E-Paper

‘প্রভাবশালী’ নেতাদের ভর্তি করা হোক অন্যত্র, দাবি এসএসকেএমের

চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, ‘‘জেলবন্দি রাজনৈতিক নেতারা অসুস্থ হলে শুধু কেন এসএসকেএমেই আনা হবে? আমরা তো কাউকে নিয়ে আসতে বলি না। শহরের তো আরও সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে।”

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:৩৮
An image of SSKM Hospital

এসএসকেএম হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

কেউ বলেন, প্রভাবশালীদের ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল’। কেউ আবার অভিযোগ তোলেন, জেলবন্দি নেতাদের হাসপাতালে ইচ্ছাকৃত ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। কখনও আবার বলা হয়, রাজ্যের অন্যতম সুপার স্পেশ্যালিটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এসএসকেএম ক্রমশ পরিণত হচ্ছে ‘রাজনৈতিক হাসপাতাল’-এ!

সম্প্রতি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুর কার্ডিয়োলজি বিভাগে ভর্তি থাকা নিয়ে এ হেন অভিযোগের তিরে বিদ্ধ এসএসকেএম। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কিংবা সাধারণ মানুষ, সকলের প্রশ্নের মুখে বিরক্ত ও বিব্রত চিকিৎসকদের অনেকেই। প্রত্যেকেরই প্রশ্ন, ‘‘কেন বার বার তাঁদের এমন অভিযোগের মুখে পড়তে হবে? কেন অহেতুক মানসিক চাপ নিতে হবে? এর থেকে পরিত্রাণের কি কোনও উপায় নেই?’’ গত বছর পিজিতে অনুব্রত মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ভর্তি রাখা নিয়েও বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে মদন মিত্র, আরাবুল ইসলামের মতো অভিযুক্ত নেতারা এসে ভর্তি হয়েছেন এই হাসপাতালে। যা নিয়ে প্রতি বারেই তির্যক মন্তব্য শুনতে হয়েছে চিকিৎসকদের।

এখন সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহে পিজি হাসপাতাল অসহযোগিতা করছে বলে
অভিযোগ তুলছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। যা শুনে চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, ‘‘জেলবন্দি রাজনৈতিক নেতারা অসুস্থ হলে শুধু কেন এসএসকেএমেই আনা হবে? আমরা তো কাউকে নিয়ে আসতে বলি না। শহরের তো আরও সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। সেখানেও তাঁদের ভর্তির ব্যবস্থা চালু করা হোক।’’

এই মুহূর্তে কালীঘাটের কাকুকে নিয়ে ফের শুরু হয়েছে বিতর্ক। জোকা ইএসআই-তে নিয়ে যাওয়ার আগের রাতে আচমকা তাঁকে আইসিসিইউতে পাঠানো হল কেন, তা নিয়েও চলছে বিভিন্ন জল্পনা, সমালোচনা। এতেই আপত্তি চিকিৎসকদের। তাঁদের একাংশ বলছেন, ‘‘কেন শুনতে হবে ইচ্ছাকৃত আটকে রেখেছি? যে হাসপাতালে তাঁর বাইপাস করা হয়েছিল, পরবর্তী কালে সমস্যা হওয়ায় সেখানে নিয়ে যাওয়া হল না কেন?’’ তাঁদের আরও বক্তব্য, ‘‘প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে এসেও দেখাতে পারেন। কিংবা ইডি বন্ড দিয়ে রোগীকে নিয়েও যেতে পারে, সেটাও ইডির আধিকারিকদের বলেছি। কিন্তু ইডি হস্তান্তর চাইছে।’’

সূত্রের খবর, সুজয়কৃষ্ণের যে হৃৎপিণ্ডের প্রধান তিনটি ধমনীতে ব্লক রয়েছে, সেটা প্রথম ধরা পড়ে পিজিতে। এর পরে বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর বাইপাস হয়। জেলে আচমকা বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় পিজিতে নিয়ে এলে কার্জিয়োলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এর পরে আচমকা এক দিন হৃদ্‌যন্ত্রে কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাঁকে কয়েক দিন আইসিসিইউতে-তে রাখা হয়। গত শুক্রবার সকালে সুজয়কৃষ্ণকে জোকায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সূত্রের খবর, সেই মতো চিকিৎসক-সহ সব আয়োজন প্রস্তুত করে আগের দিন রাতে ইডিকে ইমেল করে জানান এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাত ১টা নাগাদ আচমকাই সুজয়কৃষ্ণের রক্তচাপ দ্রুত কমতে শুরু করে। নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়ায় তড়িঘড়ি তাঁকে ফের আইসিসিইউ-তে পাঠানো হয়।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, শুক্রবার সকাল ৭টার সময়েই সমস্ত নথি-সহ ইডিকে সে কথা জানিয়েও দেওয়া হয়। বলা হয়, ফের হৃদ্‌যন্ত্রে কিছু সমস্যা ধরা পড়েছে সুজয়কৃষ্ণের।

পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘বিচারাধীন বন্দিদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকতে হয়। তাঁদের ভর্তি না নিলে এবং ভর্তির পরেও কিছু খারাপ ঘটে গেলে, সেই দায় পুরো এসে পড়বে হাসপাতালের উপরেই।’’ গত বছর পার্থ চট্টোপাধ্যায় সংক্রান্ত একটি মামলায় এসএসকেএম প্রভাবশালীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে বলে নির্দেশনামায় উল্লেখ করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতিও। প্রতি মুহূর্তে অভিযোগ ও সমালোচনার যে ঝড় উঠছে, তাতে চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, ‘‘মানুষও তো ভুল ভাবছেন। তা হলে সব দায় কি আমাদেরই? এর শেষ কবে?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSKM Hospital TMC Leaders Political Leaders

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy