Advertisement
০২ মে ২০২৪

পাঠ-পরিবেশেই পিছিয়ে প্রেসিডেন্সি

পরীক্ষায় ভাল ফল করতে গেলে প্রস্তুতিটা যে অনেক ভাল হওয়া দরকার, ঐতিহ্যবাহী প্রেসিডেন্সির চেয়ে সেটা আর বেশি জানে কে!প্রশ্ন উঠছে, সব জেনেও কেন্দ্রের পরীক্ষায় বসার জন্য প্রেসিডেন্সি কি ঠিকঠাক তৈরি হয়েছিল?

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১৭
Share: Save:

পরীক্ষায় ভাল ফল করতে গেলে প্রস্তুতিটা যে অনেক ভাল হওয়া দরকার, ঐতিহ্যবাহী প্রেসিডেন্সির চেয়ে সেটা আর বেশি জানে কে!

প্রশ্ন উঠছে, সব জেনেও কেন্দ্রের পরীক্ষায় বসার জন্য প্রেসিডেন্সি কি ঠিকঠাক তৈরি হয়েছিল?

শিক্ষা শিবির বলছে, হয়নি। এবং হয়নি বলেই দেশের মধ্যে প্রেসিডেন্সি আপাতত ৪১তম স্থানে! প্রেসিডেন্সি ছেড়ে যাওয়া এক অধ্যাপকের টিপ্পনী, ‘‘ভাগ্যিস কলকাতা ও যাদবপুর প্রতিযোগিতায় ছিলই না। দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু আর চেন্নাইয়েরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না প্রতিযোগিতায়। সমীক্ষার জন্য তথ্যই দেয়নি তারা। ওরা লড়াইয়ে থাকলে ৪১ কেন, প্রেসিডেন্সিকে প্রথম একশোর মধ্যেই দেখা যেত না!!’’

কিন্তু প্রেসিডেন্সির এই হাল কেন?

শিক্ষা শিবিরের ব্যাখ্যা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠনপাঠনের পরিবেশই প্রথম ও শেষ কথা। দক্ষ শিক্ষক এবং সমর্থ পরিকাঠামো সেই পরিবেশের দুই স্তম্ভ। দু’টিতেই দুর্বল প্রেসিডেন্সি। তাই ওই দু’টি মিলিয়ে যে-গ্র্যান্ড টোটাল, সেই পাঠ-পরিবেশে অনেক পিছিয়ে তারা।

কত পিছিয়ে, ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্সি ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় বলেছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মইদুল ইসলাম। তাঁর অভিজ্ঞতা: ‘‘কাজের পরিবেশই নেই। ওখানে সব কিছুই কেমন যেন ঝাপসা!’’

পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্সি ছেড়ে যাওয়া অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাই। এবং প্রেসিডেন্সির মান যে নিম্নমুখী, সেই অভিযোগ উঠছিল বিভিন্ন শিবির থেকেই। তাদের আঙুল পরিকাঠামো আর পাঠ-পরিবেশের অভাবের দিকেই। তারা বলছে, সমর্থ শিক্ষক আর পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো পরস্পরের পরিপূরক। দু’টিরই খামতি থাকলে মার খায় পাঠ-পরিবেশ।

পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ কি আদৌ হয়নি প্রেসিডেন্সিতে?

বেকার ল্যাবরেটরির সংস্কার হয়েছে। শিক্ষকদের জন্য ঝাঁ-চকচকে ঘর হয়েছে। বাতানুকূল হয়েছে বিভিন্ন বিভাগ। মার্বেল বসেছে মেঝেতে। কিন্তু উচ্চশিক্ষার যথাযথ পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পঠনপাঠন ও গবেষণার পরিকাঠামো না-পেয়ে চলে গিয়েছেন বিদেশ থেকে আসা অনেক শিক্ষক। প্রেসিডেন্সিকে বিশ্ব-মানে টেনে তুলতে দেশ-বিদেশ ঢুঁড়ে শিক্ষক আনার কথা ছিল। তেমন নিয়োগ তো দূরের কথা, ২০১৩-এ ইতিহাস বিভাগের বেঞ্জামিন জাকারিয়ার বিদায় পর্ব থেকে শিক্ষকদের প্রেসিডেন্সি ছাড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। ইতিহাসের শুক্লা সান্যাল, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু চেয়ার প্রফেসর সব্যসাচী ভট্টাচার্য, জীবনবিজ্ঞানের অধ্যাপক অধীর মান্না, পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক সোমক রায়চৌধুরী-সহ অনেক নাম সেই তালিকায়। অঙ্কের বিভাগীয় প্রধান গৌরগোপাল রায়কে বদলি করে দিয়েছে সরকার। প্রেসিডেন্সির খবর, ৩৩৪টি শিক্ষক-পদের মধ্যে ১৮০টিই খালি। আছেন ১৫৪ জন। এই অবস্থায় যা হওয়ার, তা-ই হচ্ছে।

পরিকাঠামোর ঘাটতির মধ্যে প্রেসিডেন্সিকে বিশ্ববিদ্যালয় না-করলেই ভাল হতো বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন সেখানকার প্রাক্তনী সৌগত রায়। তৈরি না-হয়ে প্রেসিডেন্সি কেন কেন্দ্রের ওই সমীক্ষায় যোগ দিতে গেল, এখন সেই প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সংগঠনের সম্পাদক বিভাস চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্সি পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে পারেনি। পরিকাঠামো ঠিক না-করেই সমীক্ষায় যোগ দেওয়া ঠিক হয়নি। মুখ পুড়ল আমাদের।’’ প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ওখানে শিক্ষকতার দিকটাই উপেক্ষিত। পরিকাঠামো খারাপ। ‘‘সমীক্ষায় যোগ দেওয়াটাই ভুল হয়েছে,’’ বলেন অমলবাবু।

উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া মন্তব্য না-করে এগিয়ে দিয়েছেন রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনারকে। রেজিস্ট্রার বলেন, ‘‘সকলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, অংশ গ্রহণ করা হবে কি না, সেটা তাঁরা ঠিক করবেন না। প্রতি বারেই সমীক্ষায় যাবে প্রেসিডেন্সি।’’ তিনি জানান, শিক্ষকের মান নয়, সংখ্যার বিচারে ও পরিকাঠামো সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয়ে তাঁরা কম নম্বর পেয়েছেন। ‘‘স্নাতক হওয়ার পরে পড়ুয়ারা কে কোথায় ঠাঁই পাচ্ছেন, সেই বিষয়ে আমরা অনেকের থেকে বেশি নম্বর পেয়েছি। সেটাই আমাদের শক্তি,’’ বললেন দেবজ্যোতিবাবু।

রেজিস্ট্রারের বক্তব্য মানতে নারাজ প্রাক্তন শিক্ষিকা শুক্লা সান্যাল। তিনি বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্সিতে স্বচ্ছতার অভাব আছে। কখনও শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, কখনও সরকার বদলি করে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ এ-সব নিয়ে নীরব।’’ অস্বচ্ছতার অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন রেজিস্ট্রার।

মুশকিল আসান কীসে?

‘‘কর্তৃপক্ষ যদি ৪১ র‌্যাঙ্ক হওয়ার কারণ বুঝতে পারেন, তা হলেই ভাল। সেটা শুধরে নিলেই সমস্যা মিটে যাবে,’’ নিদান হেঁকেছেন প্রেসিডেন্সি ছেড়ে যাওয়া সব্যসাচী ভট্টাচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

presidency university education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE