Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রেড রোড কাণ্ড: তৃণমূল নেতা ও তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি

গত কাল তল্লাশি চালিয়ে তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহরাবের ছোট ছেলে সাম্বিয়ার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার পর আজ হুলিয়া (‘লুক আউট নোটিশ’) জারি করা হল সোহরাব ও তাঁর দুই ছেলে আম্বিয়া ও সাম্বিয়ার বিরুদ্ধে। রেড রোডে গত কাল সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজের মহড়া চলার সময়ে তৃণমূল নেতার ছেলের বেপরোয়া গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে এক বায়ুসেনা অফিসারের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের কাছে বৃহস্পতিবার তাঁদের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেছেন ডিসি (ট্র্যাফিক), ডিসি (সাউথ) ও প্রথম ব্যাটেলিয়নের ডেপুটি কমিশনার।

এই সেই গাড়ি।—ফাইল চিত্র।

এই সেই গাড়ি।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৬ ২০:১৪
Share: Save:

গত কাল তল্লাশি চালিয়ে তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহরাবের ছোট ছেলে সাম্বিয়ার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার পর আজ হুলিয়া (‘লুক আউট নোটিশ’) জারি করা হল সোহরাব ও তাঁর দুই ছেলে আম্বিয়া ও সাম্বিয়ার বিরুদ্ধে। রেড রোডে গত কাল সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজের মহড়া চলার সময়ে তৃণমূল নেতার ছেলের বেপরোয়া গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে এক বায়ুসেনা অফিসারের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের কাছে বৃহস্পতিবার তাঁদের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেছেন ডিসি (ট্র্যাফিক), ডিসি (সাউথ) ও প্রথম ব্যাটেলিয়নের ডেপুটি কমিশনার। ঠিক হয়েছে, পরশু রেড রোডে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজের মহড়ার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফের খতিয়ে দেখা হবে। ওদিকে, চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের ডিসি ডিডি (২) নগেন্দ্র ত্রিপাঠির নেতৃত্বে ২২ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্তকারী দলও (সিট) গড়েছে রাজ্য সরকার।

গত কাল সেনাবাহিনীর প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া চলার সময়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে একটি গাড়ি ঢুকে পড়ে। ওই বেসামাল গাড়িটি বায়ুসেনার কর্পোরাল অভিমন্যু গৌড়কে ধাক্কা মেরে হিঁচড়ে খানিক দূর নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়। তার পর তাঁকে সেখানে ফেলে রেখেই গাড়িটা আবার গতি বাড়িয়ে এগিয়ে যায় খিদিরপুরের দিকে। সেনা-পুলিশ ধাওয়া করে যখন সেই গাড়ির কাছে পৌঁছয়, তত ক্ষণে আরোহীরা চম্পট দিয়েছে। নম্বর প্লেটও নেই। কাগজে লেখা নম্বর সদ্য ছিঁড়ে দিয়েছে কেউ।

আরও পড়ুন- অডি কাণ্ড: পুলিশের উপর ভরসার প্রশ্নে দ্বিধায় সেনাবাহিনী

কম্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় কলাইকুণ্ডা বিমানঘাঁটিতে কর্মরত ২১ বছরের অভিমন্যুর। বুধবার ভোরের এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে গাড়ির কাগজপত্র থেকে আম্বিয়া সোহরাব নামে এক যুবকের নাম উঠে আসছে। তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহরাবের বড় ছেলে এই আম্বিয়া।

প্রাক্তন আরডেজি বিধায়ক সোহরাবের দুই ছেলে। আম্বিয়া বড়। কাগজপত্র বলছে, দিন কয়েক আগে ৯০ লক্ষ টাকায় তিনিই ওই গাড়িটি কেনেন। পুলিশের বক্তব্য, কলকাতায় এর আগে একাধিক বার বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে ধরা পড়েছেন আম্বিয়া। বাবার প্রভাবে ছাড় পেয়েছেন প্রত্যেক বারই! তবে এ দিন তিনিই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন কি না বা আদৌ গাড়িতে ছিলেন কি না, নিশ্চিত নয় পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের একাংশের দাবি, নিজেদের সংস্থার নামে গাড়িটি কিনে আম্বিয়া সেটি উপহার দিয়েছিলেন তাঁর ভাই সাম্বিয়া সোহরাবকে। সদ্য-বিবাহিত সাম্বিয়া সেই গাড়ি চালানো শুরুও করে দেন বলে খবর। তাই এ দিন গাড়িতে সাম্বিয়াও থাকতে পারেন বলে পুলিশের একাংশের সন্দেহ। পরিবারের যদিও দাবি, বিয়ের পর বাইরে বেড়াতে গিয়েছেন সাম্বিয়া। বুধবার দিনভর দুই ভাইয়েরই দেখা মেলেনি। যদিও পুলিশ সূত্রের দাবি, মোবাইল লোকেশন দেখে জানা গিয়েছে, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পার্ক স্ট্রিট এলাকায় ছিলেন দু’জনেই। রাতে জোড়াসাঁকো ও রিপন স্ট্রিটে দু’টি বাড়িতে গিয়েও সোহরাব বা তাঁর ছেলেদের দেখা মেলেনি।

তদন্তে নেমে শানু নামে এক যুবকেরও নাম পেয়েছে পুলিশ। সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার ভোর রাত পর্যন্ত একটি পানশালায় আরও দুই যুবকের সঙ্গে ছিলেন শানু। সেই পানশালার বাইরে একটি অডি গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল— এমনও বলছেন কেউ কেউ। নিশ্চিত হতে ওই পানশালার সিসিটিভি ফুটেজ চাইবে পুলিশ।

তদন্তে জানা গিয়েছে, গাড়িটির আদৌ রেজিস্ট্রেশনই হয়নি! সেটি চলছিল ‘ট্রেড সার্টিফিকেট’ (টিসি) নম্বর নিয়ে। কাগজে সম্ভবত সেটিই লেখা ছিল। কেন্দ্রীয় মোটর ভেহিকেলস আইন (১৯৮৯)-এর ৪২ ধারা বলছে, গাড়ি ডিলারদের নিজস্ব কাজে ব্যবহারের জন্য ওই ‘টিসি নম্বর’ দেওয়া যাবে। এই নম্বরটি ক্রেতার ব্যবহারের জন্য নয়। এই ঘটনায় তাই সংশ্লিষ্ট গাড়ি-ডিলারকেও শো-কজ করা হয়েছে।

এ দিনের ঘটনা আরও এক বার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে শহরের নিরাপত্তা নিয়ে (খবর পৃঃ ৬)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুচকাওয়াজের মহড়া চলছে বলে এলাকাটি একাধিক গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। এ দিন ভোরে হসপিটাল রোডের সামনে প্রথম গার্ডরেল উড়িয়ে দিয়ে গাড়িটি খিদিরপুর রোড ও প্রণবানন্দ সরণির মোড়ে এসে দ্বিতীয় গার্ডরেলে ধাক্কা মারে। তার পর রেড রোডের কাছে এসে একেবারে উল্টোমুখে ঘুরে প্রচণ্ড গতিতে গিয়ে পড়ে জওয়ানদের মাঝখানে। এক পুলিশ অফিসার জানান, অভিমন্যুকে ধাক্কা মেরে খিদিরপুর রোডে কিছু দূর এগিয়ে গাড়িটি থেমে যায়। সেটির এয়ারব্যাগ খুলে গিয়েছিল। সূত্রের দাবি, সেই সময়েই গাড়ি নেমে পালিয়ে যান একাধিক যুবক।

খবর পেয়ে কম্যান্ড হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। গাড়িটি ব্যরিকেড ভেঙে ঢুকে পড়েছিল। কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ দুপুরে ময়দান থানার পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে। পুলিশ কমিশনার সুরজিত্ কর পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গার্ড রেল ভেঙে কী ভাবে গাড়িটি ঢুকে পড়ল, তা-ও আমরা দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

red road incident ambia sambia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE