Advertisement
০৪ মে ২০২৪

যাত্রীদের স্মার্ট-ভোগান্তি মেট্রোয়

হাতে পাওয়ার পরে এক মাসও পেরোয়নি। মেট্রোয় ঢোকার মুখে নতুন সেই স্মার্ট কার্ড ‘পাঞ্চ’ করতে গিয়েই বিপত্তি। প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার গেট খুলছে না। টিকিট কাউন্টারে যেতে কর্মীরা পরীক্ষা করে বললেন, কার্ড নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নতুন কার্ড করাতে হবে। সুতরাং ফের নানা ঝক্কি। স্টেশন মাস্টারের কাছ থেকে ফর্ম নিয়ে, সেই ফর্ম ভর্তি করে তার দু’টি ফোটোকপি-সহ পুরনো কার্ড জমা দিতে হবে। মাসখানেক পরে কার্ডের ব্যালান্স টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। বরাত ভাল হলে হয়তো কার্ডের দামও ফেরত মিলবে।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

হাতে পাওয়ার পরে এক মাসও পেরোয়নি। মেট্রোয় ঢোকার মুখে নতুন সেই স্মার্ট কার্ড ‘পাঞ্চ’ করতে গিয়েই বিপত্তি। প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার গেট খুলছে না। টিকিট কাউন্টারে যেতে কর্মীরা পরীক্ষা করে বললেন, কার্ড নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নতুন কার্ড করাতে হবে। সুতরাং ফের নানা ঝক্কি। স্টেশন মাস্টারের কাছ থেকে ফর্ম নিয়ে, সেই ফর্ম ভর্তি করে তার দু’টি ফোটোকপি-সহ পুরনো কার্ড জমা দিতে হবে। মাসখানেক পরে কার্ডের ব্যালান্স টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। বরাত ভাল হলে হয়তো কার্ডের দামও ফেরত মিলবে।

বছরখানেক হল, মেট্রোর নতুন স্মার্ট কার্ড এসেছে। কিন্তু সেই কার্ডের মান এতটাই খারাপ যে, বেশির ভাগ কার্ডই এক-দু’মাসের মধ্যে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ‘রিডিং’ নিচ্ছে না। প্রথমে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ ভেবেছিলেন, ক্রেতারা মানিব্যাগ বা পকেটে কার্ড রাখার জন্যই হয়তো সেগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরে দেখা যায়, এমন অভিযোগ অনেকেই করছেন। তখনই সমস্যাটি সামনে আসে।

যাত্রীদের অভিযোগ, পুরনো কার্ডগুলি দিব্যি বছরের পর বছর চলত। কিন্তু নতুন কার্ডগুলি কয়েক দিনের মধ্যেই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। দমদমের বাসিন্দা, মেট্রোর নিত্যযাত্রী তিথি ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘চার মাসে তিন-তিন বার কার্ড পাল্টালাম। কার্ডের টাকা ফেরত পেতে গিয়ে একগাদা ঝক্কি পোহাতে হয়। যে কার্ড জমা দিয়েছি, তা ভাঙাচোরা বা অন্য কোনও সমস্যা ছিল না। অথচ, দু’-দুবার কার্ডের জন্য যে অতিরিক্ত টাকা জমা নেওয়া হয়েছে, তা ফেরত পাইনি। বলা হয়েছে, কার্ড নাকি ভাঙা ছিল।’’

দমদম স্টেশনেই দিনে গড়ে ১০০টি বাতিল কার্ড জমা পড়ছে বলে মেট্রো রেল সূত্রের খবর। প্রতিদিন যাত্রীদের ক্ষোভের কথা শুনতে হচ্ছে রেলকর্মীদের। শুধু তা-ই নয়, প্রতিদিন এত সংখ্যক আবেদন জমা নেওয়া, সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করে উপরমহলে পাঠানো, তার পরে টাকা ফেরত এনে নগদে আবেদনকারীর কাছে পৌঁছে দিতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা কর্মীদেরও।

এক রেলকর্মীর কথায়, ‘‘এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় কর্মীর সংখ্যা অনেক কম। তার উপরে প্রতিদিন শুধু ১০০টি ফর্ম বিলি করাই নয়, সেই ফর্ম ভরার পরে আবেদন জমা নেওয়া এবং তার পরে অত জনকে টাকা ফেরত দিতে গিয়ে আমাদের নাকাল হতে হচ্ছে।’’

শুধু দমদমই নয়, বেলগাছিয়া, শ্যামবাজার, সেন্ট্রাল, চাঁদনি চক, এসপ্ল্যানেড, পার্ক স্ট্রিট, রবীন্দ্র সদন, কালীঘাট, মহানায়ক উত্তমকুমার, কবি নজরুলের মতো প্রায় প্রতিটি স্টেশনেই প্রতিদিন জমা পড়ছে এমন বাতিল কার্ড। টিকিট কাউন্টারের কর্মীদের কথায়, ‘‘নতুন যে কার্ড এসেছে, তার মান এতটাই খারাপ যে, প্রতিদিন যাত্রীদের গালমন্দ শুনতে হচ্ছে।’’

রেল সূত্রে খবর, আগে যে সংস্থা স্মার্ট কার্ড তৈরি করত, তাদের তৈরি কার্ডের মান অনেক ভাল ছিল। কার্ড নিয়ে কোনও অভিযোগ ছিল না। কিন্তু বছরখানেক আগে নতুন একটি সংস্থাকে স্মার্ট কার্ডের বরাত দেওয়া হয়। তার পরেই বিপত্তির শুরু। চিনা সংস্থা নির্মিত নতুন এই স্মার্ট কার্ড আগের চেয়ে কম দামে মিলছে বটে, তবে তার মান গিয়েছে নেমে। বিষয়টি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখনও সমাধান কিছুই হয়নি, জানিয়েছেন রেলকর্মীরাই। এখনও কাউন্টারে মিলছে নতুন ওই কার্ডই।

এ ব্যাপারে মেট্রোর জনসংযোগ অফিসার ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE