Advertisement
E-Paper

নিউ টাউনে পণ্যবাহী লরিতে বিধি-নিষেধ

গত মাসের ২২ তারিখের ঘটনা। নিউ টাউনে একটি স্কুলবাসকে ধাক্কা মারে একটি লরি। আহত হয় বেশ কয়েকজন পড়ুয়া। ওই ঘটনার পরে রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকায় দিনের বেলায় পুলিশ যাতে মালবাহী গাড়ির যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করে, সে জন্য স্কুলগুলির তরফে আবেদন করা হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৪৯

গত মাসের ২২ তারিখের ঘটনা। নিউ টাউনে একটি স্কুলবাসকে ধাক্কা মারে একটি লরি। আহত হয় বেশ কয়েকজন পড়ুয়া।

ওই ঘটনার পরে রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকায় দিনের বেলায় পুলিশ যাতে মালবাহী গাড়ির যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করে, সে জন্য স্কুলগুলির তরফে আবেদন করা হয়েছিল। সেই অনুরোধ মেনে বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সব ধরনের মালবাহী গাড়ি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল পুলিশ। ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাগুইআটি, লেকটাউন, ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স, নিউ টাউন, রাজারহাট, বিধাননগরের তিনটি থানা এলাকার পাশাপাশি কলকাতা বিমানবন্দর থানা এলাকাতেও এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আর এতেই মাথায় হাত পড়েছে বিমানসংস্থাগুলির। কারণ, এই নির্দেশের অর্থ সারা দিন ধরে বিমানবন্দরে পণ্য নিয়ে যাতায়াত করতে পারবে না কোনও মালবাহী গাড়ি। দিল্লি থেকে স্পাইসজেটের ভাইস প্রেসিডেন্ট অজয় জসরা বলেন, ‘‘আমরা প্রতি দিন গড়ে ২৫ টন পণ্য আমদানি-রফতানি করি। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দিনে ১০-১১ লক্ষ টাকার লোকসান হবে।’’ ইন্ডিগো জানিয়েছে, দিনে গড়ে ৭০ টন পণ্য যাতায়াত করে তাদের বিমানে। এই নির্দেশ কার্যকর হলে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এক অফিসারের কথায়, ‘‘সারা দিন ৪০ জন লোককে বসিয়ে বেতন দিতে হবে। তাঁদের কোনও কাজ থাকবে না।’’

প্রশ্ন উঠেছে, রাত ন’টার পরে পণ্য ঢুকলে ক্ষতি কী? বিদেশি বিমানসংস্থা কাতার এয়ারলাইন্সের এক কর্তার কথায়, ‘‘বিমানবন্দরে পণ্য পৌঁছনোর পরে আরও অনেক পদ্ধতি থাকে। শুল্ক দফতরের ছাড়পত্র নিতে হয়। সারা দিন ধরে কাজ চলতেই থাকে। ফলে সারা দিন পণ্য না ঢুকতে পারলে সেই কাজ হবে না। রাতে শুল্ক অফিসারদের পাওয়া যাবে না ও ভয়ঙ্কর সমস্যার সৃষ্টি হবে।’’

বিমানবন্দর দিয়ে যাঁরা পণ্য আমদানি-রফতানি করেন, সমস্যায় পড়েছেন সেই সংস্থাগুলিও। যাঁরা অত্যাবশ্যক পণ্য বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত, সেই সব সংস্থার সমস্যা আরও গভীর। শাক-সবজি, মাছ, ফল, ফুল — যা বেশি দিন রাখা যায় না, সেগুলি আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেবে। সারা দিন ধরে বিমানবন্দরে পণ্যবাহী মাল না ঢুকলে রাজস্ব আদায়েরও ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে দাবি ওই সংস্থাগুলির।

কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে সমস্ত পণ্য আমদানি-রফতানি ক্লিয়ারিং এজেন্টদের মাধ্যমে হয়। তাঁদের যুক্তি, শুল্ক দফতরে পণ্য পরীক্ষার পরে বিকেল ৩টের মধ্যে চালানপত্র তৈরি শেষ করতে পারলেই সন্ধ্যার বিমানে পণ্য পাঠানো যায়। যে বিমান গভীর রাতে ছাড়ে, তার ক্ষেত্রে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব কিছু জমা করতে হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত মালবাহী গাড়ি বিমানবন্দরে না এলে শুল্ক দফতরের পরীক্ষা, কাগজপত্র তৈরি— কিছুই হবে না। পণ্য পড়ে থাকবে।

‘ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালকাটা’-র বিমানবন্দরের সদস্য পূর্ণচন্দ্র মাইতি বলেন, ‘‘এমনিতেই এ রাজ্যের রফতানির হাল খারাপ। তার পরে এই নির্দেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। দিনের আসল ১৪ ঘণ্টা গাড়ি যাতায়াত করতে না পরলে আমদানি-রফতানি হবে কখন?’’

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেব্‌ল এক্সপোর্টার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক মৃণাল সিংহ বলেন, ‘‘এ রাজ্যে আমাদের অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে বিদেশে ফল-সবজি রফতানি করতে হয়। ইউরোপীয় দেশগুলি এ সব ফল ও সব্জির মানের ব্যাপারে দিনে দিনে কড়া হচ্ছে।’’ মৃণালবাবুর আশঙ্কা, ২৪ ঘণ্টা কোনও মালপত্র বিমানবন্দরে ফেলে রাখার পরে রফতানি করলে ওই দেশগুলি ফেরত পাঠিয়ে দেবে। তাঁদের আর রফতানি করার ক্ষমতাও থাকবে না।

কলকাতা বিমানবন্দরের ‘কার্গো ফেসিলিটেশন কমিটি’-র চেয়ারম্যান সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের লুইস আলফানসো-র কথায়, ‘‘এই সমস্যার সমাধান করতেই হবে। এ ভাবে পণ্য পরিষেবা পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে না।’’ জানা গিয়েছে, এজেন্টদের তরফে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা সব খতিয়ে দেখব। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় প্রচুর স্কুলগাড়ি যাতায়াত করে। মূলত তাদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সারা দিন ধরে মালবাহী গাড়ি যথেচ্ছ যাতায়াত করবে, এটা আমরা মেনে নেব না। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কী ভাবে ছাড় দেওয়া যায়, তা ভেবে দেখা যেতেই পারে।’’

New Town Freight truck Police control mangment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy