E-Paper

চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে, টানা ন’বছর জেলেও ছিলেন গার্ডেনরিচের প্রোমোটার

৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেপুরে ধসে পড়া বহুতলের নির্মাণ শুরু হয়েছিল বছর দেড়েক আগে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, প্রায় সাড়ে তিন কাঠা জায়গায় দু’টি বাড়ি ছিল। বছর কয়েক আগে ওয়াসিম বাড়ি দু’টি কিনে নেন।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৭:০৪
বাঁ দিকে, ধৃত প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম। ডান দিকে, নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়ার পরে উদ্ধারকাজে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

বাঁ দিকে, ধৃত প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম। ডান দিকে, নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়ার পরে উদ্ধারকাজে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ছবি: রয়টার্স।

বাম আমলে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের অনেক অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। গার্ডেনরিচের ফতেপুরে নির্মীয়মাণ বেআইনি বাড়ি ভাঙার প্রায় আট ঘণ্টা পর প্রোমোটার— সেই মহম্মদ ওয়াসিম ওরফে ওয়াসি-কে পুলিশ সোমবার গ্রেফতার করল।

পুলিশ জানিয়েছে, বড়বাজার থানা এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় টানা ন’বছর জেলে ছিলেন ওয়াসিম। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে মূলত জমি কেনাবেচার দালালির ব্যবসায় নেমে পড়েন। আর জমির দালালি থেকে প্রোমোটিংয়ে হাতেখড়ি বছর চারেক আগে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে তিনটি প্রকল্পে প্রোমোটিংয়ের কাজ করেছেন ওয়াসিম।

রবিবারের ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, পুরসভার অনুমতি না নিয়েই পুকুর ভরাট করে বহুতল তৈরি হলেও পুর প্রশাসন কেন জানতে পারল না? আর এই প্রশ্নে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধি শামস ইকবালের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘কাউন্সিলরের সঙ্গে প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওয়াসিমকে দেখা যেত। কাউন্সিলরের মদত ছাড়া ভূরি ভূরি বেআইনি বাড়ি নির্মাণে ছাড়পত্র মেলা অসম্ভব। তা ছাড়া, অন্য কয়েক জন তৃণমূল নেতার সঙ্গেও ওয়াসিমের ওঠাবসা ছিল।’’ দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ওয়াসিমের নিজের পাঁচতলা বাড়িটিও বেআইনি বলে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ।

স্থানীয় কংগ্রেস নেতা মহম্মদ মোক্তারও বলছেন, ‘‘প্রোমোটার ওয়াসিম স্থানীয় কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ ছিল। তাকে একা গ্রেফতার করে লাভ নেই। পুকুর ভরাট করে বেআইনি নির্মাণের কাজে যে সব বড় নেতা টাকা খাচ্ছে, তাদের গ্রেফতার করতে হবে।”

তবে পাঁচতলা বাড়িটির ক্ষেত্রে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে খোদ মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিম স্বীকার করলেও বেআইনি বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে কাউন্সিলরদের যুক্ত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তাঁর দাবি, “কোথায় কত বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, তা স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিদের জানা অসম্ভব।”

শামস নিজে অবশ্য এখনও মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। সকালে ঘটনাস্থলে মেয়রের পাশে তাঁকে দেখা যায়। কার্যত তাঁর দিকেই ইঙ্গিত করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, “এক জন কাউন্সিলর পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছেন। কোথা থেকে এল এই টাকা?” এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে কাউন্সিলরের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি ‘ব্যস্ত আছেন’ বলে এড়িয়ে যান। পরে ফের জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে এই ‘প্রোমোটার-সখ্য’ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রঞ্জিৎ শীল বলেন, “কোনও অনুষ্ঠানে কত রকমের মানুষ যান। প্রোমোটারদের কাজ করতে হলে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেপুরে ধসে পড়া বহুতলের নির্মাণ শুরু হয়েছিল বছর দেড়েক আগে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, প্রায় সাড়ে তিন কাঠা জায়গায় দু’টি বাড়ি ছিল। বছর কয়েক আগে ওয়াসিম বাড়ি দু’টি কিনে নেন। তারপর শুরু হয় বেআইনি নির্মাণ। বাড়িটির তিনতলা পর্যন্ত কাজ প্রায় শেষ হয়েছিল। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “দু’মাস আগে নীচের তিনটি তলায় বাসিন্দাদের আসার কথা ছিল। ভাগ্যিস কেউ আসেননি। না হলে আরও বড় বিপর্যয় হতে পারত।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Building Collapse NDRF Garden Reach

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy