বেপরোয়া যাত্রা। সোমবার, শহরে। ছবি: সুমন বল্লভ
মুখ্যমন্ত্রী বলছেন বটে, কিন্তু, পুলিশ শুনছে কই!
শহরে দুর্ঘটনা কমাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’-এর মতো কড়া দাওয়াইয়ের কথা ভেবেছিলেন। তিনি ঘোষণা করার প্রথম কয়েক দিন পরে কোমর বেঁধে তা নিয়ে প্রচার করেছিল পুলিশ। সেই সময়ে পাম্পে গিয়ে পেট্রোল ছাড়া ফিরতে হয়েছে হেলমেটবিহীন বাইক ও স্কুটারের আরোহীদের।
মাস পাঁচেক কেটে যাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ ভুলতে বসেছে পুলিশ। না হলে রবিবার, বড়দিনের সকালে হাও়ড়ার শরৎ চ্যাটার্জি রো়ড থেকে মা উ়ড়ালপুল পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার রাস্তা দুই বান্ধবী কী করে হেলমেট ছাড়াই স্কুটারে চলে এলেন? দু’জন তরুণী মাথায় হেলমেট না পরেই স্কুটারে চড়ে যাচ্ছেন, তা ওই রাস্তায় পরপর এতগুলো সিগন্যালে থাকা কোনও কর্তব্যরত পুলিশকর্মীর নজরেই পড়ল না?
বড়দিনে তাঁদের গন্তব্য ছিল পার্ক স্ট্রিট। কিন্তু, তার আগেই মা উড়ালপুলে স্কুটারের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যান ২৪ বছরের মোনালিসা দেবনাথ। আহত হন অবন্তিকা দাস। তাঁকে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যালে ও পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার তাঁর বাবা মন্টুলাল দাস জানিয়েছেন, মেয়ের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। আঘাত লেগেছে মূলত মাথায়।
পরিবার জানিয়েছে, হেলমেট থাকলে ওই আঘাত এড়িয়ে যাওয়া যেত। রাস্তায় অবাধে কী করে হেলমেট ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন আরোহীরা? কী হল মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের? সোমবার এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল সুপ্রতিম সরকারের সঙ্গে। কিন্তু, তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর মোবাইল ফোনে পাঠানো বার্তারও কোনও জবাব দেননি।
এই প্রথম নয়। সম্প্রতি, ১৩ ডিসেম্বর মা উড়ালপুলেই দুপুরে একটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল দুই যুবকের। পুলিশ তখন জানিয়েছিল, তপসিয়ার বাসিন্দা ওই দুই যুবকের মাথাতেও হেলমেট ছিল না। অভিযোগ, তাঁরাও হেলমেট ছাড়া একের পর এক সিগন্যাল পেরিয়ে এলেও সে দিনও তা নজরে পড়েনি পুলিশের।
দিন কয়েক আগে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, রবিবার, বড়দিনের রাতে কড়া নজরদারি হবে মোটরবাইকের উপরে। রবিবার রাতে পার্ক স্ট্রিট ও সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, হেলমেট ছাড়া বাইক চালাতে দেখেও পুলিশ ধরেনি। বেপরোয়া যুবকের দল বাইক ছুটিয়ে চলে গিয়েছে পুলিশের নাকের ডগা দিয়েই। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, ওই রাতে পার্ক স্ট্রিট এলাকা থেকেই হেলমেট না পরার জন্য ১২৮ জন চালক এবং ৫৭ জনকে আরোহীকে জরিমানা করা হয়েছে। এই জরিমানার পরিমাণ ছিল ১০০ টাকা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, হাসতে হাসতে পুলিশকে জরিমানা দিয়ে বাইক ছুটিয়ে চলে গিয়েছে যুবকের দল।
রবিবার রাতেই যাদবপুর এলাকায় হেলমেট না পরে বাইক চালাচ্ছিলেন দীপ চন্দ (২০)। বিজয়গড় ঠাকুরবাড়ির কাছে একটি গাড়ি পিছন থেকে ধাক্কা মারে দীপকে। রাস্তায় পড়ে যান দীপ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি।
পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছু মোটরবাইক চালক ও আরোহীর বিরুদ্ধেও। বহু বার বিভিন্ন ভাবে প্রচার করেও একাংশকে সচেতন করতে ব্যর্থ প্রশাসন। বাচ্চাকে মাঝখানে বসিয়ে বাবা-মা বাইকে চড়ে যাচ্ছেন আর তিনজনের মাথাতেই হেলমেট নেই এমন দৃশ্য আজও দেখা যায়। এমনকী, বাবা-মা হেলমেট পরে বসে আছেন আর বাচ্চার মাথায় হেলমেট নেই— এমনটাও দেখা যায়। মাইকে প্রচার করে, রাস্তায় ছড়া লিখে এমনকী জরিমানা করেও এঁদের শোধরানো সম্ভব হয়নি।
আবার এই প্রশ্নও উঠেছে যে, হেলমেটহীন প্রতিটি মোটরবাইক চালককে কি জরিমানা করতে পারছে পুলিশ? এক পুলিশ অফিসারের যুক্তি, ‘‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডিউটি করার সময়ে দ্রুত গতির মোটরবাইক নজরে পড়ে না।’’ কিন্তু ট্র্যাফিক পুলিশ ছাড়াও সিসিটিভি দিয়েও তো নজরদারি চালানোর ব্যবস্থা রয়েছে পুলিশের। আদৌ কি হেলমেটহীন বাইক আলাদা ভাবে নজরদারি করে পুলিশ?
লালবাজার সূত্রের খবর, সিসিটিভিতে আলাদা ভাবে হেলমেটহীন বাইককে নজরদারি করা হয় না। শুধু বেপরোয়া গতির বাইক বা গাড়ির ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে নজরদারি করে আটকানো হয়। তখন যদি দেখা যায় যে মোটরবাইক চালক বা আরোহী বিনা হেলমেটে রয়েছেন, তখন তাঁদের জরিমানা করা হয়।
যদিও রাজপথে এই দৃশ্য দুর্লভ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy