মাঝে তিন মাসের বিরতি। কিন্তু পুজোর ঠিক আগে কয়েক দিনের ব্যবধানে শহরের বুকে ফের দু’টি গুলি চালনার ঘটনা। আর তাতেই আশঙ্কার মেঘ দেখছে লালবাজার। এর জেরে দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার প্রক্রিয়া আরও জোরদার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে লালবাজারের তরফে। বেআইনি অস্ত্র যে পথ দিয়ে শহরে ঢুকছে তা বন্ধ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, তিন মাসের বিরতির পরে ৮ অগস্ট কড়েয়ার শিবতলা মঠ লেনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হন দুই যুবক। ওই ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করার দু’দিনের মাথায় রবিবার রাতে ফের পশ্চিম বন্দর থানার রামনগর মোড়ের কাছে দুষ্কৃতীরা তিন রাউন্ড গুলি চালিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে লক্ষাধিক টাকা লুঠ করে চম্পট দেয়। থানার পাশাপাশি লালবাজারের গোয়েন্দারা ওই ঘটনার তদন্ত নেমেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেননি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, স্থানীয় দুষ্কৃতীরা ওই ঘটনায় যুক্ত। সাধারণত দুষ্কৃতীদের চারটি দল ওই এলাকায় অপরাধ করে। ঘটনার সময় তারা কোথায় ছিল তা জানার চেষ্টা চলছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, জুন মাসে পর পর চার দিন গুলি চালনার ঘটনা ঘটেছিল শহরে। এর পরে দুষ্কৃতীরাজ রুখতে গোয়েন্দাদের কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন লালবাজারের কর্তারা। তার পর সাময়িক ভাবে বেশ কিছু দিন বন্ধ ছিল গুলি চালনার ঘটনা। কিন্তু একই সপ্তাহে ফের দু’দিন দুষ্কৃতীদের গুলি চালানোর ঘটনা সামনে আসার পর গোয়েন্দাদের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
পুলিশের একাংশের অভিযোগ, কোথাও গুলি বা দুষ্কৃতী হামলার ঘটনা ঘটলেই লালবাজারের কর্তারা দুষ্কৃতীদের ধরতে স্থানীয় থানার পাশাপাশি গোয়েন্দাদেরও নির্দেশ দেন। লালবাজারের ওই নির্দেশের পরেও পুলিশে নিচু তলার একাংশের অভিযোগ, এ রকম একের পরে এক হামলার ঘটনায় যুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করছে ঠিকই। কিন্তু দুষ্কৃতীদের অস্ত্রের অভাব হচ্ছে না। কলকাতা পুলিশের একাধিক অফিসার জানিয়েছেন, শহরের বুকে গুলি চালনার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অপরাধীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গোয়েন্দা বা পুলিশকর্মীদের সোর্স। ফলে ওই পুলিশকর্মী বা গোয়েন্দারা অপরাধ আটকাতে না পারলেও ঘটনার পরেই অভিযুক্ত নিজের সোর্সকে খুব সহজেই গ্রেফতার করছেন।
কিন্তু অস্ত্র কোথা থেকে আসছে, সামগ্রিক ভাবে গোয়েন্দারা তার কোন দিশা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। গোয়েন্দাদের একাংশের মতে, শহরের বুকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র মজুত রয়েছে। প্রতি দিনই তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধারও করছেন পুলিশকর্মীরা। গত মাসেই গুলি চালনার ঘটনায় ৮ জন দুষ্কৃতীকে অস্ত্র সমেত গ্রেফতারও করেছিলেন লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখার অফিসাররা। কিন্তু লালবাজারের একাংশের মতে, অস্ত্রের জোগানে নিয়ন্ত্রণ আনার পাশাপাশি ওই সব সোর্সকে ‘নিয়ন্ত্রণে’ আনতে না পারলে শহরে দুষ্কৃতীরাজ রোখা মুশকিল হবে।
এর আগে সুরজিৎ করপুরকায়স্থ কলকাতা পুলিশের কমিশনার থাকার সময়েই শহরে বারবার গুলি চালনার ঘটনায় বিরক্ত হয়ে অস্ত্র উদ্ধারে জোর দিতে বলেছিলেন তাঁর অফিসারদের। কিন্তু তাতেও অবস্থার তেমন হেরফের হয়নি। লালবাজার সূত্রের খবর, বর্তমান কমিশনারও চান অস্ত্র উদ্ধার করতে। তাই দুষ্কৃতীদের ধরার পাশাপাশি অস্ত্রের জোগান বন্ধের দিকে নজর দিয়েছেন।
সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার রবীন্দ্রনগর থানা এলাকায় একটি অস্ত্র কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে একশোর বেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছিল জেলা পুলিশ। সেখান থেকে শহরের কোন কোন দুষ্কৃতী অস্ত্র কিনেছে তা জানার জন্য ওই ঘটনায় ধৃতদেরও জেরা করবেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy