Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মাদকের সূত্রে জালে কিডনি চক্র

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ নভেম্বর আনন্দপুর থেকে চার জন মাদক পাচারকারীকে গ্রেফতার করেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম যথাক্রমে আশফাক আহমেদ, তেহরুল ইসলাম, বৈদ্যনাথ বর্মণ এবং জ্যোৎস্না বেগম। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ বড়সড় কিডনি পাচার চক্রের সন্ধান পায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫৪
Share: Save:

কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে এল কেউটে।

মাদক পাচারকারীদের গ্রেফতার করতে গিয়ে কিডনি পাচার চক্রের হদিস পেল কলকাতা পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ নভেম্বর আনন্দপুর থেকে চার জন মাদক পাচারকারীকে গ্রেফতার করেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম যথাক্রমে আশফাক আহমেদ, তেহরুল ইসলাম, বৈদ্যনাথ বর্মণ এবং জ্যোৎস্না বেগম। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ বড়সড় কিডনি পাচার চক্রের সন্ধান পায়। সোমবার লালবাজারে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, এটি একটি বড় কিডনি পাচার চক্রের ঘটনা। আশফাক কিডনি চক্রের মূল মাথা। বাকি তিন জন কিডনি দাতা।’’

ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত ২৪ নভেম্বর তারা পটনা থেকে ট্রেনে হাওড়ায় আসে। ওই দিনই ই এম বাইপাসের ধারে মুকুন্দপুরের আর এন টেগোর হাসপাতালে তেহরুল, বৈদ্যনাথ এবং জ্যোৎস্নার কিডনি দান করার কথা ছিল। ধৃত আশফাকের থেকে পুলিশ আরও জেনেছে, গত এক বছরে কেবল ওই বেসরকারি হাসপাতালেই মোট পাঁচশো জন কিডনি দান করেছেন। অভিযোগ, কিডনি দানের জন্য যে সরকারি নিয়ম পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তা এ সব ক্ষেত্রে মানা হয়নি।

সোমবার লালবাজারে গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ বলেন, ‘‘ধৃতদের সবিস্তার তথ্য রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। গত এক বছরে আর এন টেগোর হাসপাতালে কত কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তারও তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।’’

পুলিশের দাবি ধৃত আশফাক জেরায় স্বীকার করেছে, মূলত কিডনি দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের আর এন টেগোর হাসপাতালে আনাটাই ছিল তার মূল কাজ। প্রতিটি কিডনি দান পিছু পাচার চক্র পেত ৫-১০ লক্ষ টাকা। কিডনি দাতা পেতেন ৩-৫ লক্ষ টাকা। পুলিশ সূত্রে জানিয়েছে, আশফাক অতীতেও একাধিক বার ওই হাসপাতালে কিডনি দাতাদের নিয়ে এসেছিল।

২৪ নভেম্বর আনন্দপুরে ধৃত ওই চার জনের কাছ থেকে প্রথমে প্রায় ৩১৬ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেই কিডনি পাচার চক্রের হদিস পাওয়া যায়। ধৃত চার জনের কাছ থেকে জাল আধার কার্ড, জাল ভোটার কার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের প্রত্যেকেরই আধার কার্ডে ভুয়ো নাম-ঠিকানা লেখা ছিল। যেমন আসফাকের আসল বাড়ি খিদিরপুর হলেও ঠিকানা লেখা ছিল বিহারের। বাকি তিন জনের মধ্যে তেহরুলের বাড়ি হেমতাবাদ, বৈদ্যনাথ ও জ্যোৎস্নার বাড়ি যথাক্রমে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ ও ইসলামপুর। তিন জন কিডনি দাতার বাড়ি উত্তর দিনাজপুর হলেও ২৪ নভেম্বর তাদের কেন পটনা থেকে ঘুরপথে ট্রেনে করে কলকাতায় আনা হয়েছিল সে বিষয়েও রহস্য দানা বেঁধেছে। এই চক্র বিশেষত বিহারে বাসা বেঁধেছে কি না সে বিষয়েও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গের কথায়, ‘‘ধৃত আশফাক যে ভাবে ছদ্মবেশে কিডনি পাচার চক্রে জড়িয়ে রয়েছে তাতে আমাদের প্রাথমিক অনুমান, এই ঘটনায় আরও বড় কোনও চক্র জড়িত রয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য ভবনে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি ওই বেসরকারি হাসপাতালেও যোগাযোগ করব।’’

যদিও আর এন টেগোর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতাল প্রয়োজনীয় নথিপত্র যাচাই এবং নিয়মাবলী মানার ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে। এখানে সরকারি অনুমোদন এবং নিয়ম মেনেই প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE