Advertisement
১৬ মে ২০২৪

বাজারে ‘আগুন’, ক্রেতা পেয়ে ধন্য ফুল

মানিকতলা এলাকার এক পুজো উদ্যোক্তা জানাচ্ছেন, ফুল কিনতে বাজারে গিয়ে দাম শুনে রীতিমতো ‘এপ্রিল ফুল’ হয়ে গিয়েছেন।

মল্লিকঘাট ফুল বাজারে বিকিকিনি। শুক্রবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

মল্লিকঘাট ফুল বাজারে বিকিকিনি। শুক্রবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

আর্যভট্ট খান
কৌশিক ঘোষ শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪৮
Share: Save:

দাম শুনলে চমকে উঠছেন ক্রেতারা। কিন্তু ফুল দেখে মন ভরছে না। মল্লিকঘাট ফুলবাজারে ফুল কিনতে এসে ক্রেতারা জানাচ্ছেন, প্রতি বার পুজোর আগে ফুলের দাম বেশি থাকে ঠিকই, কিন্তু এ বার ফুল কিনতে এসে আগুন দামে যে ভাবে হাত পুড়ছে, তা আগে হয়নি। পুজো উদ্যোক্তারা তাই মনস্থ করছেন মণ্ডপসজ্জায় আসল ফুলের সঙ্গে নকল ফুলও ব্যবহার করবেন।

একটি পদ্মের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা। কোথাও তারও বেশি। একশো গোলাপের দাম ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। এক কেজি রজনীগন্ধার দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। এই চড়া দামের ফুল হাতে নিলেও মন ভরছে না। কিন্তু অগত্যা বেশি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

দুর্গাপুজোয় সব চেয়ে বেশি চাহিদা থাকে পদ্মের। এ বারে তার ফলন অনেকটাই কম। সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, ‘‘ফুলের দাম বেশি হওয়ায় পুজোর সময়ে অসুবিধায় পড়েছেন ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই। অন্যান্য বছর বাজারে প্রতিটি পদ্ম চার থেকে পাঁচ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এ বার দাম অনেকটাই বেশি।’’

মানিকতলা এলাকার এক পুজো উদ্যোক্তা জানাচ্ছেন, ফুল কিনতে বাজারে গিয়ে দাম শুনে রীতিমতো ‘এপ্রিল ফুল’ হয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুজোর ফুলের জন্য বরাদ্দ অর্থ নিয়ে মল্লিকঘাটে গিয়েছিলাম। প্রয়োজনের অর্ধেক ফুলও কিনতে পারিনি।’’ প্রায় একই কথা জানান উল্টোডাঙা এলাকার এক পুজো উদ্যোক্তা। তাঁর মতে, এত বছর ধরে পুজো করছেন তাঁরা। এ বার ফুলের দামটা অন্য বারের তুলনায়
অনেকটাই বেশি।

দাম বেড়েছে রজনীগন্ধা, বেল, জুঁই, অপরাজিতা এবং দোপাটির। কেন এ বার ফুলের দাম এতটা বেশি? ফুলচাষি ও ফুল বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাই এর প্রধান কারণ। বর্ষার মরসুমে প্রথম দিকে অনাবৃষ্টি এবং পরে অতিরিক্ত বৃষ্টিকেই ফুলচাষের ক্ষতির জন্য দায়ি করছেন অনেকে।

ফুলচাষিরা জানান, এই রাজ্যে যে জেলাগুলিতে ফুল চাষ হয়, সেখানে এ বার প্রথম দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় আশানুরূপ ফুলের চাষ হয়নি। পরে এত বৃষ্টি হয় যে, পাপড়িযুক্ত ফুলের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যে সমস্ত ফুলগাছ রয়েছে সেগুলির গুণমান ভাল নয়। তা ছাড়াও যে সমস্ত ফুলের চারা পোঁতা হয়েছিল, সেগুলি সেপ্টেম্বরে অতিবৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে, সমস্ত মরসুমি ফুলের দাম এই মুহূর্তে আকাশছোঁয়া।

শুধু প্রকৃতিই নয়, ফুল বিক্রেতাদের অনেকের মতে ফুল চাষের সারের দাম ও মজুরিও এ বার বেশ অনেকটাই বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ফুলের দামে। নিউ মার্কেটের এক ফুল বিক্রেতা সুরজিৎকুমার দঁা বলেন, ‘‘যাঁরা ফুল চাষে মজুরের কাজ করতেন, তাঁদের অনেকে বেশি মজুরির আশায় ভিন্‌ রাজ্যে অন্য কাজে চলে গিয়েছেন। যাঁরা রয়েছেন তাঁরা মজুরি বাড়িয়েছেন। এ ছাড়া এ বার ভাল মানের সারের দামও বেশ বেশি।’’

তবে ফুলের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় অনেকেই মণ্ডপসজ্জায় বেশি ব্যবহার করছেন নকল ফুল। নিউ মার্কেটের এক ফুল বিক্রেতা জানান, নকল ফুলের সঙ্গে কয়েকটা আসল ফুল রেখে মণ্ডপ সাজাচ্ছেন পুজোর উদ্যোক্তারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Flower Marke Durga Puja 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE