Advertisement
E-Paper

কমিশনের লোভেই বাস এত বেপরোয়া

বাসে কমিশন প্রথা নতুন নয়। দু’টি বাসে রেষারেষির কারণও যে কমিশন, তা-ও প্রশাসনের অজানা নয়। প্রশ্ন উঠেছে, তা সত্ত্বেও কখনও কোনও সরকারই কেন কমিশন প্রথা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে না? পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, বাম আমলে ২০০২ সালে এক বার সেই চেষ্টা হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ০১:৩১
বিপজ্জনক: প্রায় মসৃণ হয়ে গিয়েছে স্টেপনি। তা নিয়েই পথে বেরিয়েছিল হাওড়া ব্রিজে দুর্ঘটনায় পড়া মিনিবাসটি। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

বিপজ্জনক: প্রায় মসৃণ হয়ে গিয়েছে স্টেপনি। তা নিয়েই পথে বেরিয়েছিল হাওড়া ব্রিজে দুর্ঘটনায় পড়া মিনিবাসটি। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

কমিশন বাড়বে যাত্রী বেশি তুলতে পারলে। যাত্রী বেশি তুলতে হলে সামনের বাসকে ওভারটেক করতে হবে। আর এই রেষারেষিতেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। ঠিক যেমন শুক্রবার ঘটেছে হাওড়া ব্রিজে। এ দিনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অবশ্য শুধু রেষারেষি নয়, অতিরিক্ত যাত্রী তোলাও অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসছে।

বাসে কমিশন প্রথা নতুন নয়। দু’টি বাসে রেষারেষির কারণও যে কমিশন, তা-ও প্রশাসনের অজানা নয়। প্রশ্ন উঠেছে, তা সত্ত্বেও কখনও কোনও সরকারই কেন কমিশন প্রথা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে না? পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, বাম আমলে ২০০২ সালে এক বার সেই চেষ্টা হয়েছিল। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরে পরেই ফের একই চেষ্টা হয়। কিন্তু বেসরকারি বাসে কমিশন প্রথা রয়ে গিয়েছে একই বিন্দুতে।

এই প্রথা তুলে দেওয়ার জন্য ২০০২ সালে তদানীন্তন রাজ্য সরকারের কাছে যে কমিটি রিপোর্ট পেশ করেছিল, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন সিটু নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায়। সুভাষবাবু জানান, সে সময়ে বাসমালিকদের বলা হয়েছিল কমিশন প্রথা তুলে চালক ও কন্ডাক্টরদের জন্য মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করুক সরকার। দিনে আট ঘণ্টা কাজ অথবা সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না চালক, কন্ডাক্টরেরা। কিন্তু ওই রিপোর্ট কোনও দিনই বাস্তবায়িত হয়নি। কেন? সুভাষবাবুদের দাবি, ‘‘সরকারের তরফে বাসমালিকদের নিয়ে একটা ঐকমত্যে আসার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বাসমালিকেরা রাজি হননি।’’

এখন বাস-শিল্প যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, তাতে কমিশন প্রথা কখনওই তুলে দেওয়া যাবে না বলে দাবি সুভাষবাবুদের। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের আমলে শাসক দলের নানা গোষ্ঠীকে টাকা দিতে দিতে জেরবার মালিকেরা। তা ছাড়া, এখন বাস-শিল্পও আর আগের মতো লাভজনক নয়। এখন এ সব করতে গেলে শিল্পটাই উঠে যাবে।’’

শিল্প উঠে যাক বা না-যাক, কমিশন প্রথা যে তাঁরা মানবেন না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মিনিবাস মালিকদের সংগঠনের নেতারা। মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁ-র বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে কর্মসংস্কৃতির যা হাল, তাতে মাস-মাইনে চালু হলে আর বাস চালানোই যাবে না। সরকারি বাস এ জন্যই লাভের মুখ দেখে না।’’ তা হলে কমিশনের জন্য এমন রেষারেষি চলবেই, আর তার ফলে দুর্ঘটনাও ঘটতেই থাকবে? অবশেষবাবুদের দাওয়াই, ‘‘গলদটা গোড়াতেই। দুর্ঘটনা হলে বা চালক বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালালে তার জন্য জরিমানা দিতে হয় মালিকদের। আমরা বহু বার পুলিশকে এই প্রথা বদলের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু ফল হয়নি।’’

কী বলছে সরকার? বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী থেকে কর্তা, কেউই মন্তব্যে রাজি হননি। তবে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বেসরকারি মালিকদের জোর করে সরকার কিছু করতে পারে না। তা ছাড়া, বাসমালিকদের যুক্তি কিছুটা হলেও ঠিক। সে কারণে আমরা কমিশন বন্ধের চেয়ে বেপরোয়া গাড়ি চালানো আটকানোর ব্যাপারে অনেক বেশি কড়া হওয়ার চেষ্টা করছি। তাতেই একমাত্র দুর্ঘটনা কমতে পারে।’’

Reckless Driving Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy