Advertisement
E-Paper

বেড়েছে দাদাদের ‘দরদ’, রাজনীতির রং দুর্গোৎসবেও

মধ্য কলকাতার একটি ক্লাবের কালীপুজো। ক্লাবের নাম অবশ্য হাতেগোনা ক’জন জানেন। বাকি সবার কাছে ওই পুজোর পরিচিতি এলাকার ‘দাদা’র নামেই।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০০:২৩

মধ্য কলকাতার একটি ক্লাবের কালীপুজো। ক্লাবের নাম অবশ্য হাতেগোনা ক’জন জানেন। বাকি সবার কাছে ওই পুজোর পরিচিতি এলাকার ‘দাদা’র নামেই। সেই ‘দাদা’ ইহলোক ছেড়ে গেলেও পুজোর পরিচিতি আজও ওই নামেই বহাল। এলাকার আর একটি কালীপুজোও এক দাপুটে কংগ্রেসি নেতার পুজো বলেই লোকে জানে। গত কয়েক বছরের পুজোর ছবি বলছে, রাজনীতির এই প্রভাব এ বার ছড়িয়ে প়়ড়ছে শারদোৎসবের আঙিনাতেও। সামাজিক উৎসব হয়ে উঠছে রাজনৈতিক দাপট দেখানোর মঞ্চ।

কলকাতায় নেতাদের দুর্গাপুজো ছিল না, তা নয়। যেমন, একডালিয়া এভারগ্রিন বললেই চলে আসে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নাম। কলেজ স্কোয়ারের পুজোর সঙ্গে কংগ্রেস নেতা বাদল ভট্টাচার্য কিংবা সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর সঙ্গে প্রদীপ ঘোষের নাম জড়িত। কিন্তু সেই সব এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, সুব্রতবাবু, বাদলবাবু বা প্রদীপবাবুর রাজনৈতিক দাপট দেখানোর অস্ত্র পুজোর মণ্ডপ ছিল না। আগে বাম নেতারা সরাসরি পুজোয় না থাকলেও তাঁদের ঘনিষ্ঠ কিছু ‘দাদা’র পুজো ছিল। কিন্তু পুজো ময়দান বলছে, সেই ছবিটা গত দশকের শেষার্ধ থেকে বাড়ছিল এবং রাজ্যে পালাবদলের পরে তা আরও বেড়েছে।

এখন বড় মাপের নেতা, মন্ত্রী তো বটেই, পাড়ার ছোট নেতা বা কাউন্সিলরেরাও একাধিক পুজোর সভাপতি কিংবা উপদেষ্টার পদে থাকেন। মো়ড়ে-মোড়ে পুজোর হোর্ডিং, ফেস্টুন জু়ড়ে তাঁদের নাম, ছবি ছাপা হয়। বছর কয়েক আগে দেখা গিয়েছিল, উত্তর শহরতলির শাসক দলের এক দাপুটে কাউন্সিলর এলাকার অন্তত ষাটটি পুজোর মাথায় রয়েছেন! উত্তর কলকাতায় পাঁচটি পুজো এক কাউন্সিলরের বলে পরিচিত। গত কয়েক বছরে একের পর এক পুজোয় জুড়েছেন রাজ্যের এক প্রবীণ মন্ত্রী।

এ বছর তো দক্ষিণ শহরতলির একাধিক পুজো আচমকাই এক মন্ত্রীর ‘স্নেহধন্য’ হয়ে উঠেছে। ওই মন্ত্রীর অবশ্য নিজের পুজোও রয়েছে। গত কয়েক বছরে দক্ষিণ শহরতলির আর একটি ক্লাবের রমরমা হয়েছে মন্ত্রীর পরিচয় ধরেই। অভিযোগ, বছর দুয়েক আগে একটি সংস্থার কাছে রীতিমতো ধমকে পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার এক মন্ত্রীর পুজো!

সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, পুজো কমিটিকে এলাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার করা হচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলছেন, ‘‘ক্লাব, পুজো— সবই তো দখলদারি চলছে। এতে সাংস্কৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।’’ পুজোর রাজনীতি নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘একটি পুজোয় জড়িত থাকাই ভাল। একসঙ্গে একাধিক পুজোয় তো ওতপ্রোত ভাবে থাকা যায় না।’’

বিভিন্ন পুজোর কর্তারা বলছেন, নেতারা যেমন পুজোয় জুড়ে নিজের ঢাক পেটান, তেমনই কমিটির জৌলুসও বাড়িয়ে দেন। রাজনৈতিক ছাপ না থাকলে কী হতে পারে, তার উদাহরণও এ শহরে রয়েছে। ‘দাদা’-কে ঠাঁই না দেওয়ায় ভাঁড়ে মা ভবানী কলকাতার অন্তত তিনটি পুরনো পুজোর।

পুজো উদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সভাপতি পার্থ ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘রাজনীতি করেন বলে পুজো কমিটিতে থাকা যাবে না, এমন নিয়ম নেই। তা ছা়ড়া, সামাজিক উৎসবকে কেন্দ্র করে সব সময়েই জনসংযোগ বৃদ্ধি হয়।’’ উত্তর কলকাতার তৃণমূল নেতা এবং হাতিবাগান সর্বজনীনের কর্তা শাশ্বত বসুর কথায়, ‘‘অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসুর মতো নেতারা মন্ত্রী বা বিধায়ক হওয়ার আগে থেকেই পুজো ময়দানের নেতা। পুজো করে নিজের প্রচার বাড়ানোর প্রয়োজন তাঁদের নেই।’’ যদিও শাসক দলেরই একাংশ মেনে নিচ্ছেন, গত কয়েক বছরে তাঁদের তরুণ নেতারাও পুজো ধরতে মাঠে নেমে পড়েছেন।

পুজো মণ্ডপে তাই রাজনীতির ঢাক আর কত জোরে বাজবে, সেই আশঙ্কা থেকেই যায়!

Politics Festival Involvement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy