Advertisement
০৪ মে ২০২৪

চতুর্থীর ভিড় নিয়ন্ত্রণে ‘টেনেটুনে’ পাশ পুলিশ

রাতে যা-ও বা কোনওক্রমে পাশ, দিনে ডাহা ফেল। চতুর্থীতে এটাই পুলিশের মার্কশিট! সকাল থেকেই কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয়েছিল যানজট। যা সামাল দিতে কার্যত নাকানিচোবানি খেয়েছে পুলিশ।

জটে জেরবার পথ। বুধবার শিয়ালদহে। — রণজিৎ নন্দী

জটে জেরবার পথ। বুধবার শিয়ালদহে। — রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৬
Share: Save:

রাতে যা-ও বা কোনওক্রমে পাশ, দিনে ডাহা ফেল। চতুর্থীতে এটাই পুলিশের মার্কশিট!

সকাল থেকেই কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয়েছিল যানজট। যা সামাল দিতে কার্যত নাকানিচোবানি খেয়েছে পুলিশ। সামান্য পথ পেরোতেও দেড়-দ্বিগুণ সময় লেগেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আসেনি। রাত যত গড়িয়েছে, তত ধীরে ধীরে পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে পুলিশ।

গত কয়েক বছর ধরে বদল এসেছে পুজোর ভিড়ে। প্রতিমার বোধনের আগেই খুলে যাচ্ছে মণ্ডপ। কলেজ, অফিস ফেরত মণ্ডপে মণ্ডপে ঢুঁ মারছেন লোকজন। তার জেরেই পুজো শুরুর আগে যানজটে আটকে যাচ্ছে শহর। প্রশ্ন উঠেছে, পুজোর ভিড়ের এই পরিবর্তন তো নতুন নয়। তা হলে কলকাতা পুলিশ এ ভাবে সমস্যায় পড়ছে কেন?

পুলিশ সূত্রের খবর, বিকেলে পুজোর ডিউটির জন্য প্রতি গার্ড থেকে প্রায় ২৫ শতাংশ কর্মীকে তুলে নেওয়া হয়। তার ফলে দিনে যানজট সামলানোর পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না। পরিস্থিতি সামাল দিতে দক্ষ অফিসারও ছিলেন না। তার উপরে ব্যারিকে়ড দেওয়ায় রাস্তার পরিসর কমে গিয়েছে, কিন্তু গাড়ির সংখ্যা কমেনি। সন্ধ্যার পর থেকে পুরো বাহিনী নেমে পড়ায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সামলানো গিয়েছে। লালবাজারের এক অফিসার বললেন, ‘‘দক্ষ অফিসারদের কাঁধে ভর দিয়েই শেষমেশ টেনেটুনে পাশ মার্কস ওঠানো গিয়েছে।’’

পুলিশের একাংশ এর পিছনে নিজেদের বাহিনীর ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। তার উপরে কিছু কিছু অফিসারকে আগেভাগে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেও তাঁরা তা পালন করতে পারছেন না। গত বছর দেশপ্রিয় পার্কের ভিড় ঘিরে সমস্যায় পড়েছিল লালবাজার। ফলে এ বার আগে থেকে ওই এলাকায় পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু চতুর্থীর সন্ধ্যাতেই রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাট, শরৎ বসু রোডে যানজট চরমে ওঠে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, আগেভাগে পরিকল্পনা করে লাভ কী হল? ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা অফিসারেরা ঠিক মতো পরিকল্পনা করেছিলেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বাহিনীর অন্দরে। সন্ধ্যা সাতটার পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল-সহ পদস্থ কর্তাদের ওই এলাকায় যেতে হয়। রাতে যান পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারও।

পুলিশ সূত্রের খবর, সকাল থেকেই উত্তরের খন্না মোড়, দক্ষিণের ভবানীপুর, আলিপুর, বালিগঞ্জের রাস্তা আটকে গিয়েছিল। হাজরা মোড় থেকে আশুতোষ মুখার্জি রোড হয়ে ধর্মতলা পৌঁছতে সময় লেগেছে গড়ে এক ঘণ্টার বেশি। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে আশুতোষ মুখার্জি রোড এড়িয়ে হরিশ মুখার্জি রোড দিয়ে আসা গাড়িগুলিরও। আটকে গিয়েছিল এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল দিয়ে হেস্টিংসমুখী গাড়ি চলাচলও। তার প্রভাব পড়ে পরমা উড়ালপুলেও।

ট্রাফিক পুলিশের কর্তাদের ব্যাখ্যা, এজেসি বসু রোড উড়ালপুলের হেস্টিংসমুখী গাড়ি চলাচল আটকে গেলে নীচের রাস্তাগুলি এবং পরমা উড়ালপুল ও পার্ক সার্কাস মোড়ের গাড়ি চলাচল আটকে যাবেই। এ দিন সেটাই হয়েছে। জওহরলাল নেহরু রোডের এক্সাইডমুখী গাড়ি চলাচলও এ দিন দুপুরে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। খন্না মোড়ের যানজটের পিছনে পুলিশ দায়ী করছে ওই এলাকার পোশাকের হাটকে। তার ফলে থমকে গিয়েছিল এপিসি রোড, উল্টোডাঙা রোড, অরবিন্দ সরণির যান চলাচল। পুজোর কেনাকাটার জন্য ঠাসাঠাসি ভিড় ছিল বড়বাজারে। এর জেরে মহাত্মা গাঁধী রোড ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে যানজট তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করতে এ দিন নিজেদের ফেসবুক পেজে বিভিন্ন রাস্তা এড়িয়ে চলার ‘উপদেশ’ দেয় লালবাজার।

রাস্তার জট এড়াতে অনেকেই এ দিন পাতালপথ বেছে নেন। তার ফলে বিকেল থেকেই গাদাগাদি ভিড় হয় মেট্রোয়। অণ্বেষা মিত্র নামে এক মহিলা যাত্রীর কথায়, ‘‘কালীঘাট থেকে এসপ্ল্যানেড পৌঁছতে দম বেরিয়ে গিয়েছিল!’’ অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, ‘ঐতিহ্য’ মেনে এ দিন বোধহয় বিভ্রাট হবে মেট্রোতে। কিন্তু শেষমেশ তেমনটা আর হয়নি।

পুলিশ বলছে, বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মণ্ডপে দর্শক ঢুকতে শুরু করে। সন্ধের পর থেকে বিভিন্ন মণ্ডপে ভিড় লেগে যায়। এক দিকে যানজট, সঙ্গে ভিড়, সব মিলিয়ে নাকানিচোবানি খায় পুলিশ। তবে রাতের দিকে অফিসযাত্রীদের ভিড় এবং গাড়ি কিছুটা কমে যাওয়ায় কিছু জায়গায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছেন পুলিশ অফিসারেরা। ট্রাফিক সূত্রের খবর, শহরের বেশির ভাগ জায়গায় যানজট সামলে দিলেও গড়িয়াহাট, টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ, রাসবিহারী কানেক্টর, পরমা উড়ালপুলে যানজট রয়েই গিয়েছিল।

বুধবার সন্ধ্যায় রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে ডিউটি করছিলেন এক ইনস্পেক্টর। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তিনি দেখেন, হঠাৎ করে এক দল দর্শক ব্যারিকেড ছেড়ে নেমে এসেছেন রাস্তায়। একে যানজট, তার উপরে রাস্তায় ভিড় নেমে আসায় পরিস্থিতি সামলাতে রীতিমতো চেঁচাতে হয় তাঁকে। সকাল থেকেই যানজটে আটকে যায় খন্না মোড়। তার রেশ পড়ে উল্টোডাঙা মেন রোড, অরবিন্দ সরণি, এপিসি রোডেও। সন্ধ্যাতেও পরিস্থিতি সামলানো যায়নি। এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে ফোনে বলতে শোনা যায়, ‘‘চতুর্থীতেই এমন হলে ষষ্ঠীতে কী হবে!’’ চেতলা অগ্রণীর মণ্ডপ খোলেনি। কিন্তু উৎসাহী লোকজন হাজির হন সেখানেও। গেট বন্ধ দেখে ভিড় ঢুকে পড়ে বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘের দিকে! মহম্মদ আলি পার্কেও চতুর্থীতে গেট খোলেনি। কিন্তু পথচলতি লোকজন যাতায়াতের পথে উঁকি মারার চেষ্টা করে গিয়েছেন!

আজ পঞ্চমী। উৎসব কাপে পুলিশের ‘সেকেন্ড পেপার’। টেনেটুনে পাশ নাকি ফার্স্ট ডিভিশন, কী আছে লালবাজারের কপালে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffic Jam Transport stopped
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE