কারখানার পিছনে নিজের নিজের ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন পাঁচ কর্মী। হঠাৎ কিছুর শব্দ পেয়ে প্রত্যেকেই দেখেন তাঁদের বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে অপরিচিত যুবকেরা। মুখে গামছা বাঁধা, হাতে কাটারি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাঁচ কর্মী-সহ দুই নিরাপত্তারক্ষীর হাত বেঁধে একটি ঘরে আটকে রাখে ডাকাতেরা। এর পরে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে লুঠ।
রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে বালির নিশ্চিন্দা থানার শিল্পশ্রী বাস স্টপের কাছে একটি কাঠ চেরাই কারখানায়। পুলিশ জানায়, এলাকার সিসিটিভির ফুটেজে কারখানায় একটি গাড়ি ঢুকতে ও কিছুক্ষণ পরে কাঠ ভরে সেটি বেরোতে দেখা যায়। কিন্তু ডাকাতদের মুখ বা গাড়ির নম্বরপ্লেট স্পষ্ট বোঝা যায়নি। সোমবার হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা ওই কারখানায় যান। ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞেরাও কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন।
এ দিকে, কারখানায় দামি শাল কাঠ মজুত থাকতে ডাকাতেরা মাত্র ১২০০-১৩০০ টাকা বর্গফুটের কর্পূরের কাঠ নিয়ে গেল কেন, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। আসবাব ব্যবসায়ীদের কথাতেও, ‘‘আনুষঙ্গিক হিসেবে ওই কাঠের টুকরো ব্যবহার হয়। ভাল কিছুতে লাগে না।’’ তাই যে কাঠের তেমন মূল্যই নেই, তা লুঠ করতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ডাকাতেরা কেন কারখানায় ঢুকলো, তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে।
পুলিশ জেনেছে, বছরখানেক আগে কারখানার এক কর্মী কাজ করবে না বলে পালিয়ে যায়। তাঁর পাওনা টাকা ও ব্যাগ আটকে রাখেন কর্তারা। পুলিশের অনুমান, শত্রুতা থেকেই ডাকাতির ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ, লুঠ করতে এলে দামি কাঠই নেওয়ার কথা। তদন্তকারীদের অনুমান, ডাকাতেরা হয়তো ঠিক কাঠ চেনেই না বা লুঠ করা উদ্দেশ্য ছিল না। কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন ঘটিয়ে থাকতে পারেন।
দু’নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই ‘রায় ব্যানার্জি স মিল’-এ দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন কাঠের গুড়ি চেরাই করা হয়। সেখানে পাঁচ কর্মীর মধ্যে চারজন অসমের কোকড়াঝাড়ের ও একজন কোচবিহারের মাথাভাঙার বাসিন্দা। স্থানীয় দুই ব্যক্তি রয়েছেন নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে। তাঁদের এক জন সন্ন্যাসী মাইতি জানান, ওই রাতে পায়চারি করার সময়ে পিছন থেকে কেউ জাপটে ধরে। কাটারি দেখিয়ে বলে ‘বেশি কথা বললে গলা কেটে দেবো।’ আরেক জন গার্ড কোথায় রয়েছে দেখিয়ে দিতে বলে। আরেক নিরাপত্তারক্ষী সুবলচন্দ্র বেরা জানান, গেটের চাবি চেয়ে না পেয়ে তাঁকে মারে ডাকাতেরা। তাঁরও হাত বেঁধে দেয়।
পাঁচ কর্মী ও দুই নিরাপত্তারক্ষীকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দরজায় কাটারি নিয়ে পাহারা দিতে থাকে এক ডাকাত। রাত তিনটে নাগাদ কোনও শব্দ না পেয়ে নিজেরাই চেষ্টা করে হাতের বাঁধন খোলেন কর্মীরা। বেরিয়ে এসে দেখেন কর্পূরের কাঠ নিয়ে চম্পট দিয়েছে ডাকাতদল। পুলিশের অনুমান, কারখানার পাশের ছোট পাঁচিল টপকেই ঢোকে ডাকাতেরা। বাংলা-হিন্দি মিশিয়ে কথা বলা ডাকাতেরা ওই কারখানা সম্পর্কে আগে থেকেই সব জানত বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy