Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Ban on Fire Crackers

পাহাড়প্রমাণ বাজি নিয়ে কী করবে পুলিশ, কী ভাবেই বা নিষ্ক্রিয় করা হবে? উঠেছে প্রশ্ন

গত রবিবার বজবজে বিস্ফোরণের পরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বারুদ ভর্তি একটি ড্রাম বাজেয়াপ্ত করেছিল। গার্ডরেল দিয়ে সেটি ঘিরে ফেলে রাখা হয়েছিল থানা চত্বরেই।

An image of Fire Crackers

একের পর এক বাজি বিস্ফোরণ ও তাতে মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নবান্নের নির্দেশে নড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন। নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৩ ০৬:৫০
Share: Save:

একের পর এক বাজি বিস্ফোরণ ও তাতে মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নবান্নের নির্দেশে নড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন। জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে অভিযান, চলছে ধরপাকড়ও। শুধুমাত্র মহেশতলা, বজবজ এবং নোদাখালির ‘বাজি মহল্লা’ থেকেই বুধবার রাত পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার কিলোগ্রাম বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৫০ কোটি টাকা!

কিন্তু, পাহাড়প্রমাণ বাজি নিয়ে পুলিশ কী করবে? কী ভাবেই বা সেগুলি নিষ্ক্রিয় করা হবে? প্রশ্ন উঠেছে, এই মুহূর্তে বারুদের স্তূপে থাকা থানাগুলিতে সামান্য অসতর্কতায় কোনও বিপদ ঘটে যাবে না তো?

গত রবিবার বজবজে বিস্ফোরণের পরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বারুদ ভর্তি একটি ড্রাম বাজেয়াপ্ত করেছিল। গার্ডরেল দিয়ে সেটি ঘিরে ফেলে রাখা হয়েছিল থানা চত্বরেই। পরদিন সোমবার বেলার দিকে সেই ড্রামে থাকা বারুদে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে দমকলকর্মীরা পৌঁছে ড্রামের আগুন নেভান। পুলিশের তরফে প্রাথমিক ভাবে বলা হয়, রোদের তাপ থেকে আগুন লেগে গিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তাপে এমন ঘটতে পারে জানা সত্ত্বেও বারুদ ভর্তি ড্রাম বিপজ্জনক ভাবে ফেলে রাখা হল কেন?

মহেশতলা থানা চত্বরেও দেখা গিয়েছে, বস্তা বস্তা বাজি খোলা পড়ে আছে। ওই থানা ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার অধীনে। বুধবার এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ওই পুলিশ জেলার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘সব বাজি তো একসঙ্গে সরানো যায় না।’’ কিন্তু কোথায় বা কী ভাবে এত বাজি নিষ্ক্রিয় করা হবে, সেই উত্তর মেলেনি। মঙ্গলবার রাতের দিকে দেখা গিয়েছে, পে-লোডারের সাহায্যে তুলে লরিতে বোঝাই করা হচ্ছে বাজি।

অথচ এর আগেও প্রশাসনের জিম্মায় থাকা বাজিতে বিপদ দেখেছে নৈহাটি ও চুঁচুড়া। সেখানে মজুত করে রাখা বাজি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে বিস্ফোরণের অভিঘাতে ছাদ খসে, চাল উড়ে, জানলার কাচ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রায় ৫০০টি বাড়ি। শিশু-সহ আহতের সংখ্যাও ছিল তিন। সে কথা মনে করিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানাচ্ছে, বিপুল বাজি জমিয়ে রাখা কোনও মতেই উচিত নয়। বাজি নিষ্ক্রিয় করতে জল বা আগুনের ব্যবহারও পরিবেশ-আইন বিরুদ্ধ। কারণ, বাজি পোড়ালে বায়ু দূষিত হবে। জলে তা নিষ্ক্রিয় করলে বিষাক্ত জল ভূগর্ভে যাবে।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরামর্শ, হলদিয়ায় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সেখানকার জমিতে কয়েকটি অতিকায় প্লাস্টিকের জলাধার থাকে। ওই জলাধারে লোহার পাটাতন পাতা হয়। তাতে ঢালা হয় ইট, সুরকি ও বালির মিশ্রণ। তার উপরে রাখা হয় বাজি। সেই বাজির উপরে ওই মিশ্রণের আর একটি স্তর ঢেলে জলাধারের মুখ আটকে মাটির গভীরে গেঁথে দেওয়া হয়। যা কয়েক বছর পরে বোল্ডারে পরিণত হয়। সেগুলি তুলে বোল্ডার হিসেবেই ব্যবহার করা যায়।

বাজি ব্যবসায়ীরা আবার জানাচ্ছেন, নিষ্ক্রিয় নয়, এমন বাজি রাখতে ‘সেফ হাউস' ভাড়াও পাওয়া যায়। বিস্ফোরক আইনে বাজি রাখার সেফ হাউসগুলিকে ‘ম্যাগাজ়িন’ বলা হয়। কয়েক বিঘা ফাঁকা জায়গায় ৪০০-৫০০ মিটার লম্বা ঘর বানিয়ে তৈরি হয় ম্যাগাজ়িন। এমন ঘরের চার দিকে পরিখার মতো জলাশয় তৈরি করা হয়। ঘরগুলি হতে হয় তাপ নিরোধক। ঘরের ছাদের নীচে কয়েক স্তরের ছাউনি দিয়ে তার পরে বাজি রাখতে হয়।

শর্ট সার্কিট বা অন্য কোনও বিপদ এড়াতে ওই সব ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে না।

অগ্নিকাণ্ড এড়াতে মোমবাতি নিয়ে ঢোকাও নিষিদ্ধ। এখানে কার্টনপিছু এক বছরের ভাড়া অন্তত ৫০০ টাকা।

পুলিশ এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, বাজেয়াপ্ত বাজি এত টাকা ভাড়া দিয়ে রাখবে না সরকার। জেলা পুলিশের একটি সূত্রের খবর, বাজি নিষ্ক্রিয় করার খরচ কে দেবে, সেই

আলোচনা এখন চলছে। যত ক্ষণ না সিদ্ধান্ত হচ্ছে, অভিযান থেকে বাজেয়াপ্ত বাজি আপাতত সতর্ক হয়ে রাখার নির্দেশ এসেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে

ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপার রাহুল গোস্বামীকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ban on fire crackers Fire Crackers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE