Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সে নেই, ‘পরীক্ষা দিল’ তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর

বেঞ্চে তার জায়গাটা ফাঁকা। ডেস্কের উপরে চক দিয়ে গোল করে একটা নম্বর লেখা কেবল। চার পাশের বেঞ্চে যথারীতি পরীক্ষার খাতায় মুখ গুঁজে সতেরো-আঠেরোরা। উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার।

স্বর্ণেন্দুর শূন্য আসনে শুধু তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর। — নিজস্ব চিত্র

স্বর্ণেন্দুর শূন্য আসনে শুধু তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৫
Share: Save:

বেঞ্চে তার জায়গাটা ফাঁকা। ডেস্কের উপরে চক দিয়ে গোল করে একটা নম্বর লেখা কেবল। চার পাশের বেঞ্চে যথারীতি পরীক্ষার খাতায় মুখ গুঁজে সতেরো-আঠেরোরা।

উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু খালি পড়ে রইল বেঞ্চ। ডেস্কে লেখা শুধু রেজিস্ট্রেশন নম্বর। তার আসন ফাঁকা রেখে মেধাবী ছাত্রকে এ ভাবেই স্মরণ করল বসিরহাট টাউন হাই স্কুল।

রবিবার দুর্ঘটনায় মোটরবাইক থেকে বিদ্যুতের খুঁটিতে আছড়ে পড়ার পরে বৃহস্পতিবার বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতালে মস্তিষ্কের মৃত্যু হয় আঠেরো বছরের স্বর্ণেন্দু রায়ের। বাবা-মার ইচ্ছেয় সঙ্গে সঙ্গেই তার অঙ্গগুলি সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা হয়েছে। সেগুলি দ্রুত যথাস্থানে পৌঁছতে গ্রিন করিডরের ব্যবস্থা করে পুলিশও। তার পরে রাতেই স্বর্ণেন্দুর দেহ নিয়ে বসিরহাটের বাড়িতে রওনা হয়ে যায় পরিবার। শুক্রবার বসিরহাট শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

এ দিন টিপটিপ বৃষ্টিতেই পুলিশের পাইলট কারের পিছনে স্কুলে পৌঁছয় স্বর্ণেন্দুর ফুলে-ঢাকা মরদেহ। কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষক ও সহপাঠীরা। চোখের জল সামলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, স্বর্ণেন্দুর দাদু যোগেশচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘পড়াশোনার পাশাপাশি ভাল গিটার বাজাত। স্কুলের সব শিক্ষক ভালবাসত ওকে। লাজুক স্বভাবের ছেলে, বন্ধুরাও পছন্দ করত খুব।’’

স্কুল থেকে জামরুলতলার বাড়ি। দোতলার ঘরে ছেলের দেহ আঁকড়ে মা সুজাতাদেবী বলে চলেছেন, ‘‘দেখছিস, কত লোক এসেছে? তোকে সম্মান করছে। আর তুই শুয়ে আছিস? একটু ওঠ না!’’ যা শুনে চোখের জল চাপতে পারেননি বাকিরাও।

স্বর্ণেন্দুর বাবা চন্দ্রশেখর রায় বলেন, ‘‘আমাদের ছেলে বেঁচে থাকবে পাঁচ জন মানুষের মধ্যে। এটাই এখন একমাত্র সান্ত্বনা।’’

দুর্গামণ্ডপের সামনে বৃষ্টিভেজা ভিড়টা তখন নিশ্চুপ। স্বর্ণেন্দুর ছবি, গিটারের সঙ্গে তার টুপি আর ব্যাগটা রেখে আগেভাগেই ফুল দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন ক্লাবের ছেলেরা। মাল্যদান করে যান বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি, বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস, পুরপ্রধান তপন সরকার-সহ কয়েকশো মানুষ। প্রিয় ‘সঞ্জু’র দুর্ঘটনার খবর পেয়েই রবিবারই কালীপুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মাইক বাজানো বন্ধ করে দিয়েছিল স্থানীয় ক্লাবগুলি।

পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় ব্যান্ডে গিটার বাজাত স্বর্ণেন্দু। সহপাঠী দীপ সরকার, শুভ বিশ্বাসরা বলছিল, ভাল ভাবে গিটার শিখে বড় ব্যান্ডে ঢোকার স্বপ্ন দেখত তাদের বন্ধু। ক’দিন আগেই হইচই করে ইছামতী নদীতে দুর্গাপুজোর ভাসান দেখতে যাওয়া হয়েছিল। ঘুরেফিরে আসছিল সে কথাও। সঙ্গে আক্ষেপ, ‘‘ইস, মাথায় যদি হেলমেটটা পরা থাকত!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE