Advertisement
E-Paper

ধরা পড়ল ডাকাতদল, নিরাপত্তা তবু প্রশ্নেই

ঘটনাটি ঘটে ২৫ সেপ্টেম্বর, পঞ্চমীর সকাল। সবে মাত্র দিনের শুরু হয়েছে তখন। ঘুম ভাঙছে শহরের। সেই সময়েই গড়িয়াহাট মোড় থেকে কয়েকশো মিটার দূরে ১৯২ রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের একটি বহুতলের চারতলার ফ্ল্যাটে জোর করে ঢুকে দুই বৃদ্ধা বোনের গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ডাকাতি করে পালায় পাঁচ দুষ্কৃতী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৩৯
নিজেদের ফ্ল্যাটে মহুয়া ঘোষ (বাঁ দিকে) এবং রীতা ঘোষ। ফাইল চিত্র।

নিজেদের ফ্ল্যাটে মহুয়া ঘোষ (বাঁ দিকে) এবং রীতা ঘোষ। ফাইল চিত্র।

তেরো দিনের মাথায় ডাকাতির কিনারা করল কলকাতা পুলিশ। উদ্ধার হল লুঠের গয়না-সহ টাকাও। যদিও পুজোর শুরুতেই গড়িয়াহাট মোড় থেকে কয়েকশো মিটার দূরত্বে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের উপরে সাত সকালের ডাকাতির ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে শহরের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। তার মধ্যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিরাপত্তা বিশেষ ভাবে প্রশ্নে।

ঘটনাটি ঘটে ২৫ সেপ্টেম্বর, পঞ্চমীর সকাল। সবে মাত্র দিনের শুরু হয়েছে তখন। ঘুম ভাঙছে শহরের। সেই সময়েই গড়িয়াহাট মোড় থেকে কয়েকশো মিটার দূরে ১৯২ রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের একটি বহুতলের চারতলার ফ্ল্যাটে জোর করে ঢুকে দুই বৃদ্ধা বোনের গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ডাকাতি করে পালায় পাঁচ দুষ্কৃতী। ঘটনার পিছনে পরিচিত লোকের হাত থাকার প্রমাণ মেলা মাত্রই পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ঢুকে পড়েন ওই ফ্ল্যাটের পরিচারিকা ছাড়াও জল দিতে আসা ভারীর উপরে। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় পরিচারিকা নন, ওই ফ্ল্যাটে ডাকাতির ঘটনায় হাত রয়েছে জল দেওয়ার ভারীর। সেই সূত্র ধরে এগোতে এগোতেই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের জালে ধরা পড়ে ভারী অর্পণ শিকারি, সুরজ সিংহ, সুনীল কুমার, পরেশ হালদার এবং রাজেশ রায়। এদের মধ্যে পরেশ দু’টি ডাকাতি ও রাজেশ একটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে পুরো ঘটনার ছক তৈরি করেছিল ওই বাড়ির ভারী অর্পণই। তার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর এলাকায়। সে অভিযোগকারিণী বৃদ্ধা দুই বোনের ফ্ল্যাটে গত পাঁচ বছর ধরে জল দিত।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২৫ সেপ্টেম্বরও অভিযোগকারিণী দুই বোন মহুয়া ঘোষ (৭৭) ও রীতা ঘোষের (৭৩) ফ্ল্যাটে আসে অর্পণ। সে ওই ফ্ল্যাটের বারান্দায় জল বইবার ড্রাম ও বাঁশের বাঁক রেখে যেত। ওই দিন সকাল সওয়া ৬টা নাগাদ ওই ভারী রোজের মতো এসে কলিং বেল বাজালে মহুয়াদেবী এসে দরজা খুলে দেন। ভারী এসে নিজের জিনিস নিয়ে বেরোলে মহুয়াদেবীই দরজা বন্ধ করতে যান। সেই সময়েই পাঁচ দুষ্কৃতী তাঁকে ঠেলে ঘরে ঢুকিয়ে গলায় ছুরি ধরে এবং শাড়ি ও চাদর দিয়ে বেঁধে ঘরে ঢুকে গিয়ে আলমারিতে থাকা টাকা ও পুরনো কয়েন নিয়ে নেয়। এর পরেই সে ঢোকে মহুয়াদেবীর বোন রীতাদেবীর ঘরে। রীতাদেবী তখন ঘুমোচ্ছিলেন। আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলে তাঁর গলাতেও ছুরি ঠেকিয়ে দুষ্কৃতী তাঁর হাত থেকে সোনার চুড়ি ও গলায় থাকা দু’টি হার খুলে নেয়।

শুধু তা-ই নয়। নিজেদের আনা চাবি দিয়ে আলমারি খুলে লুঠ করে সেখানে থাকা গয়নাও। কয়েক মিনিটের অপারেশন চালিয়ে দুষ্কৃতীরা বেরিয়ে গেলে রীতাদেবী কোনও রকমে একটি জানালার কাছে গিয়ে পাশের বাড়ির লোকজনের নাম ধরে ডাকাডাকি করেন।

পরে সেই পড়শি লোকজন এনে রীতাদেবী ও মহুয়াদেবীর ফ্ল্যাটে ঢুকে তাঁদের বাঁধন খুলে দেন ও থানায় খবর দেন। অভিযোগ দায়ের হলে গড়িয়াহাট থানার পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের ডাকাতি-দমন শাখার গোয়েন্দারাও তদন্তে নামেন। তখনই গোয়েন্দারা অনুমান করেন পরিচিত কেউ এই ঘটনায় জড়িত। কারণ অত সকালে ওই রকম জমজমাট এলাকায় হঠাৎ করে কোনও ডাকাত দলের পৌঁছনো সম্ভব নয়। জেরায় অর্পণ গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, এত বছর ধরে জল দিতে আসার সুবাদে সে ওই দুই বোনের সব খবর রাখত। ধীরে ধীরে সে বুঝে নিয়েছিল ওই বাড়িতে ডাকাতি করলে অনেক কিছুই পাওয়া যাবে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় এখনও এক জন পলাতক। তার খোঁজ চলছে।

Crime Robbery Theft Rashbehari Avenue ডাকাতি রাসবিহারী অ্যাভিনিউ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy