ২০২৪
হতবাক পুলিশই

বড়বাজারের ব্যবসায়ী খুনেও কি ‘বব বিশ্বাস’

বিস্ময়ের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। এক সময়ে কলকাতা ও শহরতলির এক ওস্তাদ বন্দুকবাজ সুপারি কিলারের কীর্তিকলাপের খোঁজ নিতে গিয়ে চমকে উঠছে কলকাতা পুলিশ।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৪৫
Share: Save:

বিস্ময়ের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। এক সময়ে কলকাতা ও শহরতলির এক ওস্তাদ বন্দুকবাজ সুপারি কিলারের কীর্তিকলাপের খোঁজ নিতে গিয়ে চমকে উঠছে কলকাতা পুলিশ। ঘোর কাটছে না তাঁদের। কারণ, গোয়েন্দা অফিসারদের একাংশ এখন জানতে পারছেন, শুধু বি বা দী বাগ তল্লাটে এক পার্সি মহিলাকে নয়, বড়বাজারে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে খুনও একই ভাড়াটে খুনির কীর্তি। বাস্তবের সেই বব বিশ্বাস!

লালবাজার সূত্রের খবর, নিহত ওই ব্যবসায়ীর নাম লক্ষ্মীনারায়ণ রাঠি। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিক্রি করতেন তিনি। ২০০১ সালের ১১ জুলাই সন্ধ্যায় এজরা স্ট্রিটের দোকান বন্ধ করে মধ্যবয়স্ক ব্যবসায়ী বাড়ি ফিরছিলেন। তখনই তাঁর উপরে গুলি চলে।

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, সে বছরই ২৯ জুন সকালে আরএন মুখার্জি রোডে পার্সি মহিলা নওয়াজ এরুচশা ওয়াদিয়াকে বিদ্ধ করা গুলি এবং রাঠির উপর চালানো গুলি একই রকম। দু’টিই .৩০৩ বোরের। আবার একই ধরনের বন্দুক— একটি ওয়ান শটার থেকেই গুলি চলেছিল। দু’টি ঘটনাতেই একটির বেশি গুলি খরচ হয়নি। অর্থাৎ, নিজের লক্ষ্যভেদের ক্ষমতা সম্পর্কে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল আততায়ী।

লালবাজারের এক অফিসারের কথায়, ‘‘সমস্যাটা অন্য জায়গায়। নওয়াজ এরুচশা ওয়াদিয়া খুনের মামলা কিনারা না হওয়ার তালিকায় রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্মীনারায়ণ রাঠি হত্যা মামলার দোষী হিসেবে তো শহরের এক সময়ের কুখ্যাত তোলাবাজ গব্বরের সাজা হয়ে গিয়েছে!’’

রাঠি খুনের তদন্ত করেছিল গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখা। গব্বর কি নিজে ঘটনাস্থলে হাজির থেকে গুলি চালিয়েছিল? সেই সময়ে ওই শাখার অফিসার এবং ওই তদন্তের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত থাকা অফিসার এই প্রশ্নের জবাবে বলছেন, ‘‘ওই মামলায় গব্বরের যাতে সাজা হয়, সে জন্য আমি প্রাণপাত করেছিলাম ওর জড়িত থাকার প্রমাণ সংগ্রহ করতে। গব্বরের সাজা হয়েছে, সেটাই বড় কথা। এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে সব কিছু খুলে বলা উচিত নয়।’’

ব্যবসায়ী রাঠির উপর গুলি যে চালিয়েছিল, তার কি সাজা হয়েছে? এ বার ওই পুলিশ অফিসারের মন্তব্য, ‘‘এত বছর আগের কথা তো! মনে পড়ছে না।’’ বস্তুত, তদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকা অফিসারের এমন অস্পষ্ট উত্তর জল্পনা আরও বাড়াচ্ছে। আবার বড়বাজার সূত্রের খবর, সম্প্রতি নিহত ব্যবসায়ীর পরিবারের লোকেরা একটি ফোন পান। তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হয়, ওই মামলা নিয়ে তাঁরা আর এগোতে চান কি না। এমনিতেই রাঠির পরিবারের লোকজন সাক্ষ্য দেওয়া থেকে দূরে থেকেছেন। ওই ফোনেও তাঁরা একই কথাই বলেন।

কিন্তু লালবাজারের এক অফিসার বলছেন, ‘‘মামলায় যেখানে গব্বরের সাজা হয়ে গিয়েছে, সেখানে ওই ফোন নিহতের পরিবার পেলেন কেন? কে করল ওই ফোন?’’

শহরের প্রাণকেন্দ্রে ১২ দিনের ব্যবধানে দুটো খুনের পরে লালবাজারের শীর্ষকর্তাদের একাংশ প্রথমে সন্দেহ করেছিলেন, সবটাই ম্যালকম চাচা নামে এক ভাড়াটে খুনির কাজ। সে বছর অগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ধরা পড়ে দক্ষিণ ভারতীয় ওই ব্যক্তি। ম্যালকমকে জেরা করে জানা যায়, কলকাতায় সে কোনও ‘কাজ’ করেনি। ফলে, বিভ্রান্তি বাড়ে।

রাঠি হত্যায় প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, গব্বরকে তোলা না দেওয়ায় খুন হতে হয়েছে ওই ব্যবসায়ীকে। কিন্তু নতুন করে অনুসন্ধানের পরে এখন অন্য ‘মোটিভ’ও উঁকি দিচ্ছে। পার্সি ওই মহিলাকে খুনের কারণ আর রাঠি খুন হওয়ার কারণ মিলে যাচ্ছে বলে পুলিশের একাংশের দাবি।

সম্পত্তি কেনাবেচার দৌলতে পাওয়া নগদ ২৫ কোটি টাকা কালা ধন গচ্ছিত রাখা এবং পরে তা উদ্ধার করতে না পেরেই পার্সি মহিলাকে খুন করা হয় বলে সম্প্রতি কিছু সূত্র পান পুলিশের একাংশ। আবার তাঁরাই জানাচ্ছেন, অন্য এক ব্যবসায়ীর এমনই নগদ ৩৫ লক্ষ টাকা কালা ধন রাঠির কাছে গচ্ছিত ছিল। সেই কালো টাকার সঙ্গে রাঠি খুনের যোগ আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে নতুন ভাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police are concerned Contract killers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE