প্রতীকী ছবি।
অভিযোগ দায়েরের প্রয়োজনই পড়ছে না! আইনের ধারা-উপধারা মেনে শাস্তিবিধান নিয়েও কি কেউ আর ভাবিত নন? তবে কি এ বার বিচার হবে ফেসবুকেই?
গত শুক্রবার সদ্যপ্রয়াত দিদার দেহ নিয়ে ২৭ বছরের নাতির ফেসবুক লাইভ দেখে নতুন করে সেই প্রশ্নই উঠছে। কেউ কেউ বলছেন, সহজেই কারও বিরুদ্ধে বলার সুযোগ থাকায় আইনের দ্বারস্থ হওয়ার পরিবর্তে ফেসবুকেই অভিযোগ জানিয়ে পোস্ট পড়ছে। অভিযোগ সত্যি কি না, সেই দায়িত্বও নিতে হচ্ছে না। সমাজমাধ্যমের এই তোপ থেকে বাদ পড়ছেন না চিকিৎসকেরাও। নিয়মমতো অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার জায়গায় এক প্রকার ‘দোষী’র তকমা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে কারও গায়ে। যাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়াই ফেসবুকে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তাঁরা পুলিশের সাইবার শাখার দ্বারস্থ হতেই পারেন। কিন্তু ক্ষতি তো হয়েই যাচ্ছে তার আগে।
গত শুক্রবার নারকেলডাঙার বাসিন্দা পেশায় চিত্রগ্রাহক ওই যুবক তাঁর দিদার দেহ নিয়ে ফেসবুক লাইভ করেন। রাত তিনটেয় দেহের পাশে বসে গান গাইতে গাইতে ওই যুবককে বলতে শোনা যায়, তাঁর দিদার জীবনের নানা যন্ত্রণার গল্প। যুবকের অভিযোগ, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ছেলে তাঁকে দেখেন না। সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাঁর দিদাকে বৃদ্ধাশ্রমেও রেখে এসেছিলেন তাঁর মামা। সঙ্গে ওই যুবকের দাবি, শেষ সময়ে বৃদ্ধাশ্রমে তাঁর দিদার বিছানায় পোকা হয়ে গিয়েছিল। মরণাপন্ন অবস্থায় তিনিই দিদাকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসেন।
রবিবার ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাঁর এক মামা এবং এক মাসি আছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এত লোক থাকতেও দিদাকে কেউ দেখেননি। সব সম্পত্তি নিয়ে নিয়েছিলেন মামা। খুব কষ্টে ছিলেন তিনি।’’ কিন্তু তিনি নিজে কেন দিদার পাশে দাঁড়াননি, সেই প্রশ্নও উঠছে। যুবকের অবশ্য দাবি, ‘‘মামারাই প্রথমে দিদাকে আনতে দেননি। পরে জোর করে নিয়ে আসি।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, মামারা আসবেন বলেই রাত ১১টা ১০ মিনিটে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হলেও গোটা রাত দেহ দেওয়া হয়েছে। এত অভিযোগ পুলিশে জানালেন না কেন? ওই যুবকের দাবি, ‘‘মায়ের কথা ভেবেই পুলিশে যাইনি।’’ ওই যুবকের মামার দাবি, ‘‘সমস্ত অভিযোগ ভুল।’’
ফেসবুক লাইভে থেকে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। গাড়ি চালাতে চালাতে লাইভ করতে গিয়ে চালকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। পুজোর ভিড়ে ফেসবুকে লাইভ করে পুলিশকে হুমকি দিতেও দেখা গিয়েছে। সেই তালিকাতেই এ বার যুক্ত হল মৃতদেহ নিয়ে ফেসবুক লাইভ।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভার্চুয়াল জীবনকে অত্যধিক প্রাধান্য দেওয়ার ফলেই এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মনোরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় গর্গ বলেন, ‘‘বাস্তব জীবনে কতটা দায়িত্ব পালন করা হল, তা নিয়ে এই প্রজন্ম চিন্তিত নয়। কারণ, তাঁদের কাছে ভার্চুয়াল জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’ শুধু তা-ই নয়, অনেকে বলছেন ফেসবুকই হল নতুন সালিশি সভা। মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের কথায়, ‘‘সালিশি সভার নতুন রূপ হচ্ছে ফেসবুক। এখানে সহজেই নিজের প্রচার পাওয়া যায়।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক ডালিয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনে অভিযোগ করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। তার থেকে ফেসবুকে অভিযোগ জানালে সহজেই পছন্দমতো প্রতিক্রিয়া মেলে। সহজ পথটাই বেছে নেওয়া হচ্ছে বারবার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy