Advertisement
০৫ মে ২০২৪

নামেই ‘নো হর্ন জোন’, ভ্রুক্ষেপ নেই চালকদের

লাইন দিয়ে ছোটখাটো খাবারের দোকানের ভিড়ে কার্যত হাঁটাই দায়। এবড়োখেবড়ো ফুটপাথ এড়িয়ে বাধ্য হয়ে পথচারীরা নেমেছেন রাস্তায়। সোমবার দুপুরে দেখা গেল, মেডিক্যালের প্রবেশপথের ঠিক সামনে নাগাড়ে বেজে চলেছে গাড়ির হর্ন।

দণ্ড: হেলমেট না পরার জন্য নয়। স্কুটার থামিয়ে জরিমানা আদায় শুরু হর্ন বাজানোর অভিযোগে। সোমবার, কলেজ স্ট্রিটে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দণ্ড: হেলমেট না পরার জন্য নয়। স্কুটার থামিয়ে জরিমানা আদায় শুরু হর্ন বাজানোর অভিযোগে। সোমবার, কলেজ স্ট্রিটে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭ ০১:১৪
Share: Save:

দুপুর ১টা: চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও কলুটোলা স্ট্রিটের মোড়

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশ দিয়ে কলেজ স্ট্রিটের দিকে যাওয়ার জন্য সার দিয়ে দাঁড়িয়ে মালবোঝাই ভ্যান। ওই রাস্তা সব সময়েই একমুখী। কিন্তু সে নিয়ম মানছে কে! উল্টো দিক থেকে আসা কয়েকটি ভ্যানও কলুটোলা স্ট্রিটে আটকে। সিগন্যাল সবুজ। কিন্তু চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে কোনও গাড়ি কলেজ স্ট্রিটের দিকে ঘুরতে পারছে না। বাধ্য হয়েই লাগাতার হর্ন বাজিয়ে চলেছেন চালক। পাশেই দাঁড়িয়ে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক কনস্টেবল। ‘‘এই রাস্তা তো ‘নো-হর্ন জোন’। কিন্তু একটানা তীব্র শব্দে হর্ন বেজে চলেছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে না?’’ ওই কনস্টেবলের জবাব, ‘‘দাদা, এটা আমার কাজ নয়। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে সার্জেন্ট কেস দেন। তা ছাড়া একই রাস্তায় মালবোঝাই ভ্যান, গাড়ি চলছে। হর্ন বাজানো ছাড়া তো চালকের উপায়ও নেই।’’

দুপুর ১-৩০: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উত্তর দিকের ফুটপাথ

লাইন দিয়ে ছোটখাটো খাবারের দোকানের ভিড়ে কার্যত হাঁটাই দায়। এবড়োখেবড়ো ফুটপাথ এড়িয়ে বাধ্য হয়ে পথচারীরা নেমেছেন রাস্তায়। সোমবার দুপুরে দেখা গেল, মেডিক্যালের প্রবেশপথের ঠিক সামনে নাগাড়ে বেজে চলেছে গাড়ির হর্ন। কর্তব্যরত এক পুলিশ কনস্টেবলের কথায়, ‘‘ট্র্যাফিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা রয়েছি। জরিমানা তো সার্জেন্টরা করেন। গাড়িচালকেরা নিজেরা সচেতন না হলে আমাদের কিছুই করণীয় নেই।’’

দুপুর ২টো: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে মুরলীধর সেন স্ট্রিট

এই রাস্তাও নো-হর্ন জোনের আওতায়। রাস্তার এক দিকে সার দিয়ে দাঁড় করানো গাড়ি। বাকি সরু অংশ দিয়ে যাতায়াত করছে মালবোঝাই ভ্যান, রিকশা থেকে শুরু করে চার চাকার গাড়ি। নিয়ম মতো অবশ্য কলকাতা পুলিশের ‘নো হর্ন জোন’ বোর্ড লাগানো রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন হর্ন বাজাচ্ছেন? জিজ্ঞাসা করতেই রেগে গেলেন এক গাড়ির চালক। বললেন, ‘‘যাওয়ার উপায়টা কী বলতে পারেন? এমন ঘি়ঞ্জি রাস্তায় গাড়ি চালাতে গেলে তো হর্ন বাজানো ছাড়া কোনও পথ নেই।’’

দুপুর ২-৩০: সূর্য সেন সেন স্ট্রিট ও কলেজ স্ট্রিটের সংযোগস্থল

ট্রামের গা ঘেঁষে চলেছে মালবোঝাই ভ্যান। পিছন থেকে গাড়ির চালক জোরে হর্ন বাজাতেই ছুটে এলেন খাকি পোশাকের পুলিশকর্মী। চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে জরিমানা বাবদ ১০০ টাকা দিতে বললে তুমুল বাগবিতণ্ডা বাধল চালকের সঙ্গে পুলিশের।

নাস্তানাবুদ পুলিশ

কলেজ স্কোয়ার ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে কলকাতা পুলিশের তরফে অন্তত ২০টি নো-হর্ন জোনের বোর্ড টাঙানো রয়েছে। এ দিন একমাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশকে হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে অভিযানে নামতে দেখা গেল। তা-ও তা করতে গিয়ে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হওয়ার জোগাড় তাঁদের। অভিযানে ছিলেন মাত্র চার পুলিশকর্মী। আইনভঙ্গকারী গাড়িকে চিহ্নিত করতে সূর্য সেন স্ট্রিট ও কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে দাঁড়িয়ে এক জন। তাঁর নির্দেশে এক কনস্টেবল গাড়ি আটকাচ্ছেন। কয়েকটি গাড়ি আটকানোর পরে ওই আধিকারিক বললেন, ‘‘বেশি গাড়ি আটকাবে না কিন্তু। যানজট হয়ে যাবে।’’

পরিবেশবিদ তথা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো তো অনেক আগে থেকেই নিষিদ্ধ। আইন বাস্তবায়িত করতে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।’’ কলেজ স্কোয়ার ও মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতাল চত্বরকে পুরোপুরি নো-হর্ন জোন হিসেবে বাস্তবে পরিণত করা যে কঠিন, তা স্বীকার করে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই এলাকায় নিয়মিত জরিমানা করে গাড়িচালককে সচেতন করার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। মানুষ নিজে সচেতন না হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

No Horn Zone Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE